‘আমি অসুস্থ, তাই মাঝে মধ্যে ক্লাসে ঘুমাই’

রাজশাহী, জাতীয়

আরিফ আহমেদ সিদ্দিকী, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম | 2023-08-11 08:13:47

পাবনার চাটমোহর উপজেলার মথুরাপুর ইউনিয়নের আনকুটিয়া গ্রামের নঈম উদ্দিন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে নানা অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। বিদ্যালয়ের পাঁচজনের মধ্যে তিনজন শিক্ষকই একই পরিবারের। নানা অনিয়মের কারণে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটি এখন পারিবারিক প্রতিষ্ঠানে রূপ নিয়েছে।

আর এসব অনিয়মের মূল হোতা স্কুলটির প্রধান শিক্ষক মো. মোজাম্মেল হক। স্লিপ ফান্ডের টাকা তছরুপ, বিনামূল্যে বই বিতরণের সময় ১০ টাকা করে উত্তোলন, বিদ্যালয়ের ফল-ফলাদি বিক্রি করে সেই টাকা নিজেই ভোগ করা, বিদ্যালয়ের পুরাতন টিন এনজিওকে ভাড়া দেয়া, স্কুল চলাকালীন সময়ে ঘুমানো, স্কুলের আলমারি ব্যক্তিগত কাজে ব্যবহারসহ মোট ১১টি অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে।

বিষয়টি নিয়ে সম্প্রতি ইউএনও এবং উপজেলা শিক্ষা অফিসার বরাবর লিখিত অভিযোগ করেছেন ওই বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক মো. রাশেদুল ইসলাম।

আর এ ঘটনায় ক্ষিপ্ত হয়ে প্রধান শিক্ষক অভিযোগকারী ওই সহকারী শিক্ষককে স্কুল চলাকালীন সময়ে বকাঝকা করেন বলে অভিযোগ। এ নিয়ে বাগবিতণ্ডা শুরু হলে শিক্ষার্থীদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। বিদ্যালয়ে শিক্ষার পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে দ্রুত ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করেন অভিভাবক ও সচেতন মহল।

সরেজমিনে ওই বিদ্যালয়ে গিয়ে জানা গেছে, ১৯৯১ সালে বেসরকারি ভাবে প্রতিষ্ঠিত হয় নঈম উদ্দিন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টি। এরপর ২০১৩ সালে সরকারিকরণ হয়। আর ১৯৯১ সাল থেকে প্রধান শিক্ষক হিসেবে রয়েছেন মোজাম্মেল হক। এছাড়া তার স্ত্রী নাদিরা পারভীন এবং শ্যালিকা নাজমুন্নাহার ওই একই বিদ্যালয়ে চাকরি করেন। বর্তমানে ৫ জন শিক্ষক কর্মরত রয়েছেন। এছাড়া ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি রয়েছেন প্রধান শিক্ষক মোজাম্মেলের সম্বন্ধী বজলুল হক সুশান এবং তার স্ত্রী সুলতানা পারভীন ম্যানেজিং কমিটির সদস্য। আর শুরু থেকেই পরিচালনা কমিটির সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন বজলুল হক সুশান। যে কারণে স্কুলটি ‘পারিবারিক স্কুল’ এ পরিণত হয়েছে বলে অভিযোগ এলাকাবাসীর। এতে করে স্কুলের কোমলমতি শিক্ষার্থীদের পড়াশোনার সুষ্ঠু পরিবেশ ব্যাহত হচ্ছে। বিষয়টি নিয়ে সংশ্লিষ্ট বিভাগের নেই কোনো মাথা ব্যাথা।

অভিযোগের ব্যাপারে জানতে চাইলে নঈম উদ্দিন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোজাম্মেল হক বলেন, ‘আমার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগগুলো সম্পূর্ণ মিথ্যা। আক্রোশবশত সহকারী শিক্ষক রাশেদুল ইসলাম এগুলো করেছেন। তবে আমি অসুস্থ মানুষ, তাই মাঝে মাঝে ক্লাসের মধ্যে একটু ঘুমাই।’

উপজেলা শিক্ষা অফিসার (ভারপ্রাপ্ত) মো. আনোয়ার হোসাইন বলেন, ‘অভিযোগ পেয়েছি। খুব তাড়াতাড়ি তদন্ত করে এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেব।‘

এ বিষয়ে স্কুল পরিচালনা কমিটির সভাপতি বজলুল হক সুশানের সঙ্গে কথা বলতে তার মোবাইলে কয়েকবার কল করলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।

উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) সরকার অসীম কুমার বলেন, ‘বিষয়টি তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে শিক্ষা অফিসারকে বলা হয়েছে। স্কুলে শান্তিপূর্ণ পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে সব রকমের ব্যবস্থা নেয়া হবে।’

এ সম্পর্কিত আরও খবর