রাজশাহীতে কমেনি করোনার সংক্রমণ

, জাতীয়

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, রাজশাহী | 2023-08-26 02:09:22

রাজশাহীতে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ কমেনি। সীমান্তবর্তী এ জেলায় এখন প্রতিদিন সংক্রমণ ৪০ শতাংশের কাছাকাছি। ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট নিয়ে এ জেলায় করোনা পরিস্থিতি উদ্বেগজনক হলেও আমে ঝুলে আছে লকডাউন। বাগানে বাগানে থাকা আম পেড়ে বাজারজাত করার কারণে লকডাউন দিতে পারছে না প্রশাসন। তবে দু’দফা বিধি-নিষেধ আরোপ করেছে জেলা প্রশাসন।

এখন বিকাল ৫টা হলেই দোকানপাট বন্ধ করে দিতে হচ্ছে। পরদিন ভোর ৬টা পর্যন্ত থাকছে এই বিধিনিষেধ। বিকাল ৫টার পর থেকে পুলিশ তৎপর হচ্ছে যেন রাস্তাঘাটে কেউ না থাকেন। রাতে এ কড়াকড়ি চোখে পড়ছে আরও বেশি। কোথাও কোথাও রাতে লাঠি হাতে কঠোর অবস্থানে পুলিশ। প্রথম দুদিন জেলা প্রশাসাক আব্দুল জলিল নিজেই রাস্তায় নামেন নির্দেশনা মানাতে। পুলিশের বড় কর্মকর্তারাও থাকছেন মাঠে।

তাই বিকাল ৫টার পর ফাঁকা হতে শুরু করে নগরীর রাস্তা। সন্ধ্যার পর রাস্তায় যানবাহন চলাচল কমে যাচ্ছে। চায়ের দোকানের আড্ডা না থাকায় অনেকটা নীরবতা নেমে আসছে শহরে। তবে সারাদিনের চিত্রটা খুবই অস্বাভাবিক।দিনভর শহরে মানুষের হুড়োহুড়ি লেগেই আছে। ফলে কমছে না সংক্রমণ। ফলে হাসপাতালেও এখন রোগীর তীব্র চাপ, বাড়ছে মৃত্যুও।

সারাদেশে চলমান লকডাউনের মধ্যে গত ২ জুন প্রথম রাজশাহীতে বিধিনিষেধ আরোপ করে জেলা প্রশাসন। সেদিন বলা হয়, সন্ধ্যা ৭টায় বন্ধ করতে হবে দোকানপাট। কিন্তু পরে রাজশাহী ১৪ দল লকডাউনের দাবিতে জেলা প্রশাসককে স্মারকলিপি দেয়। এর প্রেক্ষিতে পরদিন ৬ জুন সভা করে জেলা প্রশাসন। সেদিন বিধিনিষেধ আরও দুই ঘণ্টা বাড়িয়ে বিকাল ৫টা করা হয়। সভা শেষে সিটি মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন জানান, দুই-আড়াই হাজার কোটি টাকার আমের কারণে রাজশাহীতে লকডাউন দেওয়া যাচ্ছে না। তাই বিধিনিষেধ বাড়িয়ে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করা হবে।

সেদিনই বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির রাজশাহী মহানগরের সাধারণ সম্পাদক দেবাশিষ প্রামাণিক দেবু ফেসবুকে দেওয়া এক স্ট্যাটাসে লিখেন, দুঃখের সাথে বলতে হচ্ছে মানুষের জীবনের চেয়ে আমের দাম বেশি। রাজশাহীতে সাত দিন লকডাউন দেওয়া উচিত। দেবুর এ কথা উপলব্ধি করা যায় দিনে রাজশাহী শহরের চিত্র দেখলে। দিনের বেলা এখন নগরীর ভয়ঙ্কর চিত্র। বাজারগুলো লোকে লোকারণ্য থাকছে। বাজার, মাঠ, বিপনী বিতার, খাবার হোটেল সবখানেই উপেক্ষিত হচ্ছে স্বাস্থ্যবিধি। আর বিধিনিষেধ কার্যকরে রাতে মাঠে থাকছে প্রশাসন।

