রাজশাহীতে ভুট্টার বাম্পার ফলন, দামও ভাল

, জাতীয়

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, রাজশাহী | 2023-09-01 23:39:54

রাজশাহীতে এবার ভুট্টার বাম্পার ফলন হয়েছে। ভুট্টার ভাল দামও পাচ্ছেন চাষিরা। ফলে তাঁদের মুখে হাসি ফুটেছে। রাজশাহীর চরাঞ্চলগুলোতে ভুট্টার ফলন অন্য এলাকার চেয়ে বেশি। ফলে চরের কৃষকেরা আরও খুশি। গত এক সপ্তাহ ধরে রাজশাহীর মাঠে মাঠে ভুট্টা নিয়ে চাষিদের ব্যস্ততা চলছে।

রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলার হরিশংকরপুর গ্রামে ভুট্টা রোদে শুকাচ্ছিলেন কয়েকজন নারী। তারা জানালেন, জমি থেকে ভুট্টা তোলার পর বীজগুলো আলাদা করা হয়েছে। এটা একদিন রোদে শুকাতে হয়। তারপর বিক্রি করা হয়। তাঁদের ভুট্টা শুকাতে দেখে এখানেই ফড়িয়ারা কিনতে আসছেন। কেনার জন্য দাম বলছেন। কিন্তু বাড়ির পুরুষ মানুষকে ছাড়া তাঁরা বিক্রি করতে পারছৈন না।

গোদাগাড়ীর পিরিজপুর, বিদিরপুর, কৃষ্ণবাঢি, কাদিপুর, হরিশংকরপুর, বোগদামারী, মাছমারা, সোনাদীঘিসহ বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, ভুট্টা নিয়ে চাষিদের ব্যস্ততা চলছে। জমি থেকে ভুট্টা তোলা, মেশিনে ভুট্টা আলাদা করা, ভুট্টা সংগ্রহের পর গাছ কেটে পরিস্কার করাসহ অন্যান্য কাজে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন তাঁরা। বাড়ির সামনে চোখে পড়ছে নারীদের রোদে ভুট্টা শুকানোর দৃশ্য। কোন কোন বাড়ির সামনে তাঁরা রোদে শুকাচ্ছেন ভুট্টার ডগাগুলো। এসব তাঁরা জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করবেন।

রাজশাহীতে এবার ভুট্টার বাম্পার ফলন হয়েছে। ভুট্টার ভাল দামও পাচ্ছেন চাষিরা

হরিশংকরপুরের ভুট্টাচাষি পলাশ হোসেন (৪৫) বলেন, এবার ভুট্টার ফলন ভাল। বাজারে দামও ভাল। এখন প্রতিমণ ভুট্টা ৭২৫ থেকে ৭৩০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। তিনি দেড় বিঘা জমিতে ভুট্টা চাষ করেছেন। খরচ হয়েছে ৮ হাজার টাকা। ভুট্টা বিক্রি করে তাঁর লাভ হবে। সকালেই তিনি বিক্রি করবেন।

রাজশাহী জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর জানিয়েছে, জেলায় এবার গতবছরের চেয়ে বেশি ভুট্টা চাষ হয়েছে। এ বছর জেলার ৯ উপজেলায় ভুট্টা চাষ হয়েছে ৯ হাজার ৫৫০ হেক্টর জমিতে। হেক্টরপ্রতি সাগে ৯ মেট্রিক টন ভুট্টা উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে। বরেন্দ্র অঞ্চলের জমিতে হেক্টরপ্রতি ভুট্টার উৎপাদন ৮ হেক্টরের নিচে নামে না। আর বরেন্দ্র এলাকার বিল এবং পদ্মা নদীর ওপারে চরের জমিতে উৎপাদন ১২ মেট্রিক টন পর্যন্ত হয়ে থাকে।

গোদাগাড়ীর কাদিপুর এলাকায় শ্রমিকদের নিয়ে জমি থেকে ভুট্টা তুলছিলেন রাসেল আহমেদ (৪০)। তিনি জানান, নিজের আড়াই বিঘা জমিতে তিনি ভুট্টা চাষ করেছেন। শুরুতে তিন কেজি বীজ লেগেছিল। বীজের দাম ছিল ৬৫০ টাকা কেজি। জমিতে তিনবার সেচ দিতে হয়েছে, চারবার দিতে হয়েছে সার। এখন ভুট্টা তোলার সময় আটজন শ্রমিককে ৩৫০ টাকা করে পারিশ্রমিক দিতে হবে। সবমিলিয়ে তাঁর খরচ প্রায় ২৫ হাজার টাকা। তারপরও ভুট্টা বিক্রি করে তাঁর ভাল লাভ থাকবে।

