দাবির মুখে অবার্থর টেকনোলজিকে ২২০ কোটি টাকা দিচ্ছে ইসি

ঢাকা, জাতীয়

ইসমাঈল হোসাইন রাসেল, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম | 2023-08-23 15:39:35

চুক্তির মেয়াদ শেষ হওয়া সত্ত্বেও নির্ধারিত সময়ে স্মার্টকার্ড তৈরির কাজ শেষ করতে না পারায় ফ্রান্সের প্রতিষ্ঠান অবার্থর টেকনোলজির কাছ থেকে ক্ষতিপূরণ আদায় করে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। তবে এবার প্রতিষ্ঠানটির দাবির মুখে প্রায় ২২০ কোটি পরিশোধ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে কমিশন। চলতি বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে পর্যায়ক্রমে এই অর্থ পরিশোধ করা হবে। আইডেন্টিফিকেশন সিস্টেম ফর এনহ্যান্সিং একসেস টু সার্ভিসেস (আইডিইএ) প্রকল্প থেকে বিশ্বব্যাংক সরে যাওয়ায় পুরো টাকাই বাংলাদেশ সরকারকে পরিশোধ করতে হবে।

ইসি সূত্রে জানা গেছে, নাগরিকদের স্মার্টকার্ড দিতে ২০১৫ সালে ফরাসি কোম্পানি অবার্থর টেকনোলজির সঙ্গে প্রায় ৮০০ কোটি টাকার চুক্তি করে কমিশন। সংস্থাটির সঙ্গে চুক্তির মেয়াদ শেষ হয়েছে গত বছরের জুনে। নির্ধারিত সময়ে স্মার্টকার্ড তৈরির কাজ শেষ করতে না পারাসহ নানা অভিযোগের মধ্যে নির্বাচন কমিশন এ চুক্তি আর নবায়ন করেনি। সে অবস্থায় গত বছরের আগস্ট থেকে নিজ উদ্যোগে স্মার্টকার্ড উৎপাদনে যায় ইসি। তবে চুক্তির শর্তপূরণ করতে না পারায় অবার্থর পক্ষ থেকে দেওয়া ব্যাংক গ্যারান্টির ১৩৯ কোটি টাকা বাজেয়াপ্ত করা হয়।

এদিকে বুধবার (১০ অক্টোবর) ইসির সঙ্গে অবার্থরের প্রতিনিধি দল ও ফ্রান্সের রাষ্ট্রদূত বৈঠকে বসে। ওই বৈঠকে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কে এম নূরুল হুদা, বাংলাদেশে নিযুক্ত ফ্রান্সের রাষ্ট্রদূতসহ উভয়পক্ষের উর্দ্ধতন কর্মকর্তারা অংশ নেন।

বৈঠক সূত্রে জানা গেছে, অবার্থর পক্ষ থেকে কমিশনের কাছে পাওনা হিসেবে ৪১ মিলিয়ন ডলার দাবি করা হয়। এ সময় কমিশনের পক্ষ থেকে প্রতিষ্ঠানটি চুক্তি অনুযায়ী যথাযথভাবে কাজ করতে পারেনি বলে ফ্রান্সের রাষ্ট্রদূতকে জানানো হয়। পাশাপাশি তাদের দেওয়া কার্ড নিয়েও বিভিন্ন অভিযোগ উপস্থাপন করা হয়। পরে ফ্রান্সের রাষ্ট্রদূতের মধ্যস্থতায় ২৬ মিলিয়ন ডলার ( প্রায় ২২০ কোটি টাকা) পরিশোধের সিদ্ধান্ত হয়। কমিশনও বিষয়টি মেনে নিলে এর সম্মানজনক সমাধান মেলে। চলতি বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে পর্যায়ক্রমে এই অর্থ পরিশোধ করা হবে।

এ বিষয়ে জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন অনুবিভাগের (এনআইডি উইং) মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ সাইদুল ইসলাম বার্তা২৪.কমকে বলেন, অবার্থরের সঙ্গে আমাদের সমাধান হয়ে গেছে। আমরা মূলত তাদের কিছু টাকা আটকে রেখেছি। পাওনা প্রায় ৪১ মিলিয়ন ডলার আমরা এখনো দেইনি। ২০১৭ সালে আসা কার্ডগুলোর টাকা দেবো-দেবো করে দেওয়া হয়নি। চুক্তির ৮০০ কোটি টাকার মধ্যে এই অর্থ তারা পাওনা ছিল।

ইতোপূর্বে ইসির পক্ষ থেকে তাদের কাছ থেকে ক্ষতিপূরণ নেওয়া হলেও এখন কেন তাদের অর্থ পরিশোধ করা হচ্ছে- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, পাওনা এক বিষয়, ক্ষতিপূরণ আলাদা বিষয়। মূলত প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে ব্যাংকের কাছে পেমেন্ট গ্যারান্টি রাখা হয়। সেই ব্যাংক থেকে আমরা টাকা আদায় করে নেই। সেটা হলো- ক্ষতিপূরণ। কিন্তু তারা কার্ডের যে টাকা পায় সেটা আমরা আটকে রেখেছি। সেই পেমেন্ট থেকে ৫৬ মিলিয়ন ক্লেইম করেছিল, এর মধ্যে তারা পায় ৪১ মিলিয়ন ডলার। কিন্তু আমরা দরকষাকষি করে ও তাদের ব্যর্থতা দেখিয়ে প্রায় ২৬ মিলিয়ন ডলারের সমঝোতায় এসেছি। এতে আমাদের ১৩৩ কোটি টাকা সাশ্রয় হবে। এই সাশ্রয় ও তাদের কাছ থেকে আদায় করা ক্ষতিপূরণ মিলিয়ে ২৫৩ কোটি টাকা সরাসরি সাশ্রয় হয়েছে আমাদের।

চলতি বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে পর্যায়ক্রমে এই অর্থ পরিশোধ করা হবে বলে জানান তিনি।

এ বিষয়ে ইসির অতিরিক্ত সচিব মো. মোখলেসুর রহমান বার্তা২৪.কমকে বলেন, ‘তাদের পাওনা-দাওনা আছে। এটা আইডিয়া প্রজেক্ট এবং ফ্রান্সের স্মার্টকার্ড প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান অবার্থর টেকনোলজিসের বিষয়। তাদের পাওনা টাকার বিষয়ে সমঝোতা আর কি। তারা কার্ডের টাকা পায় সেটি পরিশোধ করা করা হবে। তারা পাওনা টাকা চাইবে না?

নির্বাচন কমিশনের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৫ সালের জানুয়ারিতে ৯ কোটি ভোটারের হাতে স্মার্টকার্ড তুলে দিতে ফ্রান্সের কোম্পানি অবার্থর টেকনোলজিসের সঙ্গে চুক্তি করে কমিশন। ৮১৬ কোটি টাকার চুক্তি অনুযায়ী, স্মার্টকার্ড বিতরণের প্রক্রিয়া শুরু হয় ২০১৬ সালের অক্টোবরে। কিন্তু নানা জটিলতা দেখা দেওয়ায় একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে নিবন্ধিত এক কোটি ১৮ লাখের বেশি নতুন ভোটারকে আপদকালীন লেমিনেটেড এনআইডি কার্ড দেওয়ার ঘোষণা দেয় ইসি।

এ সম্পর্কিত আরও খবর