রাজশাহীর ২০০ টন আম যাবে ইউরোপে

, জাতীয়

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, রাজশাহী | 2023-08-31 10:23:33

রাজশাহীর আমের খ্যাতি বিশ্বজুড়ে। দেশের ভেতরে তো বটেই, বাইরেও রাজশাহীর আমের চাহিদা ভালো। তাই ২০১৬ সালে রাজশাহীর আম বিদেশে রফতানি শুরু হয়। প্রথম বছরের পর রফতানির পরিমাণ ধীরে ধীরে কমে গেলেও এবার অন্তত ২০০ মেট্রিক টন আম রফতানি হবে।

এরই মধ্যে গত শুক্রবার (২৮ মে) রাতে রাজশাহীর বাঘা থেকে ৩ হাজার কেজি আম পাঠানো হয়েছে। সেদিন রাজশাহীর হিমসাগর আম নামানো শুরু হয়। আর এ দিনই বিদেশে আম পাঠানো শুরু হয়। বাঘার আম চাষিদের ২০ সদস্যের একটি সমিতি গত তিন বছর ধরে রফতানিকারকদের সাথে চুক্তিবদ্ধ হয়ে আম উৎপাদন করে। ভালো পরিচর্যায় বেড়ে ওঠা এসব আম বিদেশে রফতানি করা হয়। কৃষি সম্প্রাসারণ অধিদফতরের কর্মকর্তারা তাঁদের সহায়তা করেন।

রাজশাহী জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক কেজেএম আবদুল আউয়াল বলেন, বাংলাদেশ ফ্রুটস ভেজিটেবলস অ্যান্ড অ্যালাইড প্রোডাক্টস এক্সপোর্টার অ্যাসোসিয়েশন’ নামের একটি প্রতিষ্ঠান ২০০ টন আম রফতানি করবে। বেসরকারি এই সংগঠনটির সঙ্গে কৃষি বিভাগ যোগাযোগ করে সবকিছু ঠিক করেছে। জেলায় রফতানিযোগ্য আমও উৎপাদন হচ্ছে। এসব আম ইউরোপের জার্মানি, ফ্রান্স, ইতালি ও সুইজারল্যান্ডে যাবে।

তিনি জানান, বাংলাদেশ ফ্রুটস ভেজিটেবলস অ্যান্ড অ্যালাইড প্রোডাক্টস এক্সপোর্টার অ্যাসোসিয়েশন সারাদেশ থেকে মোট ৫০০ মেট্রিক টন আম রফতানি করবে। এর মধ্যে রাজশাহী থেকে নেওয়া হবে ২০০ টন। এ জন্য সংগঠনটি রাজশাহীর ২০ জন চাষির সঙ্গে চুক্তিও করেছে।

কৃষি বিভাগ জানিয়েছে, দেশের বাইরে আম রফতানি করতে হলে ২৬টি শর্ত মানতে হয়। এর মধ্যে একটি শর্ত হচ্ছে- ব্যাগিং পদ্ধতিতে আম উৎপাদন। ব্যাগিং করা আমের মান ভালো থাকে। রফতানিকারকরা ব্যাগিং করা এই আম ঢাকার শ্যামপুর প্ল্যান কোয়ারেন্টিন উইং সেন্ট্রাল প্যাকিং হাউসে নিয়ে যান। সেখানে আমের মান পরীক্ষা করা হয়। এরপর ভালো আমকে ওই প্রতিষ্ঠান থেকে ছাড়পত্র দেওয়া হয়। ছাড়পত্র পাওয়া আমগুলোই কেবল বিদেশে যেতে পারে।

বাংলাদেশ ফ্রুটস ভেজিটেবলস অ্যান্ড অ্যালাইড প্রোডাক্টস এক্সপোর্টার অ্যাসোসিয়েশন রাজশাহী থেকে ২০০ মেট্রিক টন আম নেওয়ার চুক্তি করলেও জেলায় এর চেয়েও বেশি ররফতানিযোগ্য আম উৎপাদন হবে। রাজশাহী এগ্রো ফুড প্রডিউসার সোসাইটির নামের একটি সংগঠনের সদস্যরা প্রায় ৫ লাখ আম ফ্রুট ব্যাগিং পদ্ধতিতে চাষ করেছেন। সংগঠনটির আশা অন্তত ৫০০ টন রফতানিযোগ্য আম তাঁরা উৎপাদন করবেন। এর মধ্যে ৩০০ টন রফতানি করতে চান তাঁরা।

