‘এবার গাছোত প্রচুর আম ধরছে বাহে কিন্তু ঝড়-বাদলে আম পড়ি গেইছে। এখনও প্রচণ্ড গরমে আম ঝড়ি পড়োচে।’ কথাগুলো বলছিলেন হাঁড়িভাঙ্গা আমের মাতৃগাছের জনক মৃত নফল উদ্দিন পাইকারের ছেলে মিঠাপুকুর উপজেলার খোড়াগাছা ইউনিয়নের তেকানী গ্রামের আম চাষি আমজাদ হোসেন পাইকার (৫৮)।
শুধু আমজাদ হোসেন পাইকার নয়, ‘হাঁড়িভাঙ্গা’ আম নিয়ে দুশ্চিন্তা কাটছে না রংপুর অঞ্চলের চাষিদের। করোনাভাইরাসের কারণে গত বছর চাষিদের লোকসানের মুখে পড়তে হয়েছিল। চলতি মৌসুমেও একই অবস্থায় পড়েছে বাগান মালিকরা। প্রচণ্ড দাবদাহ ও গরমে গাছ থেকে ঝরে পড়ছে আম। এর আগে চলতি মৌসুমে দুই দফায় কালবৈশাখীর ঝড়ে কিছুটা ক্ষতি হয়েছে হাঁড়িভাঙ্গা আমের। এতে বাগান মালিক ও মৌসুমি আম চাষিরা চরম লোকসানের আশঙ্কা করছেন। তবে কৃষি বিভাগ গাছের গোড়া ও গাছে নিয়মিত পানি সেচ দেওয়ার পরামর্শ দিয়েছে।
বুধবার (৫ মে) দুপুরে সরেজমিন রংপুরের মিঠাপুকুর ও বদরগঞ্জ উপজেলার বিভিন্ন আম বাগান ঘুরে দেখা যায়, হাঁড়িভাঙ্গা আমের বাগান মালিক ও মৌসুমি ব্যবসায়ীরা আমের পরিচর্যা করতে ব্যস্ত সময় পার করছেন। মিঠাপুকুর ও বদরগঞ্জে এখন যে দিকেই চোখ যায় শুধু হাঁড়িভাঙ্গার বাগান চোখে পড়ে। প্রতিকূল অবস্থার মধ্যেও এবার ভালো ফলনের আশা করছেন অনেকে।
আগামী ১৫ জুনের মধ্যে হাটে আসবে হাঁড়িভাঙ্গা। প্রতিবছর হাড়িভাঙ্গা আম বিক্রি করে শুধুমাত্র রংপুরের চাষিরা প্রায় ২০০ কোটি টাকার ওপর ঘরে তোলে বলে জানায় স্থানীয় কৃষি বিভাগ।
রংপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, রংপুর কৃষি অঞ্চলের পাঁচ জেলায় প্রায় ৬ হাজার ৯৭৯ হেক্টর জমিতে হাঁড়িভাঙ্গাসহ অন্যান্য আম বাগান রয়েছে। এতে গাছের সংখ্যা রয়েছে প্রায় দুই লাখ ৫৭ হাজার। এরমধ্যে শুধুমাত্র রংপুর জেলায় হাঁড়িভাঙ্গা আমের জমি রয়েছে প্রায় ৩ হাজার ৫০০ হেক্টর। এবারে শুধুমাত্র হাঁড়িভাঙ্গা আম উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৫২ হাজার ১৯৮ মেট্রিক টন। মৌসুমের শুরুতে এই আমের দাম কিছুটা কম থাকলে প্রতি কেজি হাঁড়িভাঙ্গা আম ৬০ থেকে ১৫০ টাকায় বিক্রি হয়।
হাঁড়িভাঙ্গা আমের সম্প্রসারক ও বিপণনের জন্য বঙ্গবন্ধু জাতীয় কৃষিপদক প্রাপ্ত মিঠাপুকুরের দয়ারদান আম্রকাননের মালিক আব্দুস সালাম সরকার বলেন, আম নিয়ে এবারে লোকসানের শঙ্কা রয়েছে। দুই দফা ঝড়ের পর দাবদাহে আম ঝরে পড়ছে। কিছু অসাধু ব্যবসায়ী লাভের আশায় আগেই অপরিপক্ক আম বেশি দামে বিক্রি করায় হাঁড়িভাঙ্গার সুনাম নষ্ট হয়।
বদরগঞ্জ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা গোলাম মোস্তফা মো. জোবাইদুর রহমান বলেন, বৈরী আবহাওয়ার কারণে গাছ থেকে আম ঝরে পড়ছে। এবারের আমের ফলন কম। এটাকে বলা হয় অলটারনেট-বিয়ারিং। প্রচণ্ড গরমে বোটা ছিঁড়ে আম ঝরে পড়ছে। এজন্য চাষিদের গাছের গোড়ায় সেচ ও পাতায় পানি স্প্রে করার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।
রংপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের অতিরিক্ত পরিচালক খন্দকার আব্দুল ওয়াহেদ বলেন, করোনা মহামারির কারণে গত বছর হাঁড়িভাঙ্গার তেমন মূল্য পায়নি চাষিরা। তবে এবারে ভালো দাম পাওয়ার আশা করা হচ্ছে। অত্যন্ত সুস্বাদু, আশবিহীন ও ছোট আঁটির জন্য হাঁড়িভাঙ্গা আমের সুনাম রয়েছে।