বেনাপোল-পেট্রাপোল রেলপথ সংস্কারের কাজ শুরু

, জাতীয়

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, (বেনাপোল) যশোর | 2023-08-31 21:23:41

করেনা কালিন সময়ে রেলপথে আমদানি বাণিজ্যের চাহিদা বাড়ায় অবকাঠামো উন্নয়ন কাজ শুরু করেছে রেল বিভাগ। বেনাপোল রেল রেল স্টেশন থেকে ভারতের পেট্রাপোল বন্দর পর্যন্ত রেল সড়কে চলছে সংস্কার ও ডাবল রেল লাইন স্থাপনের কাজ।

রেলপথে আমদানির চাহিদা বাড়লেও বিট্রিশ আমলের সংকীর্ণ আর জরাজীর্ণ রেলপথে মারাত্মক ভাবে ব্যহত হচ্ছিল বাণিজ্যক কার্যক্রম।

ব্যবসায়ীরা বলছেন, রেলের অবকাঠামো উন্নয়নের পাশাপাশি কন্টিনিয়ার টার্মিনাল স্থাপন হলে ভারতের সাথে আমদানি বাণিজ্য যেমন বহুগুন বৃদ্ধি পাবে তেমনি বর্তমান পরিস্থিতিতে করোনা সংক্রমণ ঝুঁকি কুমবে।

চলছে রেলপথ সংস্কারের কাজ

জানা যায়, প্রতিবেশী দেশ ভারতের সাথে বাংলাদেশের ১২ টি বন্দর দিয়ে রেল ও স্থলপথে আমদানি, রফতানি বাণিজ্য হয়ে থাকে। তবে যোগাযোগ ব্যবস্থা সহজ হওয়াতে একমাত্র বেনাপোল বন্দর দিয়েই স্থল এবং রেলপথে আমদানি বাণিজ্য ও পাসপোর্টধারী যাত্রী যাতায়াত হয়। ফলে এ বন্দরের গুরুত্ব অন্যান্য বন্দরের চাইতে বেশি। সড়ক পথে বাণিজ্যের ক্ষেত্রে কিছুটা অবকাঠামো উন্নয়ন হলেও ব্রিটিশ আমলে স্থাপন হয় এ রেলপথ। দেশ ভাগের পর বন্ধ হয়ে যায় রেলের কার্যক্রম।

পরবর্তীতে ২০০০ সালে পুরানো অবকাঠামোই আবার রেলে শুরু হয় আমদানি। তবে ফ্লাই অ্যাশ আর জিপসাম জাতীয় পণ্য আমদানির মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল বাণিজ্য। গত বছর করোনার শুরুতে সংক্রমণ রোধে ভারত সরকার স্থলপথে বেনাপোল বন্দর দিয়ে তিন মাস আমদানি, রফতানি বাণিজ্য বন্ধ রাখে। এতে ব্যবসায়ীরা মারাত্মক ভাবে অর্থনৈতিক ক্ষতির শিকার হয়। সরকারও বঞ্চিত হয় বিপুল পরিমাণের রাজস্ব থেকে। পরে ব্যবসায়ীদের দাবির মুখে রেলপথে সব ধরনের পণ্য আমদানি শুরু হয়।


কিন্তু ব্রিটিশ আমলের জরাজীর্ণ-সংকীর্ণ রেলপথে নানান প্রতিবন্ধকতায় চাহিদা মত পণ্য আমদানি বাণিজ্য ব্যহত হচ্ছিল। একটি কার্গো রেল বন্দরে প্রবেশ করলে জায়গার অভাবে আর একটি কার্গো রেল ভারত থেকে প্রবেশ করতে পারতো না। বিষয়টি নিয়ে ব্যবসায়ীরা সরকারের বিভিন্ন মহলে চাপ প্রয়োগ করলে অবশেষে প্রায় ৪ কোটি টাকা ব্যয়ে রেলের অবকাঠামো উন্নয়ন ও সংস্কার কাজ শুরু হয়। আগামী তিন মাসে নির্মাণ কাজ শেষ হবে।

বন্দরবাসী শাহিনুর রহমান ও সোহাগ হোসেন জানান, ব্রিটিশ আমলের রেল লাইনে বাণিজ্যও যাত্রী পরিবহন অনেকটা ঝুঁকি ছিল। রেল সংস্কার হচ্ছে এতে এলাকাবাসী খুশি। তবে গুরুত্বপূর্ণ সড়কের ওপর দিয়ে যাওয়া রেলপথে নিরাপদ যাতায়াতে রেল ক্রসিং নির্মাণ দরকার।

