ভুল চিকিংসায় ডা. তৌফিকের মৃত্যু: তিন চিকিৎসকের বিরুদ্ধে মামলা

, জাতীয়

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, ঢাকা | 2023-08-28 12:23:38

এভারকেয়ার হাসপাতালের মেডিকেল অফিসার ডা. তৌফিক এনামের চিকিৎসা অবহেলাজনিত মৃত্যু ও অর্থের জন্য তার মরদেহ আটকে রাখার অভিযোগে তিন চিকিৎসকের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে।

অভিযুক্তরা সবাই দেশের সেরা বেসরকারি হাসপাতালের নাম করা চিকিৎসক। এরা হলেন- কাকরাইল ইসলামী ব্যাংক সেন্ট্রাল হাসপাতালের কনসালটেন্ট ল্যাপারোস্কপিক সার্জন প্রফেসর ডা. আবদুল ওহাব খান, ল্যাবএইড হাসপাতালের গ্যাস্ট্রোএন্টারোলজিস্ট ডা. মামুন আল মাহতাব স্বপ্নীল ও বিআরবি হাসপাতালের হেপাটোবিলিয়ারি সার্জন প্রফেসর ডা. মোহাম্মদ আলী।

রোববার (২০ জুন) ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট রাজেশ চৌধুরীর আদালতে মামলাটি দায়ের করেন তৌফিক এনামের বাবা সিনিয়র ফিজিওথেরাপিস্ট আক্তারুজ্জামান মিয়া।

এদিন আদালত বাদীর জবানবন্দি গ্রহণ শেষে সিআইডিকে অভিযোগের বিষয়ে তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দিয়েছেন।

মামলায় এজাহার বলা হয়, গত ৪ মে ডা. তৌফিক এনাম অসুস্থ হলে ইসলামী ব্যাংক সেন্ট্রাল হাসপাতাল কাকরাইল শাখার ডা. আব্দুল ওহাব খানের কাছে চিকিৎসার জন্য নেন তার বাবা আক্তারুজ্জাান। এরপর তার অধীনে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে ধরা পড়ে রোগীর গলব্লাডারে পাথর জমেছে। ডা. আব্দুল ওহাব জানান,  ডা. তৌফিকের অপারেশন লাগবে। গত ৫ মে দ্রুততার সঙ্গে তার অপারেশন করেন ডা. আবদুল ওহাব। ৬ মে তাকে ছাড়পত্র দিয়ে বাসায় পাঠিয়ে দেন।

বাসায় আনার পর গত ৯ মে সন্ধ্যায় হঠাৎ তৌফিক অসুস্থ হয়ে পড়লে ডা. ওহাব খানের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। তিনি আবারও পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেন। এরপর রিপোর্ট দেখে এমআরসিপি করতে বলেন। এমআরসিপি করে তার কাছে রিপোর্ট নিয়ে গেলে তিনি জানান, অপারেশনের পর রোগীর কমন বিলেডাক্ট (common bileduct) চিকন হয়ে গেছে এবং অপারেশনের সময় একটি সমস্যা হয়েছে।

এর জন্য তিনি জরুরি ভিত্তিতে ল্যাবএইড হাসপাতালে ডা. মামুন আল মাহতাব স্বপ্নীলের সঙ্গে যোগাযোগ করতে বলেন।ল্যাবএইড হাসপাতালের ডা. স্বপ্নীলের সঙ্গে যোগাযোগ করে তৌফিকের পরিবার। তিনিও পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে দেখেন যে গলব্লাডার অপারেশনের সময় ভুল জায়গায় ক্লিপ লাগানো হয়েছে। এরপর ডা. স্বপ্নীল জেনেশুনে বেশি টাকার জন্য ইআরসিপি উইথ স্টেনটিং করে ব্যর্থ চেষ্টা করেন। যার কারণে রোগীর শারীরিক অবস্থার দ্রুত অবনতি হতে থাকে। এ সময় ডা. স্বপ্নীলকে বারবার ডেকেও পাওয়া যায় না। একপর্যায়ে তিনি জরুরি ভিত্তিতে বিআরবি হাসপাতালের প্রফেসর ডা. মোহাম্মদ আলীর কাছে পাঠান ডা. তৌফিককে।

ডা. মোহাম্মদ আলীর কাছে পাঠানো ডা. ওহাব ও ডা.স্বপ্নীল দুইজনের পরস্পর যোগসাজশ বলে দাবি করা হয়েছে এজহারে।

এজহারে বলা হয়, ডা. মোহাম্মদ আলী গত ১২ মে জরুরি ভিত্তিতে রোগীকে বিআরবি হাসপাতালে ভর্তি করান। এরপর ডা. আলী রোগীর স্বজনদের বলেন, রোগীর অবস্থা ভালো না জরুরি ভিত্তিতে অপারেশন করতে হবে। তার আগে যে দুইজন অপারেশন করেছেন সেখানে অবহেলা ছিল। জরুরি ভিত্তিতে তাকে অপারেশন করতে হবে অন্যথায় রোগীকে বাঁচানো যাবে না। বিআরবিতে চিকিৎসা করোনোর ইচ্ছা না থাকলেও ডা. তৌফিকের পরিবার বাধ্য হয়ে রাজি হন। তবে ২৭ মে অপারেশনের তারিখ ঠিক করলেও সময় ক্ষেপণ করে গত ৩০ মে ডা. তৌফিককে ডা. মোহাম্মদ আলীর মাধ্যমে বিআরবি হাসপাতালে অপারেশন করান।

প্রথমে তৌফিকের পরিবারকে জানানো হয় অপারেশনে তিন ব্যাগ রক্তের প্রয়োজন হবে। তিন ব্যাগ রক্ত সংগ্রহ করার পর আবারও ৪ ব্যাগ রক্তের প্রয়োজন বলে জানান ডা. মোহাম্মদ আলী। রক্ত না দিতে পারলে রোগীকে বাঁচানো যাবে না। এরপর হাসপাতালের ডাক্তার ও নার্সদের সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে ডা. তৌফিকের স্বজনদের কথা কাটাকাটি হয়। এক পর্যায়ে মামলার বাদী আক্তারুজ্জামান ও সাক্ষীদের সন্দেহ হলে রোগীকে ছাড়পত্র দেয়ার জন্য ডা. মোহাম্মদ আলীকে বারবার অনুরোধ করেন। কিন্তু তিনি টাকা আদায়ের জন্য ডা. তৌফিক মারা যাওয়ার পরও তাকে হাসপাতালে রেখে দেন।

কলাবাগান থানায় বাদী মামলা করতে চাইলে গ্রহণ না করে আদালতে মামলার পরামর্শ দেওয়া হয়। মামলার এজাহারে আসামিদের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির আবেদনও করা হয়েছে।

এ সম্পর্কিত আরও খবর