রাজধানীর মিরপুরের দেড় হাজার গ্রাহকের কাছ থেকে এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে ১০ কোটি টাকার গ্যাস, বিদ্যুৎ ও পানির বিল নিয়েছে ওমর ফারুকের এজেন্ট ব্যাংকিং প্রতিষ্ঠান ইন্টার্ন ব্যাংকিং অ্যান্ড কমার্স।
গ্রাহকদের কাছ থেকে দেড় বছরের পানি-বিদ্যুৎ-গ্যাস বিল নিয়ে জমা না দিয়ে আত্মসাৎ করেন ওমর ফারুক। এই দেড় বছর খোঁজও নেয়নি তিতাস কর্তৃপক্ষ। নিরবে ওমর ফারুক গ্রাহকদের ১০ কোটি টাকা আত্মসাৎ করে পালিয়ে যাওয়ার দেড় বছর পর তিতাস মাইকিং করে জানায় তারা বিল পায়নি।
সোমবার (৭ জুন) বিকেলে কারওয়ান বাজারে র্যাবের মিডিয়া সেন্টারে র্যাব-৪ এর অধিনায়ক অতিরিক্ত ডিআইজি মো. মোজাম্মেল হক আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান।
তিনি বলেন, তিতাসের বিল আত্মসাৎকারী ও জালিয়াতির মূলহোতা ফারুককে চট্টগ্রাম থেকে গ্রেফতার করেছে র্যাব-৪। তিনি মিরপুরের দেড় হাজার গ্রাহকের টাকা আত্মসাৎ করেছেন। ২০১৮ সাল থেকে রাজধানীর মিরপুর-২ এর ৬০ ফিট এলাকায় ‘ইন্টার্ন ব্যাংকিং অ্যান্ড কমার্স’ নামের একটি এজেন্ট ব্যাংকিং প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম পরিচালনা শুরু করেন এবং এই প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে ওই এলাকার প্রায় দেড় হাজার গ্রাহকের গ্যাস, পানি ও বিদ্যুৎ বিলের টাকা সংগ্রহ করতেন। কিন্তু গত দুই বছর ধরে ওমর ফারুক গ্রাহকদের গ্যাস বিলের ১০ কোটি টাকা জমা না দিয়ে আত্মসাৎ করেন।
তিনি আরও বলেন, চলতি বছরের জানুয়ারিতে মিরপুর এলাকায় তিতাস গ্যাস কর্তৃপক্ষ মাইকিং করে বকেয়া বিলের জন্য প্রায় দেড় হাজার গ্রাহকের গ্যাস সংযোগ বিচ্ছিন্ন করার প্রচারণা চালায়। মাইকিংয়ের পরই ভুক্তভোগী গ্রাহকরা প্রতারক ফারুক ও তার প্রতিষ্ঠান ইন্টার্ন ব্যাংকিং অ্যান্ড কমার্সের বিরুদ্ধে রাস্তায় নেমে আন্দোলন করেন এবং ঘটনাটি নিয়ে এলাকায় ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়।
পরে গ্রাহকদের মাঝে জানাজানি হলে গত ২৩ জানুয়ারি ইন্টার্ন ব্যাংকিং অ্যান্ড কমার্সসহ তিনটি অফিস তালাবদ্ধ করে তিনিসহ তার অন্য সহযোগীরা আত্মগোপনে চলে যান।
এ বিষয়ে কয়েকজন ভুক্তভোগী মিরপুর মডেল থানায় গত ২ ফেব্রুয়ারি ওমর ফারুকের বিরুদ্ধে একটি মামলা করে। এরপরই র্যাব-৪ এর গোয়েন্দা দল ওই মামলার ছায়াতদন্ত শুরু করে এবং প্রতারক ওমর ফারুকের অবস্থান শনাক্ত এবং গ্রেফতার করতে সমর্থ হয়।
ওমর ফারুক নোয়াখালী জেলার কবিরহাট থানার সাগরপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি স্থানীয় একটি স্কুল থেকে ২০০৯ সালে এসএসসি পাস করে ২০১৪ সালে ঢাকার মগবাজার এলাকায় এসে একটি বিকাশের দোকানে চাকরি শুরু করেন।
২০১৫ সালে মিরপুরের আহম্মেদনগর এলাকায় নিজে বিকাশের ব্যবসা শুরু করেন। প্রতারণার উদ্দেশ্যে প্রাথমিক পর্যায়ে তিনি বিভিন্ন ব্যাংকে পাঁচটির বেশি অ্যাকাউন্ট খোলেন। পরে ২০১৮ সালে মিরপুর-২ এর ১৩ নম্বর ওয়ার্ডের ৬০ ফিট এলাকায় ইন্টার্ন ব্যাংকিং অ্যান্ড কমার্স নামে একটি এজেন্ট ব্যাংকিং প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম শুরু করেন। এই প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমেই মিরপুর এলাকার গ্রাহকদের কাছ থেকে দেড় বছরের গ্যাস, পানি ও বিদ্যুৎ বিল বাবদ ১০ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়ে লাপাত্তা হন।
মোজাম্মেল হক বলেন, তার বিরুদ্ধে মানি লন্ডারিং মামলাও প্রক্রিয়াধীন। তিতাসের কেউ তার সহযোগী হিসেবে জড়িত কি-না তা খতিয়ে দেখছে র্যাব। যদি কেউ জড়িত থাকে তাহলে আমরা তিতাস কর্তৃপক্ষকে বিস্তারিত জানাব। প্রতারিত সবাই মামলা করলে ভবিষ্যতে তারা ক্ষতিপূরণ পেতে পারেন বলে তিনি জানিয়েছেন।