বান্দরবানে পাহাড়িদের ফসল তোলা শুরু, জুমিয়াদের তৃপ্তির হাসির

চট্টগ্রাম, জাতীয়

নুসিং থোয়াই মারমা, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম | 2023-08-30 03:05:15

বান্দরবানের পাহাড়িদের জুম ক্ষেতের পাকা ফসল তোলার এখন ভরা মৌসুম। জুমিয়ারা ঘরে তুলেছে জুমের সেই সোনালি ফসল। ক্ষেত ভরা ফসল দেখে জুমিয়া নারী-পুরুষের মুখে ফুটেছে তৃপ্তির হাসি। এই ফসলে রঙিন স্বপ্ন দেখছে তারা।

বান্দরবানের পাহাড়ের ঢালে ঢালে জুমিয়া নারীরা জুমের পাকা ধান কাটতে ব্যস্ত সময় পার করছে। পার্বত্য চট্টগ্রামের ঐতিহ্যবাহী চাষ হচ্ছে জুম চাষ (পাহাড়ের ঢালে বিশেষ ধরনের চাষাবাদ)। জুমিয়ারা পাহাড়ের ঢালে বিশেষ পদ্ধতির এই চাষ করে জীবিকা নির্বাহ করে থাকে। বছরের জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারি মাসে জুম প্রস্তুত করার জন্য গাছপালা কাটা হয়।

মার্চ-এপ্রিলের দিকে শুকনা গাছপালা আগুনে পুড়িয়ে ধানসহ বিভিন্ন ফসলের বীজ বপন করা হয়। জুমে বীজ বপনের পর ৫ মাস পরিচর্যা ও রক্ষণাবেক্ষণ করা হয়।  সেপ্টেম্বরের প্রথম সপ্তাহ থেকে শুরু হয় সেই ফসল তোলা। নতুন এই ফসল তোলাকে ঘিরে বান্দরবান, রাঙ্গামাটি, খাগড়াছড়ির পাহাড়ে পাহাড়ে চলছে নবান্ন উৎসব। তিন জেলার প্রায় ২৫ হাজার ৪শ হেক্টর পাহাড়ি ভূমিতে জুম চাষ হয়েছে এবার।

বাংলাদেশের তিন পার্বত্য জেলা রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি ও বান্দরবানে এ জুম চাষ করা হয়। এই সময়টাতে পাহাড় এখন  জুমের পাকা ধানে ভরপুর। সারা বছর পরিশ্রম শেষে পাহাড়ি নারী-পুরুষের যখন জুমক্ষেতের পাকা ফসল ঘরে তোলার পর জুম্ম তরুণ-তরুণীরা গানসহ নবান্নের উৎসবে মেতে উঠবে।

পাকা ধানের সঙ্গে ধুম পড়েছে মারফা, বেগুন, ধানি মরিচ, ঢেঁড়শ, কাকরোল, কুমড়াসহ বিভিন্ন ফসল তোলার হিড়িকও। এরপর ঘরে উঠবে তিল, যব এবং সব শেষে তোলা হবে তুলা। এ মৌসুমে উপযুক্ত জলবায়ু ও বৃষ্টিপাতের কারণে এবং ইঁদুরের উৎপাত কমে যাওয়ায় ভালো ফলন হয়েছে। কোনো সমস্যা ছাড়াই জুমের সোনালি ফসল ঘরে তুলতে পারায় জুম্ম নারী-পুরুষ ফিরে পেয়েছে মুখের হাসি। চোখে ফোটে উঠেছে আশার আলো।

জুম চাষ সম্পর্কে মেপ্রুসিং মারমা নামে এক কৃষক  জানান, পৌষ-মাঘ মাসে পাহাড়ের ঢালে জঙ্গল কেটে পরিষ্কার করে রৌদ্রে শুকানোর পর ফাল্গুন-চৈত্র মাসে আগুনে পুড়িয়ে জুম চাষে উপযোগী করে তুলেন জুমিয়ারা। এরপর বৈশাখ-জ্যৈষ্ঠ মাসে পোড়া জুমের মাটিতে সুঁচালো দা দিয়ে গর্ত খুঁড়ে একসঙ্গে ধান, মারফা, মিষ্টি কুমড়া, তুলা, তিল, ভুট্টাসহ বিভিন্ন রকম বীজ বপন করে থাকে। আর এসব জুমের ধান আষাঢ়-শ্রাবণ মাসেই পেকে থাকে। তারপর শুরু হয় জুমের ফসল তুলার কাজ। সে সময় মারফা, কাঁচা মরিচ, চিনার, ভুট্টা পাওয়া যায়। ধান পাকে ভাদ্র-আশ্বিন মাসে। সব শেষে তুলা, তিল, যব ঘরে তোলা হয় কার্তিক-অগ্রহায়ণ মাসে।

কৃষকরা জানান, এবার জুম চাষ ভালো হলেও অল্প পরিমাণ জায়গায় জুম চাষ করে সারা বছরের খোরাকি নিশ্চিত না হওয়ায় তারা চিন্তিত। জনসংখ্যা বৃদ্ধি, মাটির উর্বরতা হ্রাসে কারণে জুম চাষের পাহাড় কমে গেছে। তাই একই  পাহাড়ের মাটিতে বার বার জুম চাষ করায় এখন আর আগের মত জুমে ভালো ফলন হয় না।

এ বিষয়ে বান্দরবান জেলা কৃষি কর্মকর্তা আলতাফ হোসেন জানান, এবার আবহাওয়া ভালা থাকায় ফলন ভালো হয়েছে। তা ছাড়া জুম চাষে নতুন পদ্ধতি আবিষ্কার করে কৃষককে প্রশিক্ষিত করা হচ্ছে। এর ফলাফল মিলছে এ বছরের ফলনে।

এ সম্পর্কিত আরও খবর