ভূমি অধিগ্রহণ জটিলতায় থমকে আছে ঢাকা-মাদারীপুর বরিশাল মহাসড়কের ৪ লেনে উন্নতি করণ কাজ। দেশের গুরুত্বপূর্ণ এই মহাসড়কটি ৪ লেনে উন্নতিকরণ করা হলে কমবে দুর্ঘটনা। উন্নত হবে দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের জীবনযাত্রার মান। কিন্ত এই দীর্ঘ দিনেও ভূমি অধিগ্রহণ কাজ শেষ হয়নি। এতে করে থমকে আছে দক্ষিণাঞ্চলের গুরুত্বপূর্ন এই জাতীয় মহাসড়কের ৪ লেন নির্মাণ কাজ। তবে আমলাতান্ত্রিক জটিলতার কথা অস্বীকার করে জেলা প্রশাসক জানালেন ৪ লেনের কাজ চলছে।
মাদারীপুর জেলা প্রশাসকের কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ঢাকা-ভাঙ্গা-বরিশাল মহাসড়কের প্রথম ধাপে নির্মিত হয়েছে ঢাকা থেকে ভাঙ্গা পর্যন্ত ৬১ কিলোমিটার দীর্ঘ এক্সপ্রেসওয়ে। ৪ লেনের সঙ্গে এ সড়কে যোগ হয় ধীরগতির যানবাহন চলাচলে দু’পাশে দুটি সার্ভিস লেন। কিন্তু দীর্ঘ এ সড়কের ফরিদপুর ভাঙ্গার মোড় থেকে গোপালগঞ্জের মুকসুদপুর-মাদারীপুরের রাজৈর, সদর উপজেলা ও কালকিনি উপজেলা হয়ে পটুয়াখালীর পর্যটন এলাকা কুয়াকাটা পর্যন্ত মহাসড়কের পুরোটাই সরু এবং বিভাজক না থাকায় ঘটছে অহরহ দুর্ঘটনা।
ধীর হয়ে যায় যানবাহনের গতি। ফলে এ সড়ক পাড়ি দিয়ে কুয়াকাটা পৌঁছতে দীর্ঘ সময় লাগে। এ সমস্যার সমাধান এবং পদ্মা সেতুর সুফল পেতে ভাঙ্গা থেকে কুয়াকাটা পর্যন্ত আধুনিক সড়ক নির্মাণের জন্য উদ্যোগ নেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সে অনুযায়ী ২০১৬ সালের শেষের দিকে শুরু হয় সড়ক নির্মাণের সমীক্ষার কাজ।
২০১৮ সালের ১১ অক্টোবর একনেকে অনুমোদন পায় এই প্রকল্পটি। এই প্রকল্পে শুধু জমি অধিগ্রহণের জন্য ১ হাজার ৮৬৭ কোটি ৮৫ লাখ ৯০ হাজার টাকা অনুমোদন দিয়েছিল জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদ ‘একনেক’। ২০২০ সালে ৩০ জুনের মধ্যে জমি অধিগ্রহণ শেষ করার নির্দেশনা ছিলো। কিন্তু নির্ধারিত মেয়াদ শেষ হলেও জমি অধিগ্রহণ শুরু হয়নি।
সড়ক ও জনপথ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, ভূমি অধিগ্রহণ শেষে সড়ক বিভাগকে জমি বুঝিয়ে দিলেই তারা টেন্ডার প্রক্রিয়া শেষে সড়কের নির্মাণ কাজ করতে পারবে। তবে জেলা প্রশাসকের কার্যালয় ভূমি অধিগ্রহণ শেষ না হওয়াতে থমকে আছে সরকারের এই গুরুত্বপূর্ণ এই প্রকল্পের নির্মাণ কাজ। এই মহাসড়কটির কাজ শেষ হলে এই অঞ্চলের মানুষের জীবন যাত্রারমান উন্নত হবে। কমবে দুর্ঘটনা, পণ্য পরিবহন করা সহজ হবে।
কুয়াকাটা থেকে মাছ বোঝাই করে ঢাকাগামী ট্রাক চালক মহিউদ্দিন বেপারী জানালেন, কুয়াকাটা হয়ে বরিশাল থেকে ভাঙ্গা পর্যন্ত ৪ লেন হয়ে গেলে, আমরা খুব সহজে কম সময়ে গাড়ি চালাতে পারবো। এতে দুর্ঘটনাও কমে যাবে। বরিশাল-ভাঙ্গা মহাসড়কটি দ্রুত ৪ লেন করার দাবি জানাচ্ছি। একই কথা বললেন, আরো বেশ কয়েকজন গাড়ি চালক। এদিকে মাদারীপুর সড়ক পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়নের সাবেক সহ-সভাপতি ফায়জুল শরীফ বলেন, মহাসড়কটি দ্রুত ৪ লেন করা হলে সড়ক দুর্ঘটনা একদমই কমে যাবে।
মাদারীপুর সচেতন নাগরিক কমিটির সদস্য এম.আর.মুর্তজা বলেন, আমরা দীর্ঘদিন ধরেই শুনে আসছি, ভাঙ্গা-বরিশাল মহাসড়কটি ৪ লেন হবে। কিন্তু এখনো মহাসড়কটি উন্নতিকরণের তেমন দৃশ্যমান অগ্রগতি চোখে পড়েনি। আমরা দাবী করছি, সকল আমলাতান্ত্রিক জটিলতা দূর করে অতিদ্রুত ভূমি অধিগ্রহণ করে ৪ লেন নির্মাণ কাজ শুরু করা হোক। তাহলে দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের জীবনমান বদলে যাবে।
মাদারীপুর সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, ভূমি অধিগ্রহণে একটু সময় বেশি লাগে তাই ভূমি অধিগ্রহণের জন্য আলাদা ডিপিপি প্রনয়ণ করা হয়েছে এবং ডিজাইন প্রনয়ণের কাজ চলছে। তবে জেলা প্রশাসকের কার্যালয় থেকে যতদ্রুত ভূমি অধিগ্রহণ করা শেষ হবে, ততো দ্রুত ৪ লেনের কাজ শুরু হবে।
তবে মাদারীপুর জেলা প্রশাসক ড.রহিমা খাতুন আমলাতান্ত্রিক জটিল ভূমি অধিগ্রহণ থমকে নেই জানিয়ে বলেন, ভূমি অধিগ্রহণের জন্য যৌথ তদন্ত শুরু হয়েছে। ভূমি অধিগ্রহণ কাজ শেষ হলেই পরবর্তী কাজ শুরু হবে। ভূমি অধিগ্রহণ একটি সময় সাপেক্ষ কাজ বলেও দাবী করলেন জেলা প্রশাসক ড.রহিমা খাতুন। তবে দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের প্রাণের দাবী অতিদ্রুত ভাঙ্গা-বরিশাল মহাসড়কটি ৪ লেনে উন্নতিকরণ করা হোক।