রাসেল বলেন, তাঁর এই জমিতে বিঘাপ্রতি কমপক্ষে ৩০ থেকে ৩৫ মণ ভুট্টা উৎপাদন হবে। নিজের জমি না হলে খরচ আরেকটু বাড়ত। আড়াই বিঘা জমিতে একটা ফসল করার জন্য ইজারা নিলে ১৩ হাজার টাকার মতো লাগত। এই খরচ না হওয়ায় তাঁর লাভের পরিমাণ বেশি থাকবে। তবে যাঁরা জমি ইজারা নিয়ে ভুট্টা চাষ করেছেন, এবার তাঁদেরও ক্ষতি হবে না। ফলন বেশি হওয়ায় সবাই লাভ করবেন।

দামপুকুর গ্রামে ভুট্টা ওজন করে বিক্রি করছিলেন রায়হান আলী (৩০)। তিনি জানালেন, ১০ কাঠা জমিতেই তাঁর ১৫ মণ ভুট্টা উৎপাদন হয়েছে। জমি থেকে ভুট্টা তোলার পর থ্যাসাড় মেশিনে বীজগুলো আলাদা করা হয়েছে। তখন প্রতিমণ ভুট্টার জন্য থ্যাসাড় মালিককে দুই কেজি করে ভুট্টা দিতে হয়েছে। তারপরও সব খরচ বাদ দিয়ে ১০ কাঠা জমিতেই তাঁর ছয় হাজার টাকা লাভ থাকছে।

প্রতিমণ ভুট্টা ৭২৫ থেকে ৭৩০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে

গোদাগাড়ীর চর আষাড়িয়াদহ গ্রামের ভুট্টাচাষি সারোয়ার শেখ জানান, চরে ৪৫ থেকে ৫০ মণ পর্যন্ত ভুট্টার ফলন হচ্ছে এক বিঘা জমিতে। তবে পদ্মা পার করে ফড়িয়ারা ভুট্টা নিয়ে যান বলে তাঁদের এলাকায় দাম একটু কম। তারপরও ফলন বেশি হওয়ায় ক্ষতি হচ্ছে না। সারোয়ার বলেন, যে লাভ হচ্ছে তাতেই খুশি। তবে আরেকটু দাম বেশি হলে আরও ভাল হতো। আমরা আরও বেশি লাভ করতে পারতাম।

গোদাগাড়ীর পিরিজপুর গ্রামে মেসার্স জুবাইদা জামান শস্য ভাণ্ডারের স্বত্ত্বাধিকারী ফারুক হাসান তিতু জানালেন, চরাঞ্চল থেকে ফড়িয়ারা ভুট্টা কিনে এনে তাঁর আড়তে বিক্রি করছেন। আর এ পারের চাষিরা নিজেরাই বিক্রি করে যাচ্ছে। এ পারের ভুট্টাও কোন কোন ফড়িয়া বিক্রি করছেন। তিনি এসব ভুট্টা কিনে গুদামে রাখছেন। তারপরই দেশের নানাপ্রান্তের ব্যবসায়ীরা এসে ট্রাকভর্তি করে ভুট্টা কিনে নিয়ে চলে যাচ্ছেন। ফারুক হাসান বলেন, গতবছরের চেয়ে এবার ভুট্টার দাম ভাল। চাষিরা লাভ করছেন।

কৃষি কর্মকর্তারা বলছেন, দেশে বাণিজ্যিকভাবে মাছ চাষ ও গবাদিপশু লালন-পালন বেড়েছে। আর মাছের ও গবাদিপশুর খাবার তৈরিতে সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন পড়ছে ভুট্টার। তাই ভুট্টার চাহিদাও থাকছে সব সময়। এ কারণে দামটাও পড়ে যাচ্ছে না। চাষিরা লাভবান হচ্ছেন। ভুট্টা চাষে আগ্রহও বাড়ছে।

রাজশাহী জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক কে জে এম আবদুল আউয়াল বলেন, রাজশাহীতে গেল কয়েকবছর ধরেই ভুট্টা চাষ বাড়ছে। তাই চাষিরা যেন ভাল বীজ পান, সেটা কৃষি বিভাগ থেকে নিশ্চিত করা হয়। আর ভাল বীজের কারণে ভাল উৎপাদন হয়। তিনি বলেন, স্বল্প সময়ে ভাল লাভ দেখেই চাষিরা ভুট্টা চাষে ঝুঁকছেন। এ বছরও ভুট্টার বাজার ভাল। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় উৎপাদনও হয়েছে ভাল। আমরা আশা করছি আগামী বছর ভুট্টা চাষ আরও বাড়বে।

এ সম্পর্কিত আরও খবর