প্রাকৃতিক দুর্যোগে পার্বত্য রাঙামাটিতে ভয়াবহ পাহাড় ধসের আজ চার বছর। ২০১৭ সালের (১৩ জুন) এইদিনে টানা প্রবল বর্ষণের ফলে পাহাড় ধসে সেনাবাহিনীর ৫ জন সদস্যসহ ১২০ জনের নির্মম মৃত্যু হয়েছিল। সেদিনের স্বজন হারাদের আর্তনাদ এখনো বয়ে বেড়াচ্ছে রাঙামাটির বাতাস।
২০১৭ সালের ১৩ জুন শহরের মানিকছড়ি, শিমুলতলী, রূপনগর, আউলিয়া নগর, মুসলিম পাড়া, পোস্ট অফিস কলোনী, নতুন পাড়া, লোকনাথ ব্রহ্মচারী মন্দির, সনাতন পাড়া, চেঙ্গীমুখ, পুরাতন বাস স্টেশন এলাকা, মাতৃমঙ্গল এলাকাসহ জেলার কয়েকটি উপজেলায় পাহাড় ধসে ১২০ জন মারা যায়। কিন্তু এসব স্থানে পাহাড় ধসে মারা যাওয়ার পরও একই স্থানে লোকজন পাহাড়ের পাদদেশে ঝুঁকি নিয়ে বসবাস করছে। প্রবল বৃষ্টিপাত আবারও পাহাড় ধসের ঝুঁকির সম্ভাবনা রয়েছে। তবে বসবাসকারীরা জানিয়েছেন ঝুঁকির মধ্যে বসবাস করলেও তাদের অন্য কোথাও যাওয়ার স্থান নেই। তাই জীবনের ঝুঁকি হলেও তাদের থাকতে হচ্ছে।
এদিকে সেই ভয়াল দিন যাতে পুনরাবৃত্তি না ঘটে সে জন্য ইতোমধ্যে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। পাহাড় ধসের সম্ভাব্য পরিস্থিতি মোকাবিলায় ইতোমধ্যে রাঙামাটি শহরে ঝুঁকিপূর্ণ স্থানে বসবাস ও বাড়িঘর তৈরির নিষেধাজ্ঞা জারিসহ সাইন বোর্ড স্থাপন ও সচেতনামূলক লিফলেট বিতরণ করেছে রাঙামাটির জেলা প্রশাসন। ইতোমধ্যে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে রাঙামাটি শহরের ৩১টি স্থানকে ঝুঁকিপূর্ণ স্থান হিসেবে চিহিৃত ও ২৯টি আশ্রয় কেন্দ্র খোলা হয়েছে বলে জানা গেছে।
রাঙামাটির জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মিজানুর রহমান বলেন, ইতোমধ্যে ঝুঁকিপূর্ণ এলাকাগুলো চিহিৃত করা হয়েছে ও আশ্রয় কেন্দ্রগুলো প্রস্তুত রাখা, উপজেলাগুলোতে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির সভা নিয়মিত করা, পৌরসভায় ওয়ার্ড ভিত্তিক রেসপন টিম গঠন করে তাদের তালিকা ও মোবাইল নাম্বর জেলা প্রশাসনের ওয়েব সাইটে প্রকাশের পদক্ষেপসহ দুর্যোগ মোকাবিলায় প্রয়োজনীয় ত্রাণসামগ্রী মজুদসহ সার্বিক পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।
২০১৭ সালের বর্ষায় এক রাতেই জেলাজুড়ে পাহাড় ধসে প্রাণ গেল ১২০ জনের। ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে হাজার হাজার ঘরবাড়ি, রাস্তাঘাট, বিদ্যুৎ, পানি সরবরাহ ব্যবস্থাপনা বিকল হয়ে গিয়েছিল। যেটা পার্বত্য চট্টগ্রামের ইতিহাসে প্রথম। ২০১৮ সালে জেলার নানিয়াচরে পাহাড় ধসে প্রাণ গেল ১১ জনের এবং ২০১৯ সালে কাপ্তাই উপজেলায় পাহাড় ধসে প্রাণ হারায় আরও তিন জন।
ভয়াবহ পাহাড় ধসের সেদিনের ঘটনার পর পার্বত্য চট্টগ্রামবিষয়ক মন্ত্রণালয়, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়সহ একাধিক মন্ত্রণালয় কয়েকটি কমিটি করেছিল। এর কারণ অনুসন্ধানে এসব কমিটি কাজ করে। পাহাড় ধস বন্ধে কমিটিগুলোর প্রতিবেদনে অনেক সুপারিশও উঠে আসে। পাহাড় ধস বন্ধে সুপারিশগুলো এখনো দৃশ্যমান বাস্তবায়িত হয়নি বলে মৌখিকভাবে স্বীকার করলেও জনসম্মুখে এসে বিষয়টি নিয়ে পাহাড়ের দায়িত্বশীল কেউই কোনো কথা বলেননি।
এদিকে, পাহাড় বিশেষজ্ঞরা বলছেন, নির্বিচারে পাহাড় কেটে বসতি স্থাপন এবং বন-জঙ্গল ও গাছ উজাড়ের কারণেই পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলে পাহাড় ধসের ঘটনাগুলো ঘটছে।
দুর্যোগ বিশেষজ্ঞদের মতে, পাহাড়ের গায়ে জন্মানো বন-জঙ্গল এবং গাছপালা এর অভ্যন্তরীণ বন্ধন শক্ত রাখে। কিন্তু লোভী মানুষরা অব্যাহতভাবে পাহাড় কাটছে। অনেক ক্ষেত্রে দরিদ্র মানুষ বসতির প্রয়োজনেও পাহাড় কাটছে। এতেই পাহাড় ধ্বংসের পথ তৈরি হয়।