অন্ধকার কক্ষে মোবাইলের টর্চের আলোয় রায় পড়েন বিচারক

ঢাকা, জাতীয়

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম | 2024-01-15 21:15:38

দীর্ঘ বিচারিক প্রক্রিয়া শেষে ১৪ বছর পর ২০০৪ সালের ২১ আগস্টের ভয়াল সেই গ্রেনেড হামলা মামলায় সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর ও সাবেক উপমন্ত্রী আব্দুস সালাম পিন্টুসহ ১৯ আসামির ফাঁসির আদেশ দিয়েছেন ট্রাইব্যুনাল। বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানসহ ১৯ জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত।

বুধবার (১০ অক্টোবর) পুরান ঢাকার নাজিমুদ্দিন রোডের পুরাতন কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে অবস্থিত ঢাকার ১ নম্বর দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের বিচারক শাহেদ নূর উদ্দিন এ রায় প্রদান করেন। বহুল আলোচিত এ মামলার রায় ঘোষণার সঙ্গে ১৪ বছরের অপেক্ষা অবসান ঘটল।

রায় ঘোষণার সময় অন্ধকারে ছিল আদালত কক্ষ। বুধবার বেলা ১১টা ৪০ মিনিটে রায় পড়া শুরু করেন বিচারক শাহেদ নূর উদ্দিন। জনাকীর্ণ আদালতে তখন  নীরবতার শুরু। ওই সময়েই আদালত কক্ষের বিদ্যুৎ চলে যায়। বিচারক শাহেদ নূর উদ্দিন রায় পড়া চালিয়ে যান। এসময় আদালতের একজন কর্মকর্তা মোবাইলের টর্চ বের করে আলো দিতে থাকেন। বাইরে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি হলেও ভ্যাপসা গরমে অতিষ্ঠ হয়ে উঠে কক্ষের পরিবেশ। এসময় ১১টা ৫৪ মিনিটে বিভিন্ন ধারায় আসামিদের দণ্ডঘোষণা শুরু করেন বিচারক শাহেদ নূর উদ্দিন। তিনি ১২টা ২০ পর্যন্ত রায় পড়ে শোনান।

 

এর মধ্যে একবার বিদ্যুৎ এলেও তিন মিনিট পরেই আবারো চলে যায়। দুই মামলার রায় ঘোষণা শেষে দুপুর সাড়ে ১২ টায় এজলাস থেকে নেমে যান বিচারক।

এর আগে সকাল থেকেই রায়ের খবর সংগ্রহে আসা সাংবাদিকরা অপেক্ষা করতে থাকেন আদালত চত্বরে। পুরো এলাকায় ছিল পুলিশের ব্যাপক উপস্থিতি। সোয়া ১০ টার দিকে আদালত প্রাঙ্গণে আসেন রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীরা। এরপর পর্যায়ক্রমে আসামিপক্ষের আইনজীবীরা ও বিচারক এসে উপস্থিত হন। ১১টা ১৮ মিনিটে এই মামলার আসামিদের এজলাসে তোলা শুরু করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। তাদেরকে সকালেই কাশিমপুর থেকে ঢাকার আলিয়া মাদ্রাসায় স্থাপিত আদালত প্রাঙ্গণে এনে রাখা হয়।

প্রথমে সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর, এরপর আবদুস সালাম পিন্টু, আইন শৃঙ্খলারক্ষাকারী বাহিনীর সাবেক কর্মকর্তারা ও সবশেষে জঙ্গী আসামিদের এজলাসে তোলা শুরু হয়। এসময় বাইরে গুঁড়িগুঁড়ি বৃষ্টি শুরু হয়। জঙ্গিদের পায়ে হাতে জড়ানো শেকলের শব্দে গুমগুম করে ওঠে সেখানকার পরিবেশ।

