ঢামেকের মর্গে স্বজনদের খোঁজে

, জাতীয়

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, ঢাকা | 2023-09-01 17:51:35

কেউ বুকে ছবি নিয়ে দাঁড়িয়ে আছেন, কারো হাতে ছবি; কান্নায় ভেঙে পড়ছেন, আর কেউ পরিচয় হাতে দাঁড়িয়ে। কেউ বাবাকে খুঁজছেন, কেউ খুঁজছেন তার স্বামীকে, বাবা-মা খুঁজছেন তার বুকে ধন সন্তানকে। একের পর এক অ্যাম্বুলেন্স আসছে; ঘিরে ধরছেন স্বজনরা। এই বুঝি আমার বাবার মরদেহ এলো, এখুনি দেখতে পাব সন্তানদের পোড়াদেহ!

আগুন নেভানো চেষ্টায় ফায়ার সার্ভিস

বলছি ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে সামনের দৃশ্যের কথা। নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে সজীব গ্রুপের হাশেম ফুড অ্যান্ড বেভারেজ লিমিটেডের কারখানায় ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের পর ধ্বংসস্তুপ থেকে উদ্ধার করা মরদেহগুলো অ্যাম্বুলেন্সে করে আনা হচ্ছে ঢামেকে। সেখানে থেকে নেওয়া হচ্ছে মর্গে, পরিচয় পেলে তালিকা নাম উঠানো হচ্ছে। মরদেহ নিয়ে আসা অ্যাম্বুলেন্সকে ঘিরে স্বজনদের আহাজারিতে সেখানকার বাতাস ভারি হয়ে উঠেছে।

ঢামেকের মর্গে অগ্নিদ্বগ্ধ প্রিয়জনকে খুঁজতে দুপুর থেকে নারায়ণগঞ্জ থেকে আসা স্বজনরা ভিড় করছেন। তবে আগুনে পুড়ে কয়লা হওয়া অনেক মরদেহ