কুমিল্লার ঈদ বাজারে ক্রেতার চাপ কম, হতাশ বিক্রেতারা

, জাতীয়

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, কুমিল্লা | 2023-09-01 17:01:54

'গত বছরের ঈদুল ফিতরে করোনাভাইরাসের কারণে আমাদের দোকানপাট বন্ধ ছিলো। এ বছরও মনে হয়েছিলো দোকান বন্ধ থাকবে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত সরকার দোকানপাট খোলার সুযোগ দিলেও ক্রেতাদের তেমন চাপ বাড়েনি। অন্যান্য বছরগুলোর তুলনায় বেচাকেনা অর্ধেকও নেই। এতে ব্যবসায়ীদের মধ্যে বিরাজ করছে হতাশা।'

শুক্রবার (৭মে) বিকেলে কথাগুলো বলছিলেন কুমিল্লা নগরীর কান্দিরপাড় এলাকার অভিজাত শপিং মল সাত্তার খান কমপ্লেক্সের ব্যবসায়ী কৃষ্ণ সাহা।

ঈদুল ফিতরের আগে ছুটির দিন শেষ শুক্রবার ছিলো গতকাল। যার কারণে ব্যবসায়ীদের প্রত্যাশা ছিলো এদিন ক্রেতাদের ঢল নামবে। কিন্তু বাস্তবতা ছিলো অনেকটাই ভিন্ন। কুমিল্লা নগরীর সড়কে মানুষের ঢল থাকলেও ঈদের বেচাকেনা এখনো জমে উঠেনি বলে দাবি ব্যবসায়ীদের।

ক্রেতা শূন্য কুমিল্লার শপিং মল গুলো, হতাশ ব্যবসায়ীরা

শুক্রবার (৭মে) দুপুর থেকে বিকেল পর্যন্ত নগরীর সাত্তার খান কমপ্লেক্স, খন্দকার হক টাওয়ারসহ বেশ কয়েকটি মার্কেট ঘুরে দেখা গেছে, ক্রেতাদের তেমন চাপ নেই। অনেক ব্যবসায়ী দোকানে বসে অলস সময় পার করছেন। মার্কেট কর্তৃপক্ষ চেষ্টা করছেন ক্রেতাদের স্বাস্থ্যবিধি মানাতে। তারা কিছুক্ষণ পরপরই মাস্ক পরার বিষয়ে মাইকে সর্তক করছেন ক্রেতাদের। ক্রেতাদের উদ্দেশ্যে বারবার বলা হচ্ছে, মাস্ক ছাড়া মার্কেটে প্রবেশ নিষেধ। কিন্তু এরপরও অনেক ক্রেতা শতভাগ স্বাস্থ্যবিধি মানছেন না। এতে বাড়ছে করোনা আক্রান্তের ঝুঁকি। মাস্ক পরাসহ স্বাস্থ্যবিধি না মানায় শুক্রবার জেলা প্রশাসন ও পুলিশের সদস্যরা অভিযান চালিয়ে বিভিন্ন মার্কেটের তিনটি দোকান বন্ধ করে দেয়।

সাত্তার খান মার্কেটের নুসরাত শাড়ী'জ-এ কর্মরত তাওহীদ হোসেন বলেন, করোনা ব্যবসার বারোটা বাজিয়ে দিয়েছে। গত বছর আমরা নিঃস্ব হয়েছি করোনার কারণে। ভেবেছিলাম এবছর অন্তত ঘুরে দাঁড়াতে পারবো, কিন্তু করোনার দ্বিতীয় ঢেউ সেটাও হতে দিলো না। ক্রেতাদের চাপ একেবারেই কম। এ সময় যে পরিমাণে বেচাকেনা হওয়ার কথা তার অর্ধেকও হচ্ছে না। আমরা এখনো প্রত্যাশা করছি, শেষ সময় ক্রেতাদের চাপ বাড়বে। আর ক্রেতাদের চাপ বাড়লেই আমরা লাভবান হতে পারবো।

মিজানুর রহমান নামে নগরীর একটি মার্কেটের আরেক ব্যবসায়ী বলেন, করোনা ভীতি উপেক্ষা করে সড়কে এখন মানুষের ঢল। কিন্তু সড়কে যে পরিমাণ মানুষ, তার তুলনায় মার্কেটগুলোতে ক্রেতার সংখ্যা অনেক কম। এছাড়া আগে কান্দিরপাড় এলাকায় অভিজাত শপিং মল ছিলো হাতেগোনা দুই-তিনটি।  এখন অসংখ্য অভিজাত মার্কেট হয়েছে কুমিল্লা নগরীতে। যেভাবে মার্কেট বেড়েছে, সে হারে ক্রেতার সংখ্যা বাড়েনি। যার কারণে ক্রেতারা প্রতিটি মার্কেটে ভাগ হয়ে যাওয়ায় আগের মতো বিক্রি নেই ব্যবসায়ীদের।

কুমিল্লা নগরীতে শপিং করতে আসা জেলার লাকসামের কলেজ ছাত্রী জান্নাতুল ফেরদৌস জানায়, করোনার কারণে বেশিরভাগ মানুষ বিভিন্ন সংকটে রয়েছেন। কিন্তু এরপরও পরিবারের শিশুদের মুখে হাসি ফোটাতে বড়দের মার্কেটে আসতে হচ্ছে। আমি এসেছি ছোট ভাই-বোনের জন্য নতুন জামা কিনতে। কিন্তু অন্যান্য বছরের তুলনায় এবার দাম কিছুটা বেশি। তাই বাজেটের মধ্যে জামা কিনতে এ মার্কেট-ও মার্কেট ছুটতে হচ্ছে।

আরেক ক্রেতা মো.শাহজাহান বলেন, পরিবারের সদস্যদের নিয়ে ঈদের বাজার করতে এসেছি। ভেবেছিলাম মার্কেটে প্রচুর ভিড় হবে। কিন্তু প্রত্যাশার তুলনায় ভিড় নেই। এছাড়া করোনার কারণে মানুষ আগের মতো মার্কেটে আসছেন না।

নগরীর বিভিন্ন মার্কেটের ব্যবসায়ীরা জানান, তাঁরা চেষ্টা করছেন শতভাগ স্বাস্থ্যবিধি মেনে বেচাকেনা করতে। মার্কেটের প্রবেশ মুখে কর্তৃপক্ষের পক্ষের উদ্যোগে ক্রেতাদের মাস্ক পরে মার্কেটে প্রবেশ করতে বলা হচ্ছে। এরপরও অনেকে স্বাস্থ্যবিধি মানার ক্ষেত্রে উদাসীন বলে দাবি তাঁদের।

কুমিল্লা নগরীর ব্যবসায়ীদের প্রত্যাশা, ঈদের আগ ক্রেতাদের সমাগম বাড়বে, এতে তাদের বিক্রিও বাড়বে। এর মাধ্যমেই ঘুরে দাঁড়াবেন ব্যবসায়ীরা, এমনটাই এখন প্রত্যাশা তাঁদের।

কুমিল্লা দোকান মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আতিক উল্লাহ খোকন সাংবাদিকদের বলেন, সামগ্রিক পরিস্থিতি বিবেচনা করে সীমিত পরিসরে সকাল দশটা থেকে রাত আটটা পর্যন্ত দোকান খোলা রাখা হচ্ছে।  দোকান মালিক সমিতির পক্ষ থেকে স্বাস্থ্যবিধি মানার বিষয়টি মনিটরিং করা হচ্ছে বলে জানান তিনি।

এ সম্পর্কিত আরও খবর