সাংবাদিকরা আদালত কক্ষে প্রবেশের পর বিচারক শাহেদ নূর উদ্দিন তার বক্তব্য রাখেন।

কোর্টের ভেতরে দেখা যায়, আসামিদের কাঠগড়ায় সবার সামনে দাঁড়িয়ে ছিলেন লুৎফরজামান বাবর, তারপাশে আবদুস সালাম পিন্টু, এনএসআইয়ের সাবেক দুই মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার (অব.) আবদুর রহিম ও মেজর জেনারেল (অব.) রেজ্জাকুল হায়দার, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আব্দুর রহিম, শহুদুল হক,খালেদা জিয়ার ভাগনে সাইফুল ইসলাম (ডিউক), ডিজিএফআইয়ের মেজর জেনারেল (অব.) এ টি এম আমিন ও লেফটেন্যান্ট কর্নেল (বরখাস্ত) সাইফুল ইসলাম জোয়ার্দার, পুলিশের সাবেক তিন মহাপরিদর্শক (আইজিপি) আশরাফুল হুদা, শহুদুল হক ও খোদা বকশ চৌধুরী, সাবেক অতিরিক্ত ডিআইজি খান সাইদ হাসান ও মো. ওবায়দুর রহমান

জোট সরকারের আমলে মামলার তিন তদন্তকারী কর্মকর্তা সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপার রুহুল আমিন, হানিফ পরিবহনের মালিক মো. হানিফ, মাওলানা আব্দুস সালাম, মোহাম্মদ আব্দুল মাজেদ ভাট ওরফে মো. ইউসুফ ভাট, আব্দুল মালেক ওরফে গোলাম মোহাম্মদ ওরফে জি. এম, মাওলানা শওকত ওসমান ওরফে শেখ ফরিদ, মহিবুল্লাহ ওরফে মফিজুর রহমান ওরফে অভি, মাওলানা আবু সাঈদ ওরফে ডা. জাফর, আবুল কালাম আজাদ ওরফে বুলবুল, মো. জাহাঙ্গীর আলম, হাফেজ মাওলানা আবু তাহের, হোসাইন আহম্মেদ তামিম, মঈন উদ্দিন শেখ ওরফে মুফতি মঈন ওরফে কাজা ওরফে আবু জানদাল ওরফে মাসুম বিল্লাহ ।

এছাড়াও রফিকুল ইসলাম ওরফে সবুজ ওরফে খালিদ সাইফুল্লাহ ওরফে শামিম ওরফে রাশেদ ও মো. উজ্জল ওরফে রতন।, শাহাদাৎ উল্লাহ ওরফে জুয়েল,মাওলানা আব্দুর রউফ ওরফে আবু ওমর আবু হোমাইরা ওরফে পীর সাহেব , মাওলানা সাব্বির আহমেদ ওরফে আব্দুল হান্নান সাব্বির, আরিফ হাসান ওরফে সুমন ওরফে আব্দুর রাজ্জাক, হাফেজ মাওলানা ইয়াহিয়া, আবু বকর ওরফে হাফেজ সেলিম হাওলাদার, মো. আরিফুল ইসলাম ওরফে আরিফসহ অন্যন্যরা।

পুলিশ বেষ্টিত জঙ্গি আসামিরা ছিলেন প্রাণবন্ত। কেউ নিজেদের মধ্যে গল্প করছিল, কেউ দরুদ পড়ছিল কারো মনোযোগ ছিল আদালতের কক্ষের জানালা দিয়ে বাইরের দিকে। রায় শোনার জন্য অনেকে উৎসুক হলেও বিদ্যুৎ না থাকায় বিচারকের কণ্ঠ শুনতে না পারায় কয়েকজনকে ফিসফাস করতে দেখা যায়। এদিকে রায় ঘোষণার সময় নিশ্চুপ দাঁড়িয়ে ছিলেন বাবর। পরে সে তার প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে নিজেকে নির্দোষ দাবি করেন।

রায় ঘোষণা শেষে আসামিদের আবারো কাশিমপুর কারাগারে নিয়ে যাওয়া শুরু হয়।

এ সম্পর্কিত আরও খবর