পাল্টে গেছে আউশ ধানের উৎপাদন ধারণা

খুলনা, জাতীয়

মাজেদুল হক মানিক, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম | 2023-08-27 12:48:40

এক সময় বোনা আউশ ধানের ফলন ছিল বিঘায় ২-৩ মণ। জাত উন্নয়নের মধ্য দিয়ে এখন সেই ফলন গিয়ে দাঁড়িয়েছে বিঘায় প্রায় বিশ মণ। এসব সম্ভব হয়েছে আধুনিক ধানের জাত উদ্ভাবন ও মাঠ পর্যায়ে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের বিশেষ গুরুত্বের কারণে।

মেহেরপুর জেলায় গেল এক বছরে আমন ও বোরো ধান উৎপাদনের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে আউশ ধান উৎপাদন বেড়েছে। যা মোট ধান উৎপাদনের প্রায় ৩০ ভাগ।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, দেশের প্রধান খাদ্য ভাতের বেশিরভাগ চাহিদা পূরণ করে আমন ও বোরো মৌসুমের ধান। এ দুই মৌসুমের মধ্যবর্তী সময়ই হচ্ছে আউশ মৌসুম। এক সময় স্থানীয় নানা জাতের ধান আবাদ হয়েছে আউশে। ভালো ফলন না থাকায় চাষিরা আউশ ধানের পরিচর্যাও করত না। প্রাকৃতিকভাবে যা পাওয়া যেত তাই দিয়ে আমন ধান ওঠার আগে চাষি পরিবারে খাদ্যের চাহিদা কিছুটা মিটত। নতুবা বেশিরভাগ জমি পতিত অবস্থায় থাকত।

কিন্তু সেই ধারণা পাল্টে দিয়ে ২০০৯ সাল থেকে সরকারের বিশেষ উদ্যোগে কৃষি মন্ত্রণালয় সারা দেশে আউশ ধান চাষে প্রণোদনা দেয়া শুরু করে। বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের (ব্রি) বিজ্ঞানীরা ব্রি ধান ৪৮ নামের একটি জাত উদ্ভাবন করেন। যা চাষিদের কাছে এখন ব্যাপক জনপ্রিয় একটি জাত। এরপর ব্রি ও বিনা বেশ কয়েকটি জাত উদ্ভাবন করেছে। যা দিয়ে এখন আউশ মৌসুমে চাষিদের সুবিধা মতো ধান আবাদ হচ্ছে।

এসব জাত উদ্ভাবন ও মাঠ পর্যায়ে কৃষি কর্মকর্তাদের সহযোগিতার হাত সম্প্রসারণের ফলে আউশ ধান আবাদের পুরাতন ধ্যান ধারণাই পাল্টে গেছে। আমন ও বোরো মৌসুমের সঙ্গে পাল্লা দিয়েই বাড়ছে আউশ ধান আবাদ। ফলে কম খরচে ধান উৎপাদন ও পতিত জমিতে আবাদ হওয়ায় চাষিরা সন্তোষ প্রকাশ করেছেন।

মেহেরপুর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, গেল ৫ বছরে আউশ ধান আবাদ কয়েকগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। ২০১২-২০১৩ অর্থবছরে জেলায় ৮ হাজার ৪০৫ হেক্টর জমিতে ধান উৎপাদন হয় ২৬ হাজার ৪৭২ মেট্রিক টন। এই পাঁচ বছরে যেমন আবাদ বৃদ্ধি পেয়েছে তেমন বেড়েছে উৎপাদন। চলতি মৌসুমে ২৭ হাজার ৬৯০ হেক্টর জমিতে ৫৭ হাজার ৮৯০ মেট্রিক টন ধান উৎপাদন হয়েছে। গত বোরো মৌমুমে ২৩ হাজার ২৫০ হেক্টর ও চলতি আমন মৌসুমে ২৪ হাজার ৩৮০ হেক্টর জমিতে ধান আবাদ হয়েছে। পরিসংখ্যান বলছে, প্রধান দুই ধানের মৌসুমের সঙ্গে পাল্লা দিয়েই বাড়ছে আউশ ধানের আবাদ।

আউশ আবাদ বৃদ্ধির বিষয়ে চাষিরা জানায়, রবি মৌসুম শেষে অর্থাৎ গম, মসুর এবং শীতকালীন সবজি ও মসলা জাতীয় ফসল তোলার পর আমন ধান আবাদের সময় পর্যন্ত প্রায় চার মাস অনেক জমি পতিত থাকে। সেই জমিতে চাষিরা এখন আউশ ধান আবাদ করছে। এছাড়াও স্বল্প জীবনকালীন আধুনিক ধান জাতের কারণে বোরো ধান কাটার পর আমন ধান লাগানোর সময় পর্যন্ত আউশ ধান আবাদ হয়ে যাচ্ছে। এ সময় পর্যাপ্ত বৃষ্টির ফলে সেচ খরচ তেমন লাগে না। চাষের অন্যান্য খরচও অপেক্ষাকৃত কম। তাই আউশ ধান আবাদে চাষিরা বিশেষ লাভবান হচ্ছে।

এদিকে ধান উৎপাদন বৃদ্ধি পেলেও দর কম থাকায় চাষিদের মাঝে হতাশা দেখা দিয়েছে। নতুন আউশ ধান বিক্রি হচ্ছে মণ প্রতি ৫শ টাকা থেকে সাড়ে ৬শ টাকা দরে। তবে ধানের সঙ্গে চালের দাম সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। তাই খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ধান উৎপাদন ধরে রাখার স্বার্থে ন্যায্য মূল্য নিশ্চিতের দাবি চাষিদের।

মেহেরপুর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক ড. আখতারুজ্জামান জানান, সরকারিভাবে বীজ ও সার সহায়তার মাধ্যমে উৎপাদনমূলক প্রণোদনা দেয়া হচ্ছে। সরকারি প্রণোদনা ও পৃষ্ঠপোষকতা এবং কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উদ্বুদ্ধকরণ কার্যক্রমের সম্মিলিত প্রয়াসে এবার মেহেরপুর জেলাতে আউশের লক্ষ্যমাত্রা অপেক্ষা ১ হাজার ৫শ হেক্টর বেশি জমিতে ধানের চাষ হয়েছে। কোনো রকমের প্রাকৃতিক দুর্যোগ ছাড়াই আউশের বাম্পার ফলন হয়েছে।

আউশ ধান আবাদের ইতিবাচক দিক তুলে ধরে তিনি আরও জানান, দেশে সবচেয়ে বেশি ধানের উৎপাদন হয় বোরো মৌসুমে। কিন্তু বোরো ধানে সেচসহ উৎপাদন খরচ অনেক বেশি। বোরো মৌসুমে এক কেজি ধান উৎপাদনে প্রায় ৩ হাজার থেকে সাড়ে ৩ হাজার লিটার পানির ব্যবহার হয়। তাই পানির উপরে ক্রমাগত চাপ কমানোর জন্য আউশ এবং আমন ধানের চাষ বৃদ্ধির জন্য সরকারি নির্দেশনা রয়েছে। সেই লক্ষ্যে সরকারের ইচ্ছা অনুযায়ী কাজ করে যাচ্ছে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর।

এ সম্পর্কিত আরও খবর