বরগুনায় ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের প্রভাবে নদীর জোয়ারের পানিতে কয়েক হাজার পরিবার পানি বন্দি হয়ে আছেন।
বুধবার (২৬ মে) সকাল ৮টার দিকে উপকূলীয় নদ-নদীতে জোয়ার শুরু হয়ে চলে দুপুর ১২টা পর্যন্ত। এ সময় বরগুনার নদ-নদীতে বিপদসীমার ওপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হলে পানি বন্দি হয়ে পড়ে কয়েক লাখ মানুষ। এতে আতঙ্কে রয়েছেন ভাঙন কবলিত এলাকার বাসিন্দারা।
ভুক্তভোগীরা জানিয়েছেন, স্বল্প উচ্চতা ও ভাঙা বেড়িবাঁধই এ দুর্ভোগের কারণ। পাশাপাশি নদীর জোয়ারের লবন পানি কৃষি জমিতে ঢুকে ফসল নষ্ট হওয়ার অশঙ্কা রয়েছে। এসব এলাকার মানুষ খাবার পানি সংকটে রয়েছেন।
জানা যায়, বেলা ১১ টার দিকে তালতলী উপজেলার খোট্টার চর, বড় অঙ্কুজানপাড়া, ছোট ভাইজোড়া, তেতুলবাড়িয়া, নিশানবাড়িয়া, নলবুনিয়া বেড়িবাঁধের ভাঙা অংশ দিয়ে জোয়ারের পানি লোকালয়ে ঢুকে বাড়িঘর, দোকানপাট, টিউবওয়েল প্লাবিত হয়েছে। স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় অনেকের দুপুরের রান্না হয়নি। বেড়িবাঁধের বাইরের ঘরবাড়িতে দেখা দিয়েছে খাবার পনি সংঙ্কট। তীরের বাঁধের একটা অংশ ভেঙে নদীর লবন পানি ঢুকে বাড়ির আঙিনাসহ তলিয়ে গেছে ফসলের মাঠ। চাষিদের ফসলের চরম ক্ষতির শঙ্কা রয়েছে।
এদিকে উপজেলার সোনাকাটা ইউনিয়নের বেড়িবাঁধের বাহিরে থাকা একটি সরকারী আবাসন এলাকা সম্পূর্ণ তলিয়ে গেলে সেখানকার মানুষদের সরিয়ে আশ্রয় কেন্দ্রে নিচ্ছে সিপিপি সদস্যরা। পাশাপাশি স্থানীয়দেও নিরপাদে যাওয়ার জন্য চালানো হচ্ছে প্রচারনা।
সোনাকাটা এলাকার স্থানীয় বেলাল হোসেন ফারাবী বলেন, পূর্ণিমার জোয়ার ও ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের প্রাভাবে এ এলাকার নিম্ন স্থানগুলো পানিতে তলিয়ে গেছে। দেখা দিয়েছে খাবার পানির সংকট। শঙ্কা রয়েছে পানিবাহীত রোগের। এখানকার প্রায় ১০ থেকে ১২টি গ্রামের ঘরবাড়ি তলিয়ে গেছে। এতে কয়েক হাজার মানুষ পানি বন্দি রয়েছে।
ছোট ভাইজোড়া আবাসন এলাকার মল্লিক মো. জামাল বলেন, জোয়ারের পানিতে এই এলাকার অনেক মানুষ পানি বন্দি হয়ে পড়েছে। টিউবওয়েল পানিতে ডুবে যাওয়ায় খাবার পানি সংকট দেখা দিয়েছে।
তালতলী উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. কাওসার হোসেন বলেন, যারা পানি বন্দি রয়েছে তাদের জন্য শুকনো খাবারের ব্যবস্থা করা হয়েছে। খুব দ্রুত তাদের মাঝে এগুলো বিতারণ করা হবে। পাশাপাশি নিরাপদ পানির ব্যবস্থাও করা হবে। তিনি আরও বলেন,রাতের জন্য প্রতিটি আশ্রয় কেন্দ্রে খিচুরীর ব্যবস্থা করা হয়েছে।
জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, ঘূর্ণিঝড় ‘ইয়াস’ মোকাবিলায় বরগুনা জেলার ৬টি উপজেলায় ৬৪২টি আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত করা হয়েছে। দুর্যোগকালীন এবং পরবর্তী সময় চিকিৎসা সেবায় ৪৪টি মেডিকেল টিম প্রস্তুত করা হয়েছে। ঘূর্ণিঝড় পূর্ববর্তী সহায়তার জন্য ইতোমধ্যেই জেলার ৪২টি ইউনিয়ন ও চারটি পৌরসভায় ১১লাখ ৪৫হাজার টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এছাড়া শিশু খাদ্যে ৬ লাখ ও গো-খাদ্যে ৬ লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে এবং ১ কোটি ৩৩ লাখ টাকা ও ৩৫৭ মেট্রিক টন চাল মজুদ রয়েছে।
দুর্যোগ মোকাবিলায় ইতোমধ্যে ৭ হাজার ৫০০জন স্বেচ্ছাসেবী কাজ শুরু করেছেন।