কোলের শিশুসহ বাবাকে থানায় নিয়ে গেল পুলিশ!

, জাতীয়

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, রাজশাহী | 2023-08-30 07:43:16

অসুস্থ বাচ্চার চিকিৎসা করাতে হাসপাতালে গিয়েছিলেন ওমর সিদ্দিক (৩৫)। কিন্তু তাঁর ‘অপরাধ’ তিনি একটি ওষুধ কোম্পানির আঞ্চলিক ব্যবস্থাপক। কেন তিনি হাসপাতালে এসেছেন, এ নিয়ে আনসার সদস্যদের সঙ্গে বাকবিতণ্ডা। তারপর তাঁকে তুলে দেওয়া হয়েছে পুলিশের হাতে।

রোববার (১৩ জুন) বেলা ১১টার দিকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে এ ঘটনা ঘটেছে। আটক ওমর সিদ্দিকের বাড়ি রাজশাহীর চারঘাট উপজেলার বরকতপুর গ্রামে। তিনি গ্যালাক্সি হেলথ কেয়ার লিমিটেড নামের একটি ওষুধ কোম্পানির আঞ্চলিক ব্যবস্থাপক। ওমর সিদ্দিকের সঙ্গে ওই কোম্পানির আরও দুইজনকে পুলিশে সোপর্দ করেছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।

তাঁরা হলেন- মেডিকেল রিপ্রেজেন্টেটিভ সোহেল রানা (৩০) ও সেলিম হোসেন (২০)। তাঁদের দুজনের বাড়ি চারঘাট উপজেলার ডাকরা গ্রামে। তাঁদের বিরুদ্ধে হাসপাতালে কর্তব্যরত আনসারদের মারধর ছাড়াও বহির্বিভাগে চিকিৎসা নিতে যাওয়া রোগীদের ব্যবস্থাপত্রের ছবি তোলার অভিযোগ আনা হয়েছে। তবে আটক তিনজন সেই অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।

বেলা ১১টার দিকে রামেক হাসপাতালের জরুরি বিভাগের সামনে দেখা যায়, ওমর সিদ্দিককে পুলিশের গাড়িতে তোলা হচ্ছে। তাঁর কোলে তখন শিশুসন্তান ছিল। আর ওমর সিদ্দিকের হাতে ছিল বহির্বিভাগে কাটা টিকিট এবং ওষুধের শিশি। থানায় নেওয়ার পর স্বজনদের কাছে বাচ্চাটিকে হস্তান্তর করা হয়েছে। তবে হাসপাতাল থেকে থানা পর্যন্ত বাচ্চাটা বাবার কোলেই ছিল।

নগরীর রাজপাড়া থানায় আটক অবস্থায় ওমর সিদ্দিক বলেন, তাঁর সন্তানের চর্মরোগ। চিকিৎসার জন্য তিনি হাসপাতালে গিয়েছিলেন। চিকিৎসককে দেখিয়েছেনও। হাসপাতাল থেকে ওষুধও নিয়েছেন। ফেরার পথে তাঁর কোম্পানির দুইজন মেডিকেল রিপ্রেজেন্টেটিভের সঙ্গে দেখা হয়। তাঁদের সঙ্গে দাঁড়িয়ে কথা বলছিলেন। তাঁরা ওষুধ কোম্পানিতে চাকরি করেন বলে হাসপাতালের আনসার সদস্যরা তাঁদের চেনেন। আনসার সদস্যরা গিয়ে তাঁদের বলেন, রিপ্রেজেন্টেটিভদের ভিজিটের সময় শুরুর আগেই কেন তাঁরা ভেতরে। তিনি বলেন, বাচ্চার চিকিৎসার জন্য গিয়েছেন। কিন্তু আনসার সদস্যরা তা বিশ্বাস করতে চাননি। তাঁরা বাগবিতণ্ডায় জড়ান।

এরই একপর্যায়ে একজন আনসার সদস্য ওমর সিদ্দিককে চড় মারেন। এতে বাচ্চাটা তাঁর কোল থেকে পড়ে যায়। এরপর অন্য দুই সহকর্মী বাচ্চাটাকে তোলেন। পরে তাঁদের ধরে হাসপাতাল পরিচালকের কাছে নিয়ে যাওয়া হয়। আনসার সদস্যরা উল্টো তাঁদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেন যে, তাঁরা নাকি রোগীদের ব্যবস্থাপত্রের ছবি তুলছিলেন। এ কথা শুনে হাসপাতাল পরিচালক তাঁদের পুলিশে দিতে বলেন।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে হাসপাতাল আনসারের প্লাটুন কমান্ডার মধু মিয়া কোন কথা বলতে চাননি। হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শামীম ইয়াজদানী বলেন, রোগীদের ব্যবস্থাপত্র একটা গোপন বিষয়। ওষুধ কোম্পানির লোকজন সেসবের ছবি তোলেন। এটা তো ঠিক নয়। তাই ওই তিনজনকে ধরে আমার কাছে আনা হয়। তিনজনের দাবি, তাঁদের আনসার সদস্যরা মারধর করেছেন। আর আনসার সদস্যদের দাবি, তাঁদের মেরে জামা ছিঁড়ে দেওয়া হয়েছে। সে কারণে আমি বিষয়টি পুলিশকেই দেখতে বলেছি। পুলিশ তাঁদের নিয়ে গেছে।

নগরীর রাজপাড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাজহারুল ইসলাম বলেন, কী হয়েছে সেটা তদন্ত ছাড়া বলা যাবে না। তবে আটক ব্যক্তিরা থানায় আছেন। বাচ্চাটাকে স্বজনদের কাছে দিয়ে দেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ মামলা করলে নেওয়া হবে। সে অনুযায়ী পরবর্তী পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে। আর মামলা না করলে আটকদের ছেড়ে দেওয়া হবে।

এ সম্পর্কিত আরও খবর