গম জব্দের ১৭ দিন পর আ.লীগ নেতা গ্রেফতার

, জাতীয়

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, রাজশাহী | 2023-08-27 19:55:51

রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলায় ২০ মেট্রিক টন গম জব্দের ১৭ দিন পর এর মালিককে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। মঙ্গলবার (২৫ মে) দিবাগত রাতে নওগাঁ সদর উপজেলার রঘুনাথপুর গ্রামের এক বাড়ি থেকে ব্যবসায়ী আতাউর রহমান ওরফে আতাকে (৫৫) গ্রেফতার করা হয়।

বুধবার (২৬ মে) সকালে তাকে গোদাগাড়ীর কাঁকনহাট পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রে আনা হয়।

কাঁকনহাট পৌরসভার রসুলপুর কুমেদপুর দীঘিপাড়া মহল্লায় আতাউর রহমানের বাড়ি। তিনি আওয়ামী লীগের নেতা। গত ৮ মে রাতে আতাউরের বাড়ি থেকে ২০ টন গম জব্দ করে পুলিশ। খাদ্য অধিদফতরের বস্তায় চারটি ট্রলিতে ছিল গমগুলো। প্রতিটি ট্রলিতে ছিল ৫ টন। মোট ২০ টন গমের আনুমানিক দাম আট লাখ টাকা।

কাঁকনহাট পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের সদস্যরা যখন আতাউরের বাড়িতে অভিযান চালায়, তখনই তিনি পালিয়ে যান। এরপর পুলিশ গমগুলো জব্দ করে নিয়ে যায়। পরদিন কালোবাজারীর অভিযোগে গোদাগাড়ী থানায় একটি মামলাও করা হয়। অবশেষে ওই ব্যবসায়ীকে গ্রেফতার করা হলো।

কাঁকনহাট পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের ইনচার্জ পুলিশের পরিদর্শক মাহমুদুল হাসান জানান, আতাউরকে গ্রেফতারের জন্য কয়েকদফা অভিযান চালানো হয়। কিন্তু তিনি বার বার অবস্থান পরিবর্তন করছিলেন। তাঁকে ধরা যাচ্ছিল না। অবশেষে নওগাঁ সদর থানা পুলিশের সহায়তায় মঙ্গলবার রাতে তাঁকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তিনি নওগাঁয় পরিচিত এক ব্যক্তির বাড়িতে লুকিয়ে ছিলেন।

প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে আতাউর রহমান জানিয়েছেন, তিনি পঞ্চগড় থেকে গমগুলো কিনে ট্রাকে করে কাঁকনহাটে আনেন। এরপর ট্রাক থেকে নামানোর পর আলাদা খাদ্য অধিদফতরের বস্তায় ভরে গমগুলো ট্রলিতে তুলে রেখেছিলেন। পুলিশ পরিদর্শক মাহমুদুল হাসান বলেন, গমগুলো কালোবাজারীর জন্য রাখা হয়েছিল। এটা অবৈধ মজুত। তাই জব্দ করা হয়েছিল।

স্থানীয় একটি সূত্র জানিয়েছে, কৃষক নয়, খাদ্য বিভাগের কর্মকর্তাদের যোগসাজসে ব্যবসায়ীরাই এখন বাইরে থেকে নিম্নমানের গম সংগ্রহ করে এনে গুদামে দিচ্ছেন। গুদাম থেকে ব্যবসায়ীদের খাদ্যবিভাগের সিলযুক্ত বস্তাও সরবরাহ করা হচ্ছে। এই বস্তায় ভরে ব্যবসায়ীরা গম দিচ্ছেন। এতে তাঁরা লাভবান হচ্ছেন। আতাউরের বাড়ি থেকে জব্দ করা গমগুলোও খাদ্যগুদামে ঢোকানো হতো। তিনি গুদামে ধানও ঢোকান।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে পুলিশ পরিদর্শক মাহমুদুল হাসান বলেন, এই বিষয়টা এখনও নিশ্চিত হতে পারিনি। তবে গমগুলো অবৈধ বলেই তো আতাউর পালিয়ে ছিলেন। তাঁকে আদালতে সোপর্দ করে রিমান্ড চাওয়া হবে। রিমান্ড মঞ্জুর হলে তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করে বিস্তারিত জানা যাবে।

তিনি আরও বলেন, যেদিন গম জব্দ করা হয় সেদিন পুলিশের উপস্থিতি টের পয়ে ট্রলি চালকেরা পালিয়ে যায়। তখন মূল হোতা আতাউর না এসে তার প্রতিনিধি হিসেবে কাঁকনহাট পৌরসভার ৫ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর গোলাম মোর্তুজা শেখ, ৬ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর আল মামুন, বর্তমান পৌর মেয়রের ব্যক্তিগত সহকারী চয়ন ও ৬ নম্বর ওয়ার্ড যুবলীগ সভাপতি খাত্তাব পুলিশের নিকট একটি ভুয়া বিল ভাউচার দাখিল করেছিলেন।

এদিকে আতাউরকে গ্রেফতার করায় কাঁকনহাটের মানুষের মধ্যে স্বস্তি ফিরে এসেছে। কাঁকনহাট পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হুমায়ন কবীর বলেন, আতাউর পৌর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক হিসেবে রয়েছেন। দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গ, দুর্নীতি ও কালোবাজারীর জন্য তাকে দল থেকে বহিষ্কার করা হবে। আর এই কাজের সাথে কারা কারা সম্পৃক্ত রয়েছেন তাদের বিরুদ্ধেও দল ব্যবস্থা নেবে।

কাঁকনহাটের ৭ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি সাইফুর রহমান, ওয়ার্ড কাউন্সিলর কল্লোল হোসেন ও পৌর যুবলীগ সাধারণ সম্পাদক তরিকুল ইসলাম জানান, আতাউর এর আগেও সরকারি চাল কালোবাজারি করতে গিয়ে হাতেনাতে ধরা পড়েন। তারা এই কালোবাজারীর শাস্তি দাবি করেন।

এ সম্পর্কিত আরও খবর