হাতিরঝিল আমাদেরকে দিন: মেয়র আতিক

, জাতীয়

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, ঢাকা | 2023-08-31 14:09:06

ওয়াসার খালের মতো হাতিরঝিলের দায়িত্বও ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের অধীনে দিয়ে দেওয়া উচিত বলে মন্তব্য করে মেয়র মো. আতিকুল ইসলাম বলেছেন, হাতিরঝিল আমাদেরকে দিয়ে দেন। হাতিরঝিল যদি মেইনটেইন করতে না পারেন হাতিরঝিল আমাদের দিয়ে দেন। আর যদি মেইনটেইন করতেই হয় তাহলে আপনি (রাজউক চেয়ারম্যান) পরিপূর্ণভাবে মেইনটেইন করুন।

সোমবার (১৯ এপ্রিল) সকালে জলাবদ্ধতা সমস্যা দূরীকরণের লক্ষ্যে চলমান উন্নয়ন কাজ পরিদর্শন শেষে মধুবাগ এলাকায় গণমাধ্যমকর্মীদের প্রশ্নের জবাবে মেয়র এসব কথা বলেন। 

মেয়র আতিকুল ইসলাম বলেন, গাবতলা, বাংলা গলি, তালতলা গলি, মিস্টি গলি, জাহাবক্স লেন, মহিলা গলি,নয়াটোলা এই এলাকায় বৃষ্টি হলেই পানি জমে থাকত। কারণ এখানে পানি নিষ্কাশনের নেটওয়ার্ক ছিল না। আমরা পূর্ণাঙ্গ ম্যাপিং করেই কাজ করছি। এই বর্ষাকালে আশাকরি এই এলাকার পানি সম্পূর্ণভাবে নিষ্কাশন করতে পারবো; এই বিশ্বাস আমাদের আছে।

‘কিন্তু পানি যেখান দিয়ে যাবে ওটি আবার রাজউকের ড্রেন। রাজউকের ড্রেন পরিস্কার করবে কে? এই যে সমন্বয়হীনতা অব্যবস্থাপনা এটিকে সমাধান করতে হবে। স্থানীয় সরকার মন্ত্রীর সঙ্গে কথা হয়েছে। আমাদের সমন্বয় করেই কাজ করতে হবে। আমরা ড্রেন করে ফেলেছি এই অল্প একটু (রাজউকের ড্রেন) কাজের জন্য আমি বসে থাকব না। আগামী ২৫ এপ্রিল রোববার রাজউক চেয়ারম্যানকে ডেকেছি। ওই দিন হয় রাজউক করবে না হয় রাজউককে বলতে হবে হাতিরঝিল আমাদেরকে ছেড়ে দেবে। হাতিরঝিল যদি মেইনটেইন করতে না পারেন, হাতিরঝিল আমাদের দিয়ে দেন। আর যদি মেইনটেইন করতেই হয় তাহলে আপনি পরিপূর্ণভাবে মেইনটেইন করুন। মেইনটেইন না করতে পারলে আমাদের দিয়ে দিতে হবে। আশাকরি ২৫ এপ্রিল এটির সমাধান হয়ে যাবে।’

হাতিরঝিল পরিদর্শনে মেয়র আতিক

মেয়র বলেন, হাতিরঝিল মেইনটেইনের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে রাজউককে। আমি মনেকরি হাতিরঝিলও  উত্তর সিটি কর্পোরেশনের আওতায় আসতে হবে। যেমন করে ওয়াসার খাল দেওয়া হয়েছে। সেরকম পানি উন্নয়ন বোর্ডের যত ধরণের স্থাপনা ডিএনসিসি এলাকায় আছে সেটিও আমাদের দিতে হবে। তাহলে আমরা সমন্বিতভাবে কাজ করতে পারব। হাতিরঝিলের কিছু অংশ আমি করছি, কিছু অংশ রাজউক করবে এতে সমস্যা হয়ে যাচ্ছে। ডিএনসিসি এলাকায় যত খাল, হাতিরঝিল, লেক অন্যান্য যা জলাশয় আছে যতদ্রুত সম্ভব আমাদের যদি দেওয়া হয় আমরা সমন্বিতভাবে কাজ করব।

