পানের বাটা ও কোলের সন্তানকে নিতে গিয়ে প্রাণ গেলো মা-মেয়ের

চট্টগ্রাম, জাতীয়

রকিব কামাল, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট,বার্তা২৪.কম | 2023-08-22 12:02:16

সরু পথ ধরে প্রবেশ করে কলোনির শেষ অংশে দেখা গেল পাহাড়ের পাদদেশ। সামনে যেতেই দেখা মিললো একটি বাড়ি, বাড়িটি ঘিরে উৎসুক জনতার ভিড়। সবার মুখে বিলাপ, আক্ষেপের সুর।

ভারাক্রান্ত হৃদয়ে অনেকেই জানালেন শনিবার রাতে ঘটে যাওয়া বিভীষিকাময় অভিজ্ঞতা। বলছিলাম নগরীর আকবর শাহ থানাধীন ফিরোজ শাহ কলোনির কথা। শনিবার (১৩ অক্টোবর) রাতে দেড়টায় প্রবল বর্ষণে পাহাড় ধসে মারা যান একই পরিবারের মা মেয়েসহ তিনজন।

মৃত্যুর এই মিছিলে ছিলেন, মা বিবি জোহরা, মেয়ে নূরজাহান ও তার কন্যা সন্তান ফয়জুন্নেছা। গতকালও যাদের বিচরণ ছিলো এই তল্লাটে। তবে তাদের এমন মৃত্যু কোনোভাবেই মানতে পারছেন না স্থানীয়রা। পুরো কলোনি জুড়ে শোকের ছায়া নেমেছে।

রোববার (১৫ অক্টোবর) দুপুরে ওই বাসায় পরিবারের অন্য কোনো সদস্যকে পাওয়া যায়নি। লণ্ডভণ্ড হয়ে এদিক- সেদিক পড়ে আছে ঘরের জিনিসপত্র। গ্রামের বাড়ি নোয়াখালীতে নিহতদের দাফনের জন্য নেওয়া হয়েছে। আর ফিরবেন কিনা তাও নিশ্চিত করতে পারেনি এলাকাবাসী।

প্রতিবেশীরা জানায়, দিনমজুর নুর আলমের পাঁচ মেয়ে। জীবিকার টানে সবাই নগরীর অলংকার মোড়ে ভিক্ষাবৃত্তি করেন। রাতে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টির মধ্যে নুর আলম মেয়েদের বাসায় নিয়ে আসতে অলংকার মোড়ে  ছুটে যান। বাসায় ছিল স্ত্রী বিবি জোহরা, বড় মেয়ে নূরজাহান ও তার দেড় বছর বয়সী কন্যা সন্তান ফয়জুন্নেছা।

নুর আলম যাওয়ার সময় বৃষ্টির মধ্যে তাদের বাসায় থাকতে নিষেধ করেন। রাত দেড়টায় প্রবল বর্ষণের সঙ্গে আচমকা পাহাড়ের পাদদেশ থেকে ধসে পড়তে থাকে মাটি। হুড়োহুড়ি করে মা মেয়ে বের হয়ে আবারও ঘরের থাকা পানের বাটা আনার জন্য ছুটে যান জোহরা বিবি। আর মেয়ে নূরজাহান ছুটে যান তার ঘুমান্ত সন্তান ফয়জুন্নেছাকে নিয়ে আসার জন্য।

ঠিক তখন-ই রাক্ষুসী পাহাড় ধসে মুহূর্তের মধ্যে মা-মেয়ে গভীর মাটির নিচে তলিয়ে যায়। অথচ কিছুক্ষণ আগে মায়ের বুকে জড়িয়ে ঘুমিয়ে ছিল ফয়জুন্নেছা।

নুর আলম মেয়েসহ বাসায় ফিরে এ দৃশ্য দেখে বারবার মূর্ছা যান। রোববার  সকালে সাড়ে আটটায় তাদের মরদেহ উদ্ধার করে ফায়ার সার্ভিস।

প্রতিবেশী জেবুন নাহার বার্তা২৪.কমকে বলেন, চারদিন আগে নোয়াখালী থেকে বেড়াতে আসে বিবি জোহরা। কলোনীর মধ্যে ছোট মেয়ের বাসায় রাতে ঘুমাতেন। কাল ছোট মেয়ের স্বামী বাড়ি থেকে আসায় রাতে এখানে ঘুমাতে আসে। এই ঘুমই তার চির ঘুম হবে কে জানত? 

প্রতিদিন খাওয়া শেষে রাত দুইটায় ঘুমাতে যায় নুর। আজ এই সময়ে চিরঘুমে চলে যায় তার স্ত্রী, বড় মেয়ে ও দেড় বছর বয়সী নাতনীও।

এ সম্পর্কিত আরও খবর