রংপুর বিভাগের আট জেলার রোগীদের কিডনি ডায়ালাইসিস করানোর জন্য শুধুমাত্র রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেফ্রোলজি বিভাগ রয়েছে। অথচ রোগীদের ডায়ালাইসিসের জন্য পানি বিশুদ্ধকরণের ২টি প্ল্যান্ট বিকল হয়ে পড়ায় ১৪টি ডায়ালাইসিস মেশিন ২২ দিন ধরে বন্ধ হয়ে পড়ে আছে। ফলে চরম দুর্ভোগে পড়েছে কিডনি ডায়ালাইসিস রোগীরা।
শনিবার (১ মে) দুপুরে বিষয়টি নিশ্চিত করে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের নেফ্রোলজি বিভাগের বিভাগীয় প্রধান মোবাশ্বের হোসেন বলেন,রোগীদের ডায়ালাইসিসের জন্য পানি বিশুদ্ধকরণ প্ল্যান্টের ২টি মেশিন টিপটপ অব্স্থায় চলছিল। তবে মেশিন দুটো বিকল হয়ে পড়ায় পুরো ইউনিটের কাযক্রম বন্ধ রয়েছে। মেশিনগুলো ঠিক করার জন্য হাসপাতালের পরিচালককে একাধিকবার জানানো হয়েছে। কিন্তু গত ২২ দিনেও এ বিষয়ে কোন অগ্রগতি হয়নি।
হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, ২০১০ সালে নেফ্রোলজি বিভাগের কিডনি ডায়ালাইসিস ইউনিটে শুরুতে ৩০টি ডায়ালাইসিস মেশিন স্থাপন করা হয়। এর মধ্যে বিভিন্ন সময়ে ১৬টি মেশিন বিকল হলেও মেরামত বা পুনঃস্থাপন করা হয়নি। তবে বাকি ১৪টি ডায়ালাইসিস মেশিনের সাহায্যে রোগীদের সেবা দিয়ে আসছিল বিভাগটি। পাশাপাশি রোগীদের কিডনি ডায়ালাইসিস করতে বিশুদ্ধ পানি সরবরাহে ২টি পানি বিশুদ্ধকরণ প্ল্যান্ট কাজ করছিল। একজন রোগীর কিডনি ডায়ালাইসিস করতে ১৮০ লিটার পর্যন্ত বিশুদ্ধ পানির প্রয়োজন হয়। কিন্তু গত ৮ এপ্রিল পানি বিশুদ্ধকরণ মেশিন দুটি একই সঙ্গে বিকল হয়ে পড়লে বিশুদ্ধ পানির অভাবে সব কটি ডায়ালাইসিস মেশিনের কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়।
কুড়িগ্রামের রাজারহাট উপজেলার ভিমশর্মা এলাকার আসাদুজ্জামান জানান,'তাকে সপ্তাহে দুই বার ডায়ালাইসিস করতে হয়। নিয়মতি ডায়ালাইসিস করাতে না পারলে শরীরে বিভিন্ন সমস্যা দেখা দেয়। তাই তিনি রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালেই ডায়ালাইসিস করে আসছেন। কিন্তু গত তিন সপ্তাহ থেকে এখানে ঘুরেও ডায়ালাইসিস করতে পারছেন না। হাসপাতালে ডায়ালাইসিস করলে ৪০০ টাকা খরচ হয়। বেসরকারি হাসপাতালে করলেও তিন হাজার টাকার বেশী খরচ দিতে হয়।'
গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলা থেকে আসা আব্দুস ছালাম বলেন, 'হামরা গরিব মানুষ। কিন্তু কিডনির যন্ত্রনা তো গরীব ধনী বোঝে না। তারপরও এ্যাটে আসি কম টাকায় কিডনি ডায়ালাইসিস করছি। এখন বন্ধ থাকায় সেটাও হচ্ছে না।'
ডায়ালাইসিস ইউনিটের টেকনিশিয়ান মাসুদ রানা জানান 'বিশুদ্ধপানির সাহায্যে ডায়ালাইসিস সেশিনগুলোর কাযক্রম পরিচালিত হয়। এর আগেও কয়েকবার মেশিন দুটি বিকল হয়েছিল। পরে কোনও রকমে মেরামত করা হয়। চালু থাকা অবস্থায় এ ইউনিটে প্রতিদিন নিয়মিত ৩০ থেকে ৩৫ জন রোগীর ডায়ালাইসিস হয়ে আসছিল।'
নেফ্রোলজি বিভাগের ডায়ালাইসিস ইউনেটের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোখলেসুর রহমান বলেন, '১৪টি ডায়ালাইসিস মেশিন ও ২টি পানি বিশুদ্ধকরণ মেশিনের সাহায্যে রোগীদের ডায়ালাইসিস কাযক্রম চলছিল। কিন্তু গত বৃহস্পতিবার (৮এপ্রিল) পানি বিশুদ্ধকরণের মেশিন দুটি বিকল হওয়ায় ডায়ালাইসিস পুরোপুরি বন্ধ রয়েছে। বিষয়টি বিভাগীয় প্রধানের মাধ্যমে হাসপাতালের পরিচালককে জানানো হয়েছে।'
রমেক হাসপাতালের পরিচালক রেজাউল করিম বলেন, ‘কিডনি ডায়ালাইসিসের জন্য পানি বিশুদ্ধকরণ মেশিন দুটি সচল করার জন্য সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে লিখিতভাবে জানানো হয়েছে। আশা করছি দ্রুত সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে।'