স্থানীয় সরকার নির্বাচনে মোবাইলে ভোট গ্রহণের পরিকল্পনা

ঢাকা, জাতীয়

ইসমাঈল হোসাইন রাসেল, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম | 2023-08-31 02:53:08

স্থানীয় সরকার নির্বাচনে ভোটপ্রদান ডিজিটালাইজড করার মাধ্যমে সকল ভোটারের ভোট গ্রহণের পরিকল্পনা করছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)।

পরিকল্পনা বাস্তবায়ন হলে মোবাইল ফোনের মাধ্যমে ভোট দিতে পারবেন ভোটাররা। কমিশনের অনুমোদন পেলে স্থানীয় সরকারের সিটি করপোরেশন, জেলা পরিষদ, উপজেলা পরিষদ, পৌরসভা ও ইউনিয়ন পরিষদে এ প্রক্রিয়ায় ভোটগ্রহণ করা হবে।

কমিশন সূত্রে জানা গেছে, স্থানীয় সরকারের সিটি করপোরেশন, জেলা পরিষদ, উপজেলা পরিষদ, পৌরসভা ও ইউপির ভোট মোবাইলের মাধ্যমে নেওয়ার জন্য একটি কর্মপরিকল্পনা তৈরি করা হয়েছে। পরিকল্পনাটি কমিশন সভায় উঠানো হবে। কমিশন অনুমোদন দিলে পরে এটি বাস্তবায়নের জন্য কাজ করবে ইসি। সেক্ষেত্রে একটি নতুন প্রকল্প নেওয়া হতে পারে। আর পরিকল্পনার উদ্যেশ্য হিসেবে বলা হচ্ছে, চলমান পদ্ধতির কারণে এসব ভোটার নাগরিক অধিকার থেকে বঞ্চিত হন। দেশের আপামর ভোটার (সংখ্যালঘু ও দুর্বল/অসুস্থ ভোটার) যাতে নির্বিঘ্নে ভোট দিতে পারেন সে লক্ষ্যে কাজ করবে ইসি। তাছাড়া পদ্ধতিটির মাধ্যমে একদিকে যেমন সব ভোটার ভোট দিতে পারবেন, অন্যদিকে আর্থিক সাশ্রয় ও কেন্দ্র দখলের প্রবণতা পরিহারসহ অনেক সুবিধা তৈরি হবে। পদ্ধতিটি প্রথমে স্থানীয় নির্বাচনে ব্যবহারে সফল হলে পরে জাতীয় নির্বাচনেও ব্যবহার হবে।

পরিকল্পনা পত্রে বলা হয়েছে, ভোট প্রদানের জন্য সরকারিভাবে দশ আঙুলের ছাপ ও আইরিশ নিয়ে জাতীয় পরিচয়পত্রের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে নির্বাচন কমিশনের সার্বিক তত্ত্বাবধানে যেকোনো একটি কোম্পানির সিমের মাধ্যমে ভোটারদের রেজিস্ট্রেশনের ব্যবস্থা করা যেতে পারে। এর ফলে সুবিধা হবে, ভোটগ্রহণে নিয়োজিত কর্মকর্তাসহ সব নাগরিক এবং প্রবাসীর ভোটাধিকার প্রয়োগ নিশ্চিত হবে। ভোটগ্রহণকালে প্রাণহানির আশঙ্কা থেকে বেরিয়ে আসা যেতে পারে। কেন্দ্র দখলের প্রবণতা দূর করা যাবে।

যেসব ভোটার মোবাইলের মাধ্যমে ভোট দিতে চান নির্বাচনের আগে তাদের রেজিস্ট্রেশন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা হবে। ভোটাররা ইসি সচিবালয় থেকে নির্দেশিত নম্বরে (১২৩) এসএমএস প্রদান করবেন। এনআইডি শাখার বিপরীতে একটি ডায়ালগ বক্স পাঠাবেন (জাতীয় পরিচয়পত্র নম্বর, নাম ও জন্মতারিখ), ভোটার ডায়লগ বক্স পূরণ করে এনআইডি শাখার নম্বরে এসএমএস প্রদানের পর এনআইডি শাখা অটোমেটিক ভোটারদের একটি রেজিস্ট্রেশন নম্বর দেবে যা ভোটগ্রহণের দিন ভোট প্রদানে ব্যবহার করবেন ভোটাররা। এক্ষেত্রে সুবিধা হবে, বর্তমান ব্যস্ত জগতে ভোট দেওয়ার জন্য আর লাইনে দাঁড়িয়ে কষ্ট করতে হবে না। প্রবাসী ভোটারদের ভোটদানে সুবিধা হবে। চাকরিজীবীরা রেজিস্ট্রেশনের মাধ্যমে ভোট দিলে নির্বাচনি এলাকায় সাধারণ ছুটির প্রয়োজন হবে না। ভোটগ্রহণ কর্মকর্তারা তাদের ভোট প্রদানের অধিকার থেকে বঞ্চিত হবেন না। দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ায় ভোট প্রদানে অসুবিধা হবে না।

ইসি রেজিস্ট্রেশনের জন্য একটি টাইমলাইন প্রদান করবে। টাইমলাইনের মধ্যে যেসব ভোটার রেজিস্ট্রেশন করবেন তাদের নাম বাদ দিয়ে রেজিস্ট্রেশন অফিসার ভোটকেন্দ্রে ব্যবহারের জন্য ভোটার তালিকা মুদ্রণ করবেন। কোনো কারণে মোবাইল কাজ না করলে রেজিস্ট্রেশনকৃত ভোটারদের জন্য একটি আলাদা তালিকাও মুদ্রণ করা যেতে পারে। এক্ষত্রে সুবিধা হবে, রেজিস্ট্রেশনকৃত ভোটাররা বিকাল সাড়ে ৩টার মধ্যে তাদের ভোট প্রদান করবেন এবং নির্ধারিত সময়ের পর সার্ভারটি অটোমেটিক ভোটগ্রহণ হতে বিরত থাকবে। সার্ভারে প্রাপ্ত ফল প্রার্থীদের সামনে প্রিন্ট করতে হবে এবং প্রিন্ট কপি ৪টার মধ্যে সব প্রার্থীকে দিতে হবে।

ভোটাররা রেজিস্ট্রেশন নম্বর ও জাতীয় পরিচয়পত্র নম্বর উল্লেখ করে পছন্দের প্রতীকে ভোট দেবেন। সার্ভারটি উপজেলা অফিসের হলরুমে থাকবে। এ হলরুমে সব প্রার্থী প্রথমে নিজ নিজ ভোট প্রদান করবেন এবং ভোটার কার্যক্রম শেষ না হওয়া পর্যন্ত অবস্থান করবেন। উপজেলা কর্মকর্তা বিকাল ৪টায় প্রার্থীদের ফল হাতে দেবেন। এক্ষেত্রে সুবিধা হবে, ভোটগ্রহণের দিন প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী উপজেলা সদরে অবস্থান করায় কেন্দ্রে বিশৃঙ্খলা হওয়ার আশঙ্কা কমে যাবে। ভোটকেন্দ্রের ফলই চূড়ান্ত ফল না হওয়ায় কোনো প্রার্থী ব্যালট পেপার চুরি বা দখলের চেষ্টা করবেন না।

কেন্দ্রের প্রিসাইডিং অফিসার ভোটকেন্দ্রে প্রার্থী কর্তৃক অবশ্য নিয়োগকৃত নির্বাচনি এজেন্টের কাছে ম্যানুয়ালি প্রাপ্ত ভোটের ফলের বিবরণী প্রদান করবেন। প্রিসাইডিং অফিসার কর্তৃক কেন্দ্রের ফল রিটার্নিং অফিসারের কাছে পৌঁছার পর সবার সামনে রিটার্নিং অফিসের সার্ভারের প্রাপ্ত ফলের সঙ্গে যোগ করে বিজয়ী প্রার্থী ঘোষণা করবেন।

এ বিষয়ে সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) এর সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার বার্তা২৪.কমকে বলেন, যেখানে নন ডিজিটালেই আমরা ভোট স্বচ্ছ করতে পারছি না। এর নিরাপত্তা ও বিশ্বাসযোগ্যতা নিশ্চিত করতে পারছি না। সেখানে ইন্টারনেটযুক্ত মোবাইল ফোনের মাধ্যমে ভোট হলে আইসিটি টেকনোলজি যুক্ত হবে, সেটা কতটুকু নিরাপত্তা ও বিশ্বাসযোগ্যতা নিশ্চিত করতে পারবে তা নিয়ে সন্দেহ আছে। প্রবাসীদের মোবাইল ফোনের মাধ্যমে ভোটের ক্ষেত্রেও বিশ্বাসযোগ্যতা নিশ্চিত না হলে সমস্যা হবে। যেখানে বিশ্বাসযোগ্যতা বিরাজমান না সেখানে উভয়ক্ষেত্রে বিতর্ক হবে।

প্রসঙ্গত বর্তমানে বাংলাদেশে ভোটগ্রহণ প্রক্রিয়ায় ব্যালট ও ইভিএম দু’টি ব্যবস্থা চালু রয়েছে। ইভিএম ডিজিটাল পদ্ধতি হলেও কেন্দ্রে গিয়ে ভোট দিতে হয়। তা ছাড়া ফল কাগজের ম্যাধ্যমে উপজেলায় পাঠাতে হয়। নতুন পদ্ধতিতে ভোটারদের কেন্দ্রে যেতে হবে না, তারা ঘরে বসে মোবাইলে ভোট দিতে পারবেন।

এ সম্পর্কিত আরও খবর