ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের প্রভাবে দক্ষিণাঞ্চলে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি 

, জাতীয়

জহির রায়হান, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, বরিশাল | 2023-08-25 19:16:31

ঘূর্ণিঝড় ইয়াস ও পূর্নিমার প্রভাবে বরিশাল তথা দক্ষিণাঞ্চলে ঝড়ো হাওয়ার সাথে জলোচ্ছ্বাস হয়েছে। বিপদসীমার ওপর দিয়ে জোয়ারের পানি প্রবাহিত হওয়ায় বিভাগের বিভিন্ন জেলায় প্রাণহানি সহ নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। পাশাপাশি বেড়িবাঁধ, রাস্তা ও কাঁচা ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এছাড়া মাছের ঘেরসহ অনেক গরু-মহিষ ভেসে যাওয়ার ঘটনা ঘটেছে এই অঞ্চলে। এতে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা করা হচ্ছে। তবে প্রকৃত ক্ষয়ক্ষতির তালিকা প্রণয়নে আরো তিন থেকে চার দিন সময় লাগবে বলে জানান বিভাগীয় কমিশনার।

বৃহস্পতিবার (২৭ মে) দুপুর ১২ টা পর্যন্ত ঘূর্ণিঝড় ইয়াস মোকাবিলায় বরিশাল বিভাগীয় কার্যালয়ের কন্ট্রোল রুমে পাওয়া তথ্য সূত্রে জানা যায়, বিশেষ করে ঘূর্ণিঝড় ইয়াস ও পূর্নিমার জোয়ারের প্রভাবে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ভোলা জেলা। 

সেখানে ৩ ফিট জলোচ্ছ্বাসে একজনের প্রাণহানিসহ ২৫০ টি কাঁচা ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এছাড়া এই জেলায় প্রায় ৯০০গরু-মহিষ ভেসে গেছে।

বরিশাল জেলার মেহেন্দিগঞ্জ উপজেলায় বাহেরচরে আশ্রয়ণ প্রকল্পের ৫ টি ঘর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। হিজলা উপজেলায় ৩০০ মিটার বেড়িবাঁধ ধ্বসে গেছে। বাকেরগঞ্জ উপজেলার নলুয়া বেড়িবাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সদর উপজেলার চরবাড়ায়ী, শায়েস্তাবাদ, চন্দ্রমোহন ও চরমোনাই ইউনিয়নে জোয়ারের প্রভাবে এক হাজার পরিবার পানিবন্দী হয়েছে। 

আরো জানা যায়, পিরোজপুর জেলায় ৩১ টি ইউনিয়ন দুর্যোগ কবলিত হয়ে ৫৫০ টি ঘর আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

এছাড়া পটুয়াখালীতে ২৩২ টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। বরগুনা জেলায় দুর্যোগকালীন সময় আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রিত ৫২০ জন নিজ নিজ বাড়ি ফিরে গেছেন এবং ঝালকাঠী জেলার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে।

এসব ক্ষয়ক্ষতি ছাড়াও বিভাগের বিভিন্ন উপজেলায় রাস্তাঘাট, বেড়িবাঁধ, ঘরবাড়ি, মাছের ঘের ও বিভিন্ন মৌসুমী ফসল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। যার ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণে কাজ করছেন মাঠ প্রশাসন, মৎস্য ও কৃষি বিভাগসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।

বাকেরগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স হাসপাতাল ও ঝালকাঠীর রাজাপুর থানা সূত্রে জানা যায়, বাকেরগঞ্জ ও রাজপুর উপজেলায় ঘরবাড়ির আশপাশে জোয়ারে পানিতে ডুবে দুইজন করে চার শিশুর মৃত্যু হয়েছে।

বরিশাল পানি উন্নয়ন বোর্ড ও মৎস্য অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, ঘূর্নিঝড় ইয়াস ও পূর্নিমার কারণে পানি বৃদ্ধি পেয়ে জলোচ্ছ্বাস হওয়ায় বিভাগের বরগুনা সদরে বেড়িবাঁধের ৪টি পয়েন্ট, বামনায় ২টি পয়েন্ট, বেতাগীতে ১টি পয়েন্ট, পাথরঘাটায় ১টি পয়েন্ট ও আমতলীতে ১টি পয়েন্ট, পটুয়াখালীর কলাপাড়ার নিজামপুরে ১টি পয়েন্ট ও ধুলাসারে ১টি পয়েন্ট এবং ভোলার মনপুরায় ১টি পয়েন্ট সহ মোট ১২টি পয়েন্টে প্রাথমিকভাবে এক থেকে দেড় কিলোমিটার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। একই কারণে বিভাগের সাড়ে ১২ হাজার পুকুর ও ঘের ডুবে প্রায় ৬৪ কোটি টাকার মাছ বেড়িয়ে গেছে বলে জানিয়েছে মৎস্য বিভাগ।

এদিকে বুধবার (২৬ মে) সকালে পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলায় আশ্রয় কেন্দ্রে পুত্র সন্তানের জন্ম দিয়েছেন সানজিদা (২২) নামে এক গৃহবধূ। এছাড়া এই দুর্যোগকালে বুধবার (২৬ মে) বরিশালের বাবুগঞ্জ উপজেলার রাজগুরু নতুনচর এলাকার এক মাহিন্দ্রা চালকের মেয়ের বিয়ে হয় গৌরনদী এলাকায়। কিন্তু বিয়ে বাড়ি প্লাবিত হওয়ায় বর কনে কে কোলে করে পাড় করানো হয়। আর আত্মীয় স্বজনরা আসে নৌকায়।

নগরীর পলাশপুর এলাকার বাসিন্দ মোকছেদ উদ্দিন জানান, বুধবার বিকালে র্কীতনখোলা নদী থেকে পূর্ণিমার জোয়ারের পানি উঠে বাড়িঘর তলিয়ে যায়। তখন কোন রকম মেয়ে-ছেলে নিয়ে ঘরের ভিতরে ঢুকে কাঠের ওপর বসে ছিলাম।

বৃহস্পতিবার (২৭ মে) বিকালে বরিশালের বিভাগীয় কমিশনার সাইফুল হাসান বাদল বার্তা২৪.কম কে জানান, ঘূর্ণিঝড় ইয়াস মোকাবিলায় সব ধরনের প্রস্তুতি গ্রহণ করেছিলো বিভাগীয় প্রশাসন। সকল জেলা-উপজেলায় ঘূর্ণিঝড় ইয়াস মোকাবিলায় কঠোর নির্দেশনা দেওয়া হয়েছিল।

আল্লাহর অশেষ কৃপায় ঘূর্ণিঝড় ইয়াস সরাসরি বরিশাল বিভাগে তাণ্ডব না চালালেও পূর্নিমার জোয়ারের প্রভাবে বরিশাল তথা গোটা দক্ষিণাঞ্চলে জলোচ্ছ্বাস হয়েছে। এতে বিভাগের বিভিন্ন জেলার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। পাশাপাশি এখানকার বেড়িবাঁধ, রাস্তাঘাট, কাঁচা ঘরবাড়ি, মাছের ঘের ডুবে এবং বিভিন্ন ফসলের ক্ষেত ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

ঘূর্ণিঝড় ইয়াস ও পূর্নিমার জোয়ারের প্রভাবে বরিশাল বিভাবে যে ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে সেই তালিকা প্রণয়ন করতে আরো তিন থেকে চারদিন সময় লাগবে। তবে দ্রুত স্ব স্ব উপজেলায় ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নিরূপণে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাসহ সংশ্লিষ্টরা কাজ করছেন বলেও জানান তিনি।

এ সম্পর্কিত আরও খবর