বিলের পানিতে রোগমুক্তি!

ময়মনসিংহ, জাতীয়

উবায়দুল হক, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম | 2023-08-31 01:56:39

দিনাজপুর থেকে ময়মনসিংহের ত্রিশালে এসেছেন হাবিব মিয়া (৩৮)। সঙ্গে এনেছেন স্ত্রী-ছেলেকে। উদ্দেশ্য চার বছরের প্রতিবন্ধী শিশু ছেলের রোগমুক্তি। এক রাত না ঘুমিয়ে ঢাকা হয়ে ত্রিশালে যখন পৌঁছান তখন বেলা বাজে বিকেল সাড়ে ৩টা। অনেক আশা নিয়ে কাদামাটি মাড়িয়ে ছেলেকে কাঁধে করে নামেন স্থানীয় চেচুয়া বিলে। ছেলেকে নিয়ে গুনে গুনে বিলের পানিতে তিনটি ডুব দেন হাবিব মিয়া। কিন্তু ডুব দেয়ার পর বারবার ছেলের হাত-পা দেখলেও ভালো হয়নি তা।

ত্রিশালে ওই বিলের পানিতে ডুব দিলেই সেরে যায় কঠিন সব রোগ। এমন খবরে হাবিব মিয়ার মতো হাজারো মানুষ ভিড় করছে বিলের পাড়ে। জন্ম থেকেই কারো দু’পা বাঁকা, কারো হাত, অনেকে আবার বোবা। এমন সব রোগীদের নিয়ে স্বজনরা অন্ধ বিশ্বাসে নেমে পড়ছে নোংরা-দুর্গন্ধযুক্ত পানিতে। শুধু ডুব দেয়া নয়, কেউ কেউ খাচ্ছে সেই পানি। আবার বাড়িও ফিরছে সেই নোংরা পানি নিয়ে।

কিন্তু রোগমুক্তিতো দূরের কথা, উল্টো বিলের পানি খেয়ে অসুস্থ হয়ে পড়ছে অনেকে। তবুও রোগমুক্তির এমন গুজবে পরিস্থিতি এতোটাই ভয়াবহ যে পুলিশ লাঠিচার্জ করেও ফেরাতে পারছে না মানুষদের।

জানা যায়, কে বা কারা ফেসবুকে প্রচার করে বিলের পানিতে ডুব দিলেই সারবে রোগ। কাদামাটি খেলে হবে সন্তানের ভালো বিয়ে, ফিরে পাওয়া যাবে যৌবন। এমন গুজবে গত কয়েকদিন ধরে হাজারো মানুষ ভিড় জমাচ্ছে ত্রিশাল উপজেলার রামপুর ইউনিয়নের চেচুয়া বিলে। গুজব ছড়িয়ে যাওয়ায় দিন দিনই বাড়ছে মানুষ। লোক সামলাতে রীতিমতো হিমশিম খেতে হচ্ছে স্থানীয় প্রশাসনকে। তবে এখান থেকে ভালো হয়ে ফিরেছে এমন কাউকেই খুঁজে পাওয়া যায়নি।

বিলে আসা কয়েকজন জানান, বিভিন্নজনের কাছ থেকে জেনেছেন এই বিলে ডুব দিলে, পানি খেলে রোগমুক্তি হয়। এ খবর শুনেই তারা চলে এসেছেন বিলে।

ডুব দেবার পর অবস্থার পরিবর্তন হয়েছে কিনা জানতে চাইলে মাহাবুব নামের একজন বলেন, ‘এখনো পরিবর্তন হয়নি। তবে পানি সঙ্গে করে নিয়ে যাচ্ছি, বাড়িতে গিয়ে ছেলেকে আবারো খাওয়াব। তবুও যদি আল্লাহ সুস্থ করেন।’

স্থানীয়রা বলছে, সুস্থ হওয়ার কোনো খবর মিলেনি। সাধারণ মানুষকে বিলে না আসার আহ্বান জানিয়ে রামপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান নাজমুল সরকার বলেন, ‘এই বিষয়টি সম্পূর্ণ একটি গুজব। পানি পরা নিয়ে কেউ ভালো হয়েছে এমন কাউকেই আমরা পাইনি।’

এদিকে প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষ সামাল দিতে ব্যাপক হিমশিম খাচ্ছে প্রশাসন। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা দৈনন্দিন কাজ ফেলে মাঠে নেমেছেন পরিস্থিতি সামাল দিতে।

তথ্যপ্রযুক্তির যুগে গুজবে কান না দিয়ে সচেতন হবার পাশাপাশি গুজব ছড়িয়েছে যারা তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার কথা জানিয়েছে প্রশাসন।

এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আব্দল্লাহ আল জাকির বলেন, ‘জনগণ যাতে বিভ্রান্ত না হয় সেজন্য উপজেলা প্রশাসন মাঠে রয়েছে। এ বিষয়ে সচেতনতার জন্য তাদের বুঝানো হচ্ছে। আমরা মাইকিংয়ের ব্যবস্থা করেছি যাতে করে সত্য বিষয়টা উঠে আসে। এমন কয়েকটি উদাহরণও তুলে ধরছি। সেই সঙ্গে আমরা জানাচ্ছি যে রোগের জন্য যে নির্দিষ্ট চিকিৎসা ব্যবস্থা রয়েছে, সেটিই আসল পদ্ধতি। বিকল্প উপায়ে রোগ ভালো হয়ে যাবার ঘটনা শুধুই কাল্পনিক।’

ত্রিশাল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আজিজুর রহমান বলেন, ‘কোনো ধরনের বিশৃঙ্খলা বা দুর্ঘটনা যাতে না হয় সে ব্যাপারে সচেষ্ট রয়েছি। আমরা মেডিকেল টিম নিয়ে এসে মানুষকে বোঝাচ্ছি এবং শান্তিপূর্ণ উপায়ে লোকজনকে সরিয়ে দিচ্ছি। একই সঙ্গে এই গুজব ছড়ানো নিয়ে আমরা অনুসন্ধান করছি, কারা এ কাজ করেছে তা বের করার চেষ্টা করছি। আশা করছি দ্রুতই তাদের পরিচয় বের করে আইনের আওতায় নিয়ে আসতে পারব।’

এ সম্পর্কিত আরও খবর