হাতিরঝিরের দায়িত্ব বুঝিয়ে দেওয়া হলে পানির দুর্গন্ধ দূর হবে কি? এমন প্রশ্নের জবাবে মেয়র বলেন, আমরা চেষ্টা করব। চেষ্টা করলে অবশ্যই সমাধান করা যাবে। শুধু সিটি কর্পোরেশন কেন নগরবাসীরও দায়িত্ব আছে। আমরা কেন নিজেরা বাসায় সেফটি ট্যাংক করব না? আমরা কেন পানিটাকে সরাসরি ফেলে দেব বিভিন্ন লেকে, ঝিলে, খালে? প্রত্যেক নাগরিকের দায়িত্ব আছে নগরকে সুন্দর রাখার।

তিনি বলেন, জাতীয় সংসদ ভবনের দক্ষিণ পাশে খেজুর বাগান এলাকায় আর পানি জমবে না। তাছাড়া পানি কোথায় কোথায় জমত সেই স্পটগুলো কিন্তু আমরা নির্ধারণ করে ফেলেছি। এসব সমস্যা সমাধানে স্বল্প মেয়াদী, মধ্য মেয়াদী দীর্ঘ মেয়াদী পরিকল্পনা নিয়ে কাজ করা হচ্ছে। আমার বিশ্বাস গত বারের চেয়ে এবার ভালো কিছু উপহার দিতে পারব নগরবাসীকে।

হাতিরঝিল পরিদর্শনে মেয়র আতিক

ওয়াসা থেকে খাল বুঝে নেওয়ার পর খালগুলোর সবশেষ অবস্থা সম্পর্কে মেয়র বলেন, খাল আগে ওয়াসার ব্যবস্থাপনায় ছিল। আমরা দেখেছি যেভাবে খাল পরিস্কার করার কথা ছিল, যেভাবে খালকে মেনটেইন করার কথা ছিল সেটি কিন্তু হয়নি। এর ক্ষতিকর প্রভাব নগরবাসীকে ভুগতে হয়েছে। প্রায় তিন যুগের ওপরে এই খাল রক্ষণাবেক্ষণ করা হয় নাই। আমরা গত ৩০ ডিসেম্বর দায়িত্ব নিয়েছি তারপর থেকে বিভিন্ন জায়গায় খাল উদ্ধার ও পরিস্কার কার্যক্রম করেছি। এটি একটি বিশাল যজ্ঞ। তাই ধাপে ধাপে করতে হবে। তবে নগরবাসী গত বছর থেকে এবছর ভালো বেনিফিট পাবে।

হাতিরঝিল পরিদর্শনে মেয়র আতিক

জলাবদ্ধতার জন্য বিভিন্ন হাউজিং কোম্পানীও দায়ি উল্লেখ করে মেয়র বলেন, আফতাব নগর স্টার্ণ হাউজিং ওখানে খালগুলো বন্ধ করে মোটা মোটা পাইপ দিয়ে রাস্তা করেছে। তারা এটা করতে পারে না। তাদের উচিত কালভার্ট করে দেওয়া, তাহলে পানি প্রবাহ হবে। কিন্তু ওনারা এটা করেন নাই। আফতাবনগর থেকে শুরু করে বিভিন্ন হাউজিং তারা অনেক টাকার মালিক তারা অনেক ব্যবসা করেন কিন্তু তারা একটি বারও চিন্তা করেন নাই নগরবাসীর দুর্ভোগের কথা। আমাদের প্রায় ৯৫ কিলোমিটার খাল আছে। এই খালগুলোকে চেষ্টা করছি যতটুক সম্ভব জলাবদ্ধতা যাতে না হয় তার ব্যবস্থা করতে। খালের সাথে আমাদের প্রায় ৩ হাজার কিলোমিটার স্ট্রম ড্রেন আছে এই ড্রেনটাও পরিস্কার করতে হবে। অনেক ড্রেন ও খাল দখল করেছে। দখলদারদের ডাকছি বলছি এগুলোকে অপসাণ করে দেন। একদিনে হবে না পর্যায়ক্রমে সমস্যাগুলো সমাধান হবে। 

এ সময় মেয়রের সাথে আরও উপস্থিত ছিলেন, ডিএনসিসি’র প্রধান প্রকৌশলী ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মুহ: আমিরুল ইসলাম, প্রধান বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা কমডোর এম সাইদুর রহমান, অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী মো. শরীফ উদ্দীন, তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী (অতিরিক্ত দায়িত্ব), সিভিল সার্কেল খন্দকার মাহাবুব আলম প্রমুখ।

 

এ সম্পর্কিত আরও খবর