শেষ মুহূর্তে প্রতিমায় চলছে রঙ তুলির ছোঁয়া

রংপুর, জাতীয়

ফরহাদুজ্জামান ফারুক, ডিস্ট্রিক করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম | 2023-08-28 20:08:05

সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সর্ববৃহৎ শারদীয় দুর্গোৎসবের রঙ ছড়িয়ে দিতে ব্যস্ত সময় পার করছে মৃৎশিল্পের দক্ষ কারিগররা। তাদের হাতের নিপুণ ছোঁয়া আর শেষ মুহূর্তে রঙ তুলির আঁচড়ে প্রাণবন্ত হয়ে উঠতে শুরু করেছে একেকটি প্রতিমা। মাটির তৈরি শৈল্পিক কারুকার্যের অলঙ্কারে ফুটে উঠছে দেবী দুর্গার সৌন্দর্য।

সোমবার (১৫ অক্টোবর) মহা ষষ্ঠীর মধ্য দিয়ে শুরু হবে বৃহৎ এই দুর্গোৎসবের আনুষ্ঠানিকতা। এ জন্য প্রতিমা সাজানোতে চলছে শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি। যেন দেবী দুর্গার আগমনে দম ফেলবার ফুসরত নেই মৃৎশিল্পীদের।

এদিকে প্রকৃতির চারপাশ জুড়ে মৃদু হাওয়ায় গা ভাসিয়ে দোল খাচ্ছে কাশফুল। কাশবনের উচ্ছলতাই জানিয়ে দিয়েছে দুর্গার আগমনী বার্তা। এ বছর দেবী দুর্গা ঘোটকে আগমন করে দোলায় করে গমন করবে।

অপরদিকে এ বছর রংপুর বিভাগে গত বছরের চেয়ে পূজা মণ্ডপের সংখ্যা বেড়েছে। রংপুর মহানগরসহ জেলার আটটি উপজেলায় প্রায় সহস্রাধিক পূজা মণ্ডপে দুর্গোৎসবের প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। এখন মণ্ডপ জুড়ে চলছে প্রতিমা স্থাপনসহ সাজসজ্জার কাজ।

রংপুর পূজা উদযাপন পরিষদের সূত্র মতে, এ বছর রংপুর বিভাগের ৮ জেলায় ৫ হাজার ২৬৫টি মণ্ডপে দুর্গোৎসবের প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। এর মধ্যে মেট্রোপলিটন এলাকা ব্যতীত রংপুর জেলায় ৭৩৪, গাইবান্ধায় ৬১০, কুড়িগ্রাম ৫২৫, লালমনিরহাট ৪৩২, নীলফামারী ৮৫৪, দিনাজপুরে ১২১৪, ঠাকুরগাঁও জেলাতে ৪৫৪ এবং পঞ্চগড়ে ২৭৫টি পূজা মণ্ডপ থাকবে। এছাড়াও রংপুর মহানগরে ১৬৭টি মণ্ডপে পূজা অনুষ্ঠিত হবে। এসব পূজা মণ্ডপের মধ্যে অধিক গুরুত্বপূর্ণ ১২৯০টি এবং গুরুত্বপূর্ণ ১৩৭৮টি মণ্ডপ রয়েছে।

সরেজমিনে নগরীর শ্রী শ্রী করুণাময়ী কালিবাড়ি, ধর্মসভা, গুপ্তপাড়া মন্দির, কলেজ রোড আনন্দময় সেবাশ্রমসহ বিভিন্ন এলাকার মন্দির ঘুরে দেখা গেছে, ছোট বড় সব মন্দিরেই এখন চলছে শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি। রঙ তুলির ছোঁয়ায় প্রতিমার আকর্ষণ বাড়ানোর পাশাপাশি দৃষ্টিনন্দন মণ্ডপ তৈরিতে অঘোষিত প্রতিযোগিতায় নেমেছে অনেকে।

আনন্দময়ী সেবাশ্রমে প্রতিমা তৈরির কাজ করছেন মৃৎশিল্পী মনোরঞ্জন পাল ও শ্যামল দত্তসহ কয়েকজন। এ সময় বার্তা২৪.কমের সঙ্গে কথা হয় মনোরঞ্জন পালের। তিনি বলেন, ‘গত বছরের তুলনায় এ বছর প্রতিমা তৈরির কাজ একটু বেশি। দুই সপ্তাহের বেশি সময় ধরে এ মণ্ডপে প্রতিমা তৈরির কাজ করছি। প্রতিমা দৃষ্টিনন্দন করতে দিনরাত কাজ হচ্ছে। এখন রঙ তুলির আঁচড়ে সাজানো হচ্ছে।’

মনোরঞ্জন পালের মতো এই জেলার অসংখ্য মৃৎশিল্পীর শৈল্পিক ছোঁয়ায় খড়, মাটি, পাট আর কাদায় তৈরি প্রতিমা উঠে দাঁড়াতে শুরু করেছে। এখন শেষ মুহূর্তে চলছে রঙের খেলায় পরিপাটি করে সাজানোর কাজটুকু।

উৎসবের প্রস্তুতি সম্পর্কে রংপুর জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক ধীমান ভট্টাচার্য্য বার্তা২৪.কমকে জানান, প্রতিমা নির্মাণ শিল্পীরা রাতভর পরিশ্রম করছেন। চলছে রঙ তুলির আঁচড়ের কাজ।

তিনি আরও জানান, পূজায় সর্বোচ্চ নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে প্রতিটি মণ্ডপে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের পাশাপাশি আনসার, কমিউনিটি পুলিশ ও স্বেচ্ছাসেবক নিয়োজিত থাকবে। এছাড়া সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থানে থাকবে পুলিশ, র‌্যাবসহ সাদা পোশাকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা।

রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ (আরপিএমপি) কমিশনার মুহাম্মদ আব্দুল আলীম জানান, প্রতিমা তৈরি কার্যক্রমের শুরুর দিক থেকেই নজরদারি রাখা হয়েছে। যাতে কোনো ধর্মীয় সম্প্রীতি নষ্ট না হয়। শারদীয় দুর্গোৎসব আনন্দমুখর পরিবেশে উদযাপন করার লক্ষ্যে প্রতিটি পূজা মণ্ডপে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।

অন্যদিকে বাংলাদেশ পুলিশের রংপুর রেঞ্জের ডিআইজি দেবদাস ভট্টাচার্য্য বার্তা২৪.কমকে জানান, দুর্গোৎসবকে ঘিরে কোনো ধরনের হামলা কিংবা অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটার আশঙ্কা নেই। প্রতিটি পূজা মণ্ডপের সর্বোচ্চ নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর প্রতিটি সদস্যকে নির্দেশ দেয়া রয়েছে।

এ সম্পর্কিত আরও খবর