আর সকাল হলেই মানুষ আবার বাজারমুখী। বুধবার সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, সাহেববাজার, গণকপাড়া, রেলগেট, লক্ষ্মীপুর, শালবাগান, রেল স্টেশন, বাস টার্মিনালসহ নগরীর প্রতিটি এলাকাতেই মানুষের ভিড়। কুরিয়ার সার্ভিসের সামনেও লেগে থাকছে জটলা। সেখানেও উপেক্ষিত স্বাস্থ্যবিধি। নগরীর বিভিন্ন এলাকায় দেখা গেছে যানজটও। মানুষও মানছেন না স্বাস্থ্যবিধি। অনেক ক্রেতা-বিক্রেতাকেও মাস্ক ছাড়া দেখা গেছে। টিসিবির পণ্য কিনতেও মানুষের দীর্ঘ লাইন দেখা যায়। মঙ্গলবার র‌্যাপিড এন্টিজেন টেস্ট প্রক্রিয়ায় করোনা পরীক্ষা ছাড়া টিসিবির পণ্য দেওয়া না হলেও বুধবার আগের মতই পরীক্ষা ছাড়াই পণ্য দেওয়া হয়েছে।

রাজশাহী নগরীর সাহেববাজার এলাকায় সবচেয়ে বড় শপিংমল আরডিএ মার্কেট ও তার আশপাশের দোকানগুলোতে পোশাক বিক্রি হচ্ছে ঠাসাঠাসি করে। সেখানে দোকানিদের মুখে মাস্ক থাকছে না। তবে সেখানে ক্রেতাদের অধিকাংশের মুখে মাস্ক দেখা গেছে। একটু ভিতরে এগোতে সব বিক্রতার মাস্কই দেখা গেছে থুতনিতে। কারও কারও আবার মাস্কই নেই। এসব দোকানে একটু ছাড়িয়ে ভিতরে পা ফেলার জায়গা নেই। স্বাস্থ্যবিধি অমান্যের সবচেয়ে আশঙ্কাজনক চিত্রের দেখা পাওয়া গেছে মাস্টারপাড়া কাঁচাবাজার এলাকায়। এ বাজারের খুব কম বিক্রেতার মুখেই মাস্ক দেখা গেছে। মাস্ক না পরার কারণ হিসেবে জিজ্ঞেস করতেই তারা বলে উঠছেন, গরমের কারণে তাঁরা মাস্কটি খুলে রেখেছেন। সবজি কিনতে আসা ক্রেতার মুখেও মাস্ক ছিল না।

রাজশাহীর সিভিল সার্জন ডা. কাইয়ুম তালুকদার বলেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে মাস্কই টিকা। মাস্ক পরা আর স্বাস্থ্যবিধি মানা ছাড়া করোনা থেকে বাঁচার কোনো উপায় নেই। অনেকে দুবার টিকা নেওয়ার পরও আক্রান্ত হয়েছেন। তিনি বলেন, করোনার এই পরিস্থিতিতে তাঁরা মানুষের স্বাস্থ্যবিধি মানার বিষয়টি পর্যবেক্ষণ করছেন। মাস্ক না পরলে, স্বাস্থ্যবিধি না মানলে খুব শিগগির আরও কঠোর বিধিনিষেধ আসবে।

রাজশাহী মহানগর পুলিশের (আরএমপি) মুখপাত্র অতিরিক্ত উপপুলিশ কমিশনার গোলাম রুহুল কুদ্দুস বলেন, বিকাল ৫টা থেকে ভোর ৬টা পর্যন্ত বিশেষ বিধিনিষেধ রয়েছে। এ সময়ে কাউকেই বাইরে থাকতে দিচ্ছেন না। তবে দিনের বেলায় তারা স্বাভাবিকভাবে মানুষকে সচেতন করে যাচ্ছেন। কঠোর কোনো সিদ্ধান্ত এলে আরও বেশি কড়াকড়ি করা হবে।

অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আবু আসলাম বলেন, মানুষ নির্দেশনা মানছেন না। তাঁদের বাধ্য করা হচ্ছে। বিকালের পর কঠোর বিধিনিষেধ নিশ্চিত করার জন্য সর্বাত্বক চেষ্টা করা হচ্ছে।

এ সম্পর্কিত আরও খবর