‘নানার ইচ্ছা ছিল গ্রেনেড হামলার বিচার দেখার’

রংপুর, জাতীয়

ফরহাদুজ্জামান ফারুক, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম | 2023-08-24 01:16:20

‘মায়ের হত্যাকারীদের বিচার দেখতে পেয়ে খুব খুশি হয়েছি। কিন্তু নানার খুব ইচ্ছা ছিল আমার মায়ের হত্যাকারীদের ফাঁসি দেখবে। আজ নানা বেঁচে থাকলে খুব খুশি হতেন। হয়তো আমাদেরকে জড়িয়ে ধরে ২১ আগস্টের ঘটনার দিনের মতো কান্না করতেন।’

অশ্রুসিক্ত কণ্ঠে এভাবেই কথাগুলো বলছিলেন ২০০৪ সালের ২১ আগস্টের দিন সংঘটিত গ্রেনেড হামলায় নিহত রংপুরের কাউনিয়া উপজেলার গঙ্গানারায়ণ গ্রামের আওয়ামী লীগ কর্মী রেজিয়া বেগমের ছেলে নুরুন্নবী মিয়া।

বুধবার (১০ অক্টোবর) দুপুরে গ্রেনেড হামলা মামলার রায় ঘোষণা করা হয়।

নুরুন্নবী বলেন, ‘দীর্ঘ ১৪ বছর ধরে আমরা আজকের দিনটার অপেক্ষায় ছিলাম। আমার মায়ের মৃত্যুতে যে শূন্যতা তৈরি হয়েছে তা কোনোদিনও পূরণ হবার নয়। যারা আমার মাকে হত্যা করেছে, তাদের সাজা দেখতে পেয়ে আমরা আনন্দিত। আমরা দুইভাইসহ পুরো পরিবার আজ অনেক খুশি।’

মনে অনেক দুঃখ জমে আছে, কেউ কথা রাখেননি এমন অভিযোগ তুলে নুরুন্নবী বলেন, ‘আমার মায়ের মৃত্যুর পর স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা প্রথম দুই বছর ২১ আগস্ট মৃত্যুবার্ষিকী পালন করেছে। কিন্তু পরে আর কেউ আমাদের খোঁজ নেননি। শুধু তাই নয়, স্থানীয় ইউনিয়ন ও উপজেলা পরিষদ থেকেও কোনো প্রকার সাহায্য সহযোগিতা করা হয়নি।’

প্রসঙ্গত, ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউতে আওয়ামী লীগের সন্ত্রাস বিরোধী সমাবেশে ভয়াবহ গ্রেনেড হামলায় ঘটনাস্থলেই মারা যান রেজিয়া বেগম। মেয়েকে হারিয়ে পাগল বাবা আফাজ উদ্দিন দুই বছর আগে চলে গেছেন না ফেরার দেশে। বর্তমানে রেজিয়ার ছেলে নুরুন্নবী মিয়া ও হারুন মিয়া চাষাবাদ করে সংসার চালাচ্ছেন।

নুরুন্নবীর দেয়া তথ্য মতে, রেজিয়া বেগম ঢাকার হাজারীবাগ এলাকায় বসবাস করতেন। আগারগাঁওয়ের ভারতীয় দূতাবাসে তিনি চুক্তিভিত্তিক কাজ করতেন। ঢাকা মহানগর হাজারীবাগ আওয়ামী লীগের নেত্রী আয়শা মোকারমের হাত ধরে রেজিয়া রাজনীতিতে নাম লেখান। দীর্ঘ একযুগেরও বেশি সময় ঢাকায় আওয়ামী লীগের মিছিল, মিটিং ও সমাবেশে সব সময় সামনে ছিলেন রেজিয়া। সেই ধারাবাহিকতায় ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউতে আওয়ামী লীগের সন্ত্রাস বিরোধী জনসভায় গিয়েছিলেন তিনি। সেখানে জনসভা চলাকালীন হঠাৎ ভয়াবহ গ্রেনেড বিস্ফোরণে রেজিয়াসহ অনন্ত ২৪ জনের মৃত্যু হয়। এ ঘটনার পরের দিন ২২ আগস্ট নিহত রেজিয়ার পরিবার মৃত্যুর সংবাদ পেয়ে ঢাকায় গিয়ে লাশ শনাক্ত করে এবং তাকে ঢাকা আজিমপুর কবরস্থানে দাফন করা হয়।

এদিকে হতদরিদ্র রেজিয়ার পরিবারকে ঘটনার পরেই ১ লাখ টাকা এবং ২০১৩ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ৮ লাখ টাকা প্রদান করেন। সেই টাকা দিয়ে জমি ক্রয় ও বন্ধক নিয়ে চাষাবাদ করে সংসার চালাচ্ছেন তারা।

এ সম্পর্কিত আরও খবর