চিঠি আসে ই-মেইলে, পোস্টমাস্টার আটকা ‘৮৫’-তে

ময়মনসিংহ, জাতীয়

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম | 2023-12-17 19:30:22

ময়মনসিংহের গৌরীপুর উপজেলার শাখা ডাকঘরগুলো নানা সমস্যায় জর্জরিত। পাকা ভবন থাকলেও কিছু ডাকঘরে নেই বিদ্যুৎ সংযোগ। সৌরবিদ্যুৎ থাকলেও অধিকাংশগুলোতে রয়েছে যান্ত্রিক ত্রুটি। ই-ডাক সেবার সাইনবোর্ড থাকলেও মিলছে না সেই সেবা।

লোকবল সংকট থাকায় অনেক ডাকঘরের পোস্টমাস্টারকেই পিয়নের দায়িত্ব পালন করতে হচ্ছে। এই দিনেও শাখা ডাকঘরের একজন পোস্ট মাস্টার প্রতি মাসে ২৫৫০ টাকা বেতন পান, যা দৈনিক ভিত্তিতে দাঁড়ায় মাত্র ৮৫ টাকা।

একাধিক পোস্টমাস্টারের অভিযোগ, প্রতি মাসে ডাকঘরে অফিস খরচ দেয়া হয় মাত্র ১৩ টাকা। এখানে কর্মরত কর্মচারীরা কোনো উৎসব ভাতা পায়না। যে টাকা বেতন দেয়া হয় সেটা দিয়ে সংসার চলে না। সরকারের পক্ষ থেকে ডাক বিভাগের ভাগ্য উন্নয়নে বহুবার প্রতিশ্রুতি মিলেছে। তবে কাজের কাজ কিছুই হয়নি।

গৌরীপুর উপজেলা ডাকঘর সূত্রে জানা গেছে, প্রত্যন্ত অঞ্চলের মানুষের কাছে ডাকসেবা পৌঁছে দেয়ার জন্য উপজেলার ভবানীপুর, ডৌহাখলা, শাহগঞ্জ, মুখোরিয়া, কেল্লাতাজপুর, গৌরীপুর আর এস, বীরআহাম্মদপুর, ভুটিয়ারকোণা, লামাপাড়া, মাওহা, গিধাউষা, পাছার, রামগোপালপুর, নাহড়া গ্রামে ১৪টি শাখা ডাকঘর রয়েছে। প্রতিটি ডাকঘরে পোস্টমাস্টার, রানার ও পিয়ন সহ তিনজন কর্মচারীর পদ রয়েছে।

ডাকঘরগুলো থেকে চিঠি রেজিস্ট্রি, পার্সেল, ইএমও, খাম, ডাক টিকিট ও রাজস্ব টিকিট বিক্রিসহ বিভিন্ন ধরনের সেবা দেয়া হয় গ্রাহকদের। কিন্তু প্রয়োজনীয় লোকবল, আসবাবপত্র ও আধুনিক প্রযুক্তি সংকটের কারণে এখানে প্রয়োজনীয় ডাক সেবা দিতে ব্যর্থ হচ্ছে কর্মরত কর্মচারীরা। এতে করে গ্রাহকরা কাঙ্ক্ষিত সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। এরমধ্যে রামগোপালপুর ও ভবানীপুর ডাকঘরে পিয়ন না থাকায় পোস্টমাস্টারকেই চিঠি বিলি করতে হয়।

এদিকে কয়েক বছর আগে সেবার মান বৃদ্ধি করার লক্ষ্যে শাখা ডাকঘরে ল্যাপটপ, স্ক্যানার, প্রিন্টার ও ইন্টারনেট মডেমসহ বিভিন্ন সরঞ্জামাদি দিয়ে পোস্ট ই-সেন্টার সেবা চালু করেছে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ।

তবে সরেজমিনে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ১৪টি ডাকঘরের মধ্যে ডৌহাখলা, শাহগঞ্জ, পাছার, বীরআহাম্মদপুর, রামগোপালপুরসহ ৫টি ডাকঘরে পোস্ট ই-সেন্টার সেবা চালু রয়েছে। বাকি ৯টি ডাকঘরে পোস্ট ই-সেন্টার সাইনবোর্ড থাকলেও সেবা পাচ্ছে না গ্রাহকরা।

স্থানীয়রা জানায়, পোস্ট ই-সেন্টারের সরঞ্জামাদি বিকল এবং কয়েকজন পোস্টমাস্টার সরঞ্জামাদি নিজেদের বাসা-বাড়িতে রেখে ব্যবহার করায় ডাকঘরে গ্রাহকরা সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।

স্থানীয় এলাকাবাসীর অভিযোগ, চাকরির পরীক্ষার কার্ডসহ বিভিন্ন জরুরি ডাক সময় মতো গ্রাহকদের কাছে পৌঁছে না। এতে করে গ্রাহকদের দুর্ভোগ পোহাতে হয়। গ্রামীণ ডাকঘরগুলোকে আধুনিক মানের উপযোগী করে তোলার জন্য অচিরেই ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে যুগোপযোগী উদ্যোগ নিতে হবে। আর তা না হলে ডাকসেবা একদিন বিলুপ্ত হয়ে যাবে।

উপজেলা ডাক কর্মচারী সমিতির সাধারণ সম্পাদক মহসীন মাহমুদ জানান, শাখা ডাকঘরে এখন আগের মতো চিঠি আসে না। ইন্টারনেট ও মোবাইলে আধুনিক প্রযুক্তির সেবা চালু হওয়ার পর থেকে চিঠি-পত্র ই-মেইলে আদান-প্রদান করা হয়। এছাড়া বিদ্যুৎ সংযোগ না থাকায় অনেক ডাকঘরে সরঞ্জামাদি পাওয়ার পরেও পোস্ট-ই সেন্টার সেবা চালু করা যাচ্ছে না। তারপরেও নানা সমস্যা মোকাবেলা করে তারা ডাকসেবা চালিয়ে যাচ্ছেন। তবে মাস শেষে ডাক কর্মচারীরা যে টাকা বেতন পান তা দিয়ে সংসার চলে না। তাই কর্তৃপক্ষের কাছে ডাকসেবার মান বাড়ানোর পাশাপাশি বেতন-ভাতা বৃদ্ধিসহ চাকরি সরকারিকরণের দাবি জানিয়েছেন তিনি।

গৌরীপুর উপজেলা ডাকঘরের পোস্টমাস্টার আব্দুল মজিদ জানান, চোরের উপদ্রবের কারণে অনেক পোস্টমাস্টার পোস্ট-ই সেন্টারের মালামাল বাড়িতে নিয়ে রেখেছে। যেসব ডাকঘরে এসব সেবা দেয়া হচ্ছে না সেগুলোর খোঁজ নিয়ে চালু করা হবে। আর ডাক-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা বাড়ানোর বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের।

এ সম্পর্কিত আরও খবর