ব্যাগিং করা হচ্ছে আম

রাজশাহী এগ্রো ফুড প্রডিউসার সোসাইটির প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি আনোয়ারুল হক এবার ৫০ হাজার আমে ব্যাগিং করেছেন। প্রতিটি আমের জন্য এতে খরচ পড়েছে পাঁচ থেকে সাত টাকা। আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, এবার আমরা আশায় বুক বাঁধছি যে আম রফতানি করা সম্ভব হবে।

আনোয়ারুল জানান, ২০১৬ সালে রাজশাহী থেকে প্রায় ৭০০ মেট্রিক টন আম ইউরোপে রফতানি হয়। কিন্তু পরের বছর থেকেই প্ল্যান কোয়ারেন্টিন উইং সেন্ট্রাল প্যাকিং হাউসে কড়াকড়ি শুরু হয়। কোয়ারেন্টিনের নামে ভালো আমকেও বাদ দেওয়া হয়। আমের ওপর প্রাকৃতিকভাবেই কিছু দাগ থাকে। সেগুলো দেখলেও আম আটকে দেওয়া হয়। এতে চাষিরা আগ্রহ হারিয়ে ফেলেন।

ফলে আম রফতানি কমে আসে। সর্বশেষ ২০১৯ সালে ৩৫ দশমিক ৭৫ মেট্রিক টন আম রফতানি হয়েছিল। করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবে গতবছর আম রফতানি একেবারেই কমে আসে। শুধু বাংলাদেশ ফ্রুটস ভেজিটেবলস অ্যান্ড অ্যালাইড প্রোডাক্টস এক্সপোর্টার অ্যাসোসিয়েশন ২১ মেট্রিক টন আম রফতানি করে।

আনোয়ারুল ইসলাম আরও জানান, তাঁদের সংগঠনে সদস্য সংখ্যা প্রায় ২০০ জন। কিন্তু গত কয়েকবছরে আম রফতানি না হওয়ায় সবাই এখন আর ব্যাগিং করতে উৎসাহ পান না। এ বছর বড়জোর ১৫ জন ব্যাগিং করেছেন। গোপালভোগ, তোতাপুরি, ল্যাংড়া, আম্রপালি ও হিমসাগর আম ব্যাগিং করা হয়েছে। কৃষি বিভাগ ও প্ল্যান কোয়ারেন্টিন উইং সেন্ট্রাল প্যাকিং হাউস সহায়তা করলে আম বাইরে যাবে। কোয়ারেন্টিন উইং সেন্ট্রাল প্যাকিং হাউস আগের মত কড়াকড়ি করবে না বলে জানিয়েছে।

রাজশাহীর বাঘা উপজেলার আম ব্যবসায়ী রাশেদুল ইসলাম রাজু বলেন, প্রথম বছর আম রফতানির পর এ পর্যন্ত বিদেশিদের কাছ থেকে কোনো অভিযোগ আসেনি। ভালো পরিচর্যার মাধ্যমে এবারও তিনি ফ্রুট ব্যাগিং পদ্ধতিতে আম চাষ করেছেন। আশা করছেন তিনি আম রফতানি করতে পারবেন।

বাঘার আরেক আম ব্যবসায়ী শফিকুল ইসলাম ছানা বলেন, ব্যাগিং করা আম রাসায়নিকমুক্ত। এর মানও ভালো হয়। তাই এবার আমরা আশা করছি যে ভালো ভাবেই আম রফতানি করা যাবে। তবে রফতানি না হলেও খুব বেশি সমস্যা নেই। কারণ, ব্যাগিং করা আমের চাহিদা দেশের ভেতরেও ভালো। অনেকে আছেন যে দাম একটু বেশি হলেও ভালো আম খেতে চান। তাঁরা ইতিমধ্যে আমাদের সাথে যোগাযোগ করছেন। অর্ডার দিয়ে রাখছেন।

রাজশাহী জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক কেজেএম আবদুল আউয়াল বলেন, প্রাথমিকভাবে ২০০ টন আম নিতে ২০ জন চাষি বাংলাদেশ ফ্রুটস ভেজিটেবলস অ্যান্ড অ্যালাইড প্রোডাক্টস এক্সপোর্টার অ্যাসোসিয়েশনের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হলেও তাঁরা এতো আম দিতে পারবেন বলে মনে হয় না। তাই অন্য চাষিদেরও আম দেওয়ার সুযোগ থাকবে।

তিনি আরও জানান, চাষিরা এক কেজি আমের জন্য সর্বনিম্ন ৭৫ টাকা থেকে একশো’র বেশি দাম পাবেন। গড়ে ১০০ টাকা দাম ধরলে রাজশাহীর অন্তত দুই কোটি টাকার আম রফতানি হবে।

এ সম্পর্কিত আরও খবর