নওগাঁর ঐতিহাসিক আদ্যাবাড়ি মন্দিরটি ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে 

, জাতীয়

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট ,বার্তা২৪.কম, নওগাঁ | 2023-08-30 17:41:28

নওগাঁ জেলার মহাদেবপুর উপজেলার খাজুর ইউনিয়নের দেবীপুরে ঐতিহাসিক আদ্যাবাড়ি মন্দির। জেলা সদর থেকে ৩০ কিলোমিটার দূরে নওগাঁ পোরশা সড়কের উত্তর ধারে এই প্রাচীন মন্দিরটি। যা এখন অযত্ন অবহেলায় ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে প্রায়। একটি টিলার মত অসংখ্য গাছ গাছালির মাঝে মাথা উঁচু করে কালের সাক্ষী হয়ে এটি দাঁড়িয়ে আছে।

চারধারে ধানের ক্ষেত। সবুজের সমারহ। দূর থেকে মনে হয় যেনো একটি টিলায় অসংখ্য গাছ গাছালির মাঝে মাথা উঁচু করে কিছু একটা দাঁড়িয়ে আছে। মূল সড়ক থেকে নেমে কাঁচা সড়ক ধরে এগিয়ে গেলে নজরে আসবে দেশের প্রাচীন মন্দির গুলোর অন্যতম একটি আদ্যাবাড়ি মন্দিরটি। ইতিহাসে এই মন্দিরের বিষয়ে তেমন উল্লেখযোগ্য কিছু নেই। যা আছে তা লোকমুখে প্রচলিত। মন্দিরের নির্মাণ শৈলী দেখে ধারণা করা হয় পাল রাজত্বকালে কোন এক সময় মন্দিরটি নির্মাণ করা হয়েছে। মাটি থেকে মন্দিরের চূড়ার উচ্চতা প্রায় ৫০ ফুট।

রক্ত করবী, রক্ত কাঠমালিকা, হলুদ করবীসহ নানান ফুল আর গাছগাছালীতে ভরা প্রায় ৪ বিঘা জমির উপর এই মন্দিরটি কালের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। এটি ছিল একটি মন্দির কমপ্লেক্স। মন্দিরটির চারধারে ছিল উঁচু সীমানা প্রাচীর। এখনও তার চিহ্ন রয়ে গেছে। মন্দিরের সামনে আছে বিশাল দীঘি। ধারণা করা হয় পূর্বে এটি বৌদ্ধ মন্দির ছিল। পরবর্তিতে পালরা শৈব ধর্ম গ্রহণ করে। এরপর এই মন্দিরটি চার পাশে ১০৫টি শিব মন্দির নির্মাণ করা হয়।

১৯৪৭ সাল পর্যন্ত মন্দির গুলো স্থায়িত্ব ছিল। মন্দির গুলোয় নিয়মিত পূজো-আর্চনা হত। এই মন্দিরের ৩টি দেবী ছিল অন্নপূর্না, আদ্যামাতা ও গৌরীপট। পাথরের নির্মিত ছিল ৩টি মূর্তিই। আদ্যামাতা দেবীর ছিল ৪ হাত। আদ্যামাতা দেবীর মন্দিরটিকে তৎকালীন মূল মন্দির হিসাবে গন্য করা হত। এখানে ছিলো পুরোহিত, দেবদাস ও সেবাদাসীদের জন্য বসবাসের ব্যবস্থা। এছাড়াও মন্দির প্রহরী ছিল। তারাও নিয়মিত দায়িত্ব পালন শেষে মন্দির কমপ্লেক্স্রের ভিতর থাকতেন। মন্দিরে দেবতার সন্তুষ্টিতে দেবদাসিদের নৃত্যাঞ্জলি, শঙ্খধ্বনি, পুরোহিতের মন্ত্রপাঠ, ধূপের ধোঁয়া আর খোল-করতালের শব্দ থেমে গেছে বহু আগে। দূরদূরান্ত থেকে দেবী দর্শনে এখানে আসতো রাজন্যবর্গ ও সাধারন প্রজারা। এই বরেন্দ্র ভূমির মন্দিরটিতে বলতে গেলে প্রায়দিনই কোন না কোন দেব-দেবীর জন্য বিশেষ আয়োজনে পূঁজা হতো। সমতল ভূমি থেকে অনেক উঁচুতে মন্দির কমপ্লেক্স ছিল। কাছাকাছি বলতে শুধু লক্ষণীয় ছিল আত্রাই নদী। কাছাকাছি কোন খাল নজরে পড়েনা। ধারণা করা হয় আত্রাই নদী পথেই মানুষের যাতায়াত হয়তো ছিলো সে সময়। তবে, অনেকের অভিমত বরন্দ্রে অঞ্চল হওয়ায় মানুষ সচরাচর পায়ে হেঁটে অথবা কোন পশুবাহনে করে মন্দিরে আসা-যাওয়া করতো।

তবে বর্তমানে মন্দির সংস্কার অপরিহার্য হয়ে পড়েছে। অভিযোগ রয়েছে প্রভাবশালী কিছু লোক মন্দিরের দেবত্তোর সম্পত্তি জবর দখল করে আছে। বরেন্দ্র ভূমির হাজার বছরের এই প্রাচীন ঐতিহ্যবাহী মন্দিরটি কিছু সংস্কারের মাধ্যমে ধরে রাখা যাবে বলে এলাকাবাসীদের দাবী।

নওগাঁ সরকারী কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ ও গবেষক প্রফেসর শরীফুল ইসলাম খান আতাউল হক সিদ্দিকী জানান, মন্দিরটি পাল সাম্রাজ্যেরে কোন এক সময় স্থাপন করা হয়। কিন্তু এর কোন দালিলিক প্রমাণ আজ আর পাওয়া যায় না। তবে গবেষণার মাধ্যমে এর সব কিছু উন্মোচিত হতে পারে। অবিলম্বে এই ঐতিহ্যবাহী মন্দিরটি সংস্কারের জন্য সরকারের উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের আশু দৃষ্টি কামনা করছেন।

এ সম্পর্কিত আরও খবর