হলুদ তরমুজ চাষে কুমিল্লার কৃষক আনোয়ারের চমক

, জাতীয়

আব্দুর রহমান, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, কুমিল্লা | 2023-09-01 11:48:42

কুমিল্লার সদর দক্ষিণ উপজেলার বলারামপুর গ্রামের কৃষক আনোয়ার হোসেন। গত বছর কালো রঙের তরমুজ চাষ করে সফল হয়েছিলেন তিনি। সে সময় কাল তরমুজ নিয়ে পুরো জেলায় আলোচিত হয়েছিলেন আনোয়ার। এবারও হলুদ রঙের তরমুজ চাষ করে জেলাজুড়ে আলোচনায় সেই কৃষক। মৌসুমি তরমুজ যখন বাজার থেকে বিদায় নিচ্ছে, ঠিক সেই সময়ই ফলন আসতে শুরু করেছে উদ্যোমী এই কৃষকের।

জেলা কৃষি বিভাগ ও স্থানীয়দের তথ্য মতে, কৃষক আনোয়ার হোসেন কুমিল্লা জেলায় প্রথমবারের মতো এই হলুদ তরমুজ চাষ করেছেন। তার এই তরমুজের ফলনও হয়েছে বাম্পার। ইতিমধ্যে কৃষি জমি থেকেই তরমুজ বিক্রি করতে শুরু করেছেন তিনি। জেলার বিভিন্ন স্থান থেকে ক্রেতারা যাচ্ছেন কৃষক আনোয়ারের তরমুজ চাষের জমিতে। জমি থেকেই ক্রেতারা পছন্দ মতো তরমুজ কিনে খুশি মনে বাড়ি ফিরছেন। হলুদ তরমুজের পুষ্টিগুণ অন্যান্য তরমুজের চেয়ে বেশি। আর এই তরমুজ মিষ্টিও বেশ। কুমিল্লার মাটি তরমুজ চাষের জন্য উপযোগী।

তরমুজের পরিচর্যা করছেন আনোয়ার

সরেজমিনে গিয়ে জানা যায়, গত বছর কালো তরমুজ চাষ করে সফল হওয়ার পর কৃষক আনোয়ার এবার চাষ করেছেন হলুদ রঙের তরমুজের। তার হলুদ তরমুজ দেখতে খুবই সুন্দর। আর এই তরমুজ খেতেও রসালো ও সুস্বাদু। ভালো দরে বিক্রি করতে পেরে খুশি কৃষক আনোয়ারও। আনোয়ারের সাফল্য দেখে গ্রামের অন্য কৃষকরাও তরমুজ চাষে আগ্রহী হচ্ছেন। অনেকে তার কাছ থেকে পরামর্শ নিয়ে তরমুজ চাষ শুরু করতে যাচ্ছেন।

সম্প্রতি বলারামপুর গ্রামে কৃষক আনোয়ার হোসেনের তরমুজ খেতে গিয়ে দেখা যায়, সবুজ লতাপাতার মাঝে ঝুলছে হলুদ রঙের তরমুজ। ছোট-বড় কয়েক হাজার তরমুজ রয়েছে সেখানে। দেখতে মনে হয় হলুদের সমারহ। জেলায় এই প্রথম হলুদ তরমুজ চাষ করা হয়েছে। তাই এ তরমুজ চাষ দেখতে ভিড় করছেন বিভিন্ন স্থানের মানুষ।

কৃষক আনোয়ার হোসেন জানান, তিনি গত বছর কালো রঙের তরমুজ চাষ করে সফল হয়েছেন। তাই ইউটিউব দেখে এবার চাষ করেছেন হলুদ তরমুজ। চায়না জাতের এ তরমুজ চাষেও সফল তিনি। এ বছর তিনি ৬৫ শতাংশ জমিতে তরমুজ চাষ করেছেন। এর মধ্যে হলুদ তরমুজ চাষ করেন ২০ শতক জমিতে। আর বাকি ৪৫ শতক জমিতে চাষ করেছেন কালো তরমুজ। সবমিলিয়ে প্রায় চার হাজার তরমুজ আছে তার জমিতে। ইতিমধ্যে তরমুজগুলো বিক্রি শুরু করেছেন তিনি। এখন তরমুজ খেতের পরিচর্যায় ব্যস্ত সময় কাটছে তাঁর।

আনোয়ার জানান, এ বছর হলুদ তরমুজ চাষে প্রায় এক লাখ ৩০ হাজার টাকা খরচ হয়েছে তাঁর। বর্তমান বাজার দরে হলুদ রঙের তরমুজ প্রতি কেজির দেড়শ টাকা। প্রতিটি হলুদ তরমুজের ওজন ২ কেজির মতো। ইতিমধ্যে এক লাখ টাকার বেশি তরমুজ বিক্রি করেছেন তিনি। আবহাওয়া ভালো থাকলে হলুদ তরমুজ ৪ লাখ টাকার মতো বিক্রি করতে পারবেন।

তিনি আরও জানান, তরমুজ চাষে কোন প্রকার কীটনাশক ব্যবহার করেননি। তরমুজ চাষের শুরু থেকেই তাকে পরামর্শ দিয়ে সহযোগিতা করেছেন স্থানীয় কৃষি কর্মকর্তারা। তিনি আগামী বছর আরও বেশি জমিতে তরমুজ চাষ করতে চান।

স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান জামাল প্রধান বলেন, আনোয়ার হোসেন গত বছরের জুন মাসে কালো তরমুজ চাষ করেছিল। সে সময় অনেকে তাকে নিয়ে হাসাহাসি করেছে। কিন্তু আনোয়ার তখনও সফল হয়েছিলো। এবারও তার হলুদ তরমুজ চাষ বেশ সাড়া ফেলেছে।

এ প্রসঙ্গে জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো.মিজানুর রহমান সাংবাদিকদের বলেন, কৃষক আনোয়ার ইউটিউব দেখে গত বছর কালো তরমুজ চাষ শুরু করে। ওই সময় তাকে সর্বাত্মক সহযোগিতা করেছেন উপজেলা কৃষি বিভাগের কর্মকর্তারা। এবার তিনি হলুদ তরমুজ চাষ করেছেন। ফলনও ভালো হয়েছে। আমরা তাকে সহযোগিতা করছি। আর হলুদ তরমুজ চাষে কুমিল্লার মাটি বেশ উপযোগী। কৃষকরা এই তরমুজ চাষ করলে অনেক বেশি লাভবান হতে পারবেন।

এ সম্পর্কিত আরও খবর