কুমিল্লা নগরীর বড় বড় শপিংমলগুলোর পাশাপাশি ফুটপাতেও ঈদের কেনাকাটা জমে উঠেছে। নগরীর কান্দিরপাড় এলাকায় ঈদুল ফিতরকে কেন্দ্র করে নিম্নবিত্ত মানুষদের এই ঈদ বাজার এখন সরগরম। সকাল থেকে রাত পর্যন্ত ব্যস্ত সময় পার করছেন ফুটপাতের ঈদ বাজারের ব্যবসায়ীরা।
তবে মঙ্গলবার (১১ মে) সরেজমিনে নিম্নবিত্ত মানুষদের এই ঈদ বাজার গিয়ে দেখা গেছে ভিন্ন চিত্র। নিম্নবিত্তের ঈদ বাজারে এখন ভিড় করছেন মধ্যবিত্তরাও।
ফুটপাতের এই ঈদ বাজারের অবস্থা দেখেই বোঝা যাচ্ছিল মানুষের জীবনে কতোটা প্রভাব ফেলেছে বৈশ্বিক মহামারি করোনাভাইরাস। করোনার প্রভাবে কর্মহীন হয়ে পড়েছেন মধ্যবিত্ত শ্রেণির বিভিন্ন মানুষ। কিন্তু ঈদে নতুন পোশাক উপহার দিয়ে সন্তানদের মুখে হাসি ফোটানোর চেষ্টাও থেমে নেই তাঁদের। এজন্য নিরুপায় হয়ে মধ্যবিত্তদের এখন ছুটতে হচ্ছে নিম্নবিত্তদের ঈদ বাজারে।
নগরীর কান্দিরপাড়ে ফুটপাতে ঈদের কেনাকাটা করতে এসেছেন জসিম উদ্দিন নামের এক ব্যক্তি। তিনি নগরীর ইপিজেড এলাকায় পরিবারসহ ভাড়া বাসায় থাকেন। আগে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করলেও করোনার কারণে এখন কর্মহীন তিনি। জসিম উদ্দিন বলেন, গত বছর করোনার কারণে চাকরি চলে যায়। সে সময় থেকে মানবেতর জীবনযাপন করছি। কিন্তু আমাদের মতো মধ্যবিত্তরা কারও কাছে হাত পাততে পারেন না। মুখে হাসি আর মনে দুঃখ নিয়ে দিন কাটাতে হয় আমাদের মতো মধ্যবিত্তদের। কুমিল্লা নগরীতেই এমন হাজারো মধ্যবিত্ত পরিবার আছে, যারা নিরবে সব কষ্ট সহ্য করে যাচ্ছে। না পারছে কারও কাছে বলতে, না পারছে কারও কাছে চাইতে।
জসিম উদ্দিন আরও বলেন, গত বছর থেকে জমানো সব কিছু দিয়ে কোনমতে দিন পার করেছি। সংসারে দুই ছেলে-মেয়ে। ঈদে নিজেদের জন্য কোন কিছুই কেনাকাটা করিনি। কিন্তু সন্তানদের মুখের দিকে তাকিয়ে আর চুপ করে বসে থাকতে পারিনি। তাই ফুটপাতের ঈদ বাজারে এসেছি সন্তানদের জন্য কেনাকাটা করতে।
নগরীর কান্দিরপাড় লিবার্টি মোড়ের ফুটপাতের ব্যবসায়ী সাইফুল ইসলাম বলেন, গত বছর করোনার কারণে রোজার ঈদে আমাদের দোকানও বন্ধ ছিলো। এ বছর ব্যবসা করার সুযোগ পেয়েছি। আমরা মূলত নিম্নআয়ের মানুষদের পোশাক বিক্রি করি। আমাদের এটাকে বলা হয়- গরিবের ঈদ বাজার। কিন্তু এ বছর ভিন্ন চিত্র লক্ষ্য করছি, আগে যেসব মানুষ আমাদের দোকানে আসতেন না, এখন তারাই বেশি আসছেন। এদের বেশিরভাগ মধ্যবিত্ত শ্রেণির মানুষ।
আরেক ব্যবসায়ী হাবিবুর রহমান বলেন, করোনার প্রকোপের কারণে আমরা ভেবেছিলাম এ বছর খুব একটা বিক্রি হবে না। কিন্তু আমাদের বিক্রি বড় বড় মার্কেটের তুলনায় অনেক ভালো। সকাল থেকে রাত পর্যন্ত কাস্টমাররা আসছেন। অরেক বড় লোকেরাও আসেন আমাদের এখানে কম টাকায় কেনাকাটা করতে।