বেনাপোল সিঅ্যান্ডএফ এ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মফিজুর রহমান সজন জানান, চট্রগাম বন্দরের পর বেনাপোল বন্দরের অবস্থান। কদিন পর পদ্মা সেতু চালু হচ্ছে। বেনাপোলে বন্দরে রেল পথে বাণিজ্যের ক্ষেত্রে কন্টেইনার টার্মিনাল চালু হলে ভারতের সাথে আমদানি, রফতানি বহুগুন বৃদ্ধি পাবে। এছাড়া যেহেতু রেলপথে সব ধরনের পন্য বহনের সুযোগ রয়েছে তাই করোনা পরিস্থিতিতে সংক্রমণ রোধে ব্যবসায়ীদের রেল পথে বেশি বেশি পণ্য পরিবহনের জন্য  আহ্বান জানানো হয়েছে।

বেনাপোল বন্দরের উপ পরিচালক(ট্রাফিক) মামুন কবীর তরফদার বলেন, বর্তমান করোনা পরিস্থিতিতে রেলে বাণিজ্য যেমন অনেকটা নিরাপদ তেমনি সাশ্রয়ী। উন্নয়ন কাজ শেষ হলে রেলপথে রফতানিও চালুর পরিকল্পনা সরকারের রয়েছে।

বেনাপোল বন্দরের আমদানি-রফতানি সমিতির সহসভাপতি আমিনুল হক জানান, করোনার কারণে গত বছরে ব্যবসায়ীরা ভারতের পেট্রাপোলে কালিতলা ট্রাক পার্কিং সিন্ডিকেটের কাছে জিম্মী হয়ে পড়েছিল। রেল পথে সব ধরনের পণ্যেও আমদানি শুরু হওয়ায় সে জিম্মি দশা থেকে অনেকটা মুক্তি পেয়েছে। রেলে পরিধি বিস্তার হলে বাণিজ্য আরো প্রসার হবে।

বেনাপোল কার্গো রেল স্টেশন
 

যশোর রেল বিভাগের সহকারী প্রকৌশলী অলিউল হক জানান, প্রায় ৪ কোটি টাকা ব্যয়ে বেনাপোল রেল স্টেশন থেকে শুরু করে পেট্রাপোল বন্দর পর্যন্ত দুই কিলোমিটার পর্যন্ত পুরানো ব্রডগেজ রেল লাইন সংস্কার ও বেনাপোল বন্দরের দুই পাশে পণ্যবাহী কার্গো রেল দাড়ানোর জন্য দুটি অতিরিক্ত রেল লাইন স্থাপনের কাজ চলছে। আগামী তিন মাসের মধ্যে এসব উন্নয়ন কাজ সমাপ্ত হবে।

বেনাপোল রেল স্টেশন মাস্টার সাইদুর রহমান বলেন, জরাজীর্ণ রেল পথে বাণিজ্য ব্যহত হওয়ায় সরকার সংস্কারের উদ্যোগ নিয়েছে। পর্যাপ্ত ইয়ার্ড না থাকায় একটি কার্গো রেল বন্দরে প্রবেশ করলে আর একটি ভারত থেকে ঢুকতে পারতো না। এতে সময় মত পণ্য পরিবহন ব্যহত হতো। উন্নয়ন কাজ শেষ হলে এপথে বাণিজ্য যেমন বাড়বে তেমনি রাজস্ব আয়ও বৃদ্ধি পাবে। যানবাহন চলাচল ও এলাকাবাসীর নিরাপত্তায় ঝুঁকিপূর্ণ স্থানে রেল ক্রসিংয়ের আবেদন জানানো হয়েছে।

এসময় তিনি আরো বলেন, চলতি অর্থবছরের গত এক মাসে (মে) বেনাপোল বন্দরের রেলপথে ভারত থেকে আমদানি হয়েছে ৪৩ হাজার ৭৬৮ মেট্রিক টন বিভিন্ন ধরনের পণ্য। এ সময় আমদানি পণ্যের শুল্ককর বাদে শুধু রেলের ভাড়া বাবদই সরকারের রাজস্ব আয় হয়েছে ২ কোটি ২৬ লাখ ৮৪ হাজার টাকা।

এ সম্পর্কিত আরও খবর