বগুড়ায় ৩২টি মোটরসাইকেল চুরি, ধরা পড়ছে না সিন্ডিকেট!

, জাতীয়

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা ২৪.কম, বগুড়া | 2023-08-31 12:07:59

বগুড়ায় সক্রিয় হয়ে ওঠা মোটরসাইকেল চোরের সিন্ডিকেট ধরতে পারছে না পুলিশ। গত তিন মাসে বগুড়ায় ৩২টি মোটরসাইকেল চুরি হয়েছে। এখন পর্যন্ত উদ্ধার হয়নি একটা মোটরসাইকেলও।

জানা গেছে, বগুড়া সদর, শাজাহানপুর, শেরপুর, কাহালু ও গাবতলী উপজেলা থেকেই গত তিন মাসে ৩২টি মোটরসাইকেল চুরি হয়। অধিকাংশ মোটরসাইকেল চুরি হয়েছে দিনের বেলা বিভিন্ন অফিস এবং ব্যাংক চত্বর থেকে। মোটরসাইকেল চুরির পর ভুক্তভোগীরা থানায় গেলে পুলিশ মামলা না নিয়ে জিডি কিংবা অভিযোগ লিখিত নেয়। যার কারণে, মোটরসাইকেল চুরির সঠিক তথ্য থানা পুলিশের রেকর্ডেও থাকে না।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, গাইবান্ধা, জয়পুরহাট এবং জামালপুর জেলার সমন্বয়ে মোটরসাইকেল চুরির কয়েকটি সিন্ডিকেট গড়ে উঠেছে দীর্ঘদিন ধরে। বগুড়া শহর বা উপজেলা থেকে মোটরসাইকেল চুরির পর নিয়ে যাওয়া হয় জয়পুরহাটের পাঁচবিবি, গাইবান্ধার পলাশবাড়ি, ফুলছড়ি সাঘাটায়। এছাড়াও বগুড়ার সারিয়াকান্দি হয়ে নৌকা যোগে যমুনা নদী পার হয়ে চলে যায় জামালপুর জেলায়। কয়েক বছর আগে এসব এলাকা থেকে পুলিশ চোরের সিন্ডিকেট ধরে বেশ কিছু মোটরসাইকেল উদ্ধার করেছিল। এরপর বেশ কিছুদিন বন্ধ ছিল চুরি।

সম্প্রতি জয়পুরহাটের শাহ আলম নামের এক ব্যক্তির নেতৃত্বে মোটরসাইকেল চোরের সিন্ডিকেট গড়ে উঠেছে।

পুলিশের একটি সুত্র জানায়, শাহ আলম বাহিরে থাকলেই মোটরসাইকেল চুরি বেড়ে যায়। দুই বছর আগে শাহ আলমকে ঢাকার ধামরাই থেকে গ্রেফতার করেছিল বগুড়া জেলা পুলিশ। কিন্তু বেশীদিন আটকে রাখা যায় নি শাহ আলমকে। মোটরসাইকেল চুরির মামলায় শাহ আলম কিংবা অন্য কোন আসামির নাম না থাকায় জামিন পেয়ে যায় সহজেই।

পুলিশের এক কর্মকর্তা বলেন, শাহ আলম বর্তমানে বাহিরে থাকায় বগুড়ায় মোটরসাইকেল চুরি বেড়ে গেছে। তাকে ধরতে পারলে চুরি ঠেকানো যাবে।

অনুসন্ধানে আরো জানা যায়, একটি মোটরসাইকেল চুরির সাথে চোর থাকে ৫ জন। চুরির সময় থাকে তিনজন। একজন চুরি করে আর দুইজনের একজন চালককে ফলো করে এবং অপর জন আশেপাশের পরিবেশ পর্যবেক্ষণ করে থাকেন। চুরির পর সেই মোটরসাইকেল দ্রুত পার্শ্ববর্তী কোন গ্যারেজে রাখা হয়। এরপর সুযোগ বুঝে অপর দুইজন সন্ধ্যার পর বা ভোর রাতে অন্যত্র নিয়ে যান। পরে আরেকটি চক্রের মাধ্যমে মোটরসাইকেলের চেচিস ও ইঞ্জিন নাম্বার পরিবর্তন করে বিআরটিএর জাল কাগজপত্র তৈরি করে বিক্রি করে দেয়। গত তিন মাসে বগুড়ার শেরপুর থেকে ১৪টি, গাবতলী থেকে ৫টি, শাজাহানপুর থেকে ৫টি, বগুড়া সদরে ৫টি এবং কাহালু থেকে ৩টি মোটরসাইকেল চুরি হয়।

কাহালু উপজেলা দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিটির সভাপতি মাকসুদুর রহমান জানান, গত ৫ বছরে কাহালু থেকে মোটরসাইকেল চুরি হয়েছে ৫৫টি। মোটর সাইকেল চুরির পর ভুক্তভোগীরা থানায় গেলে মামলা নেয়া হয় না। ফলে এসবের কোন রেকর্ড থাকে না।

শেরপুরের সাংবাদিক আব্দুল ওয়াদুদ জানান, গত এক বছরে শেরপুরে মোটর সাইকেল চুরি হয়েছে ৩০টি। আর তিন মাসে চুরি হয়েছে ১৪টি। এরমধ্যে শাহবন্দেগী ইউনিয়নে চুরি হয়েছে ৫টি। এ কারণে কয়েক দিন আগে শাহবন্দেগী ইউনিয়নের বিট পুলিশিং এর দায়িত্ব প্রাপ্ত কর্মকর্তা শেরপুর থানার এসআই সিহাব উদ্দিনকে প্রত্যাহার করে পুলিশ লাইনে সংযুক্ত করা হয়েছে।

বগুড়ায় মোটরসাইকেল চুরি বেড়ে যাওয়ার ব্যাপারে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ) আব্দুর রশিদ বার্তা ২৪.কমকে বলেন, মোটর সাইকেল চুরি ঠেকাতে থানা পুলিশ ছাড়া ডিবি ও ডিএসবি  সমন্বয়ে টিম কাজ শুরু করেছে। আশা করা যাচ্ছে মোটরসাইকেল চুরি কমে যাবে। সেই সাথে চোরের সিন্ডিকেটও ধরা পড়বে।

এ সম্পর্কিত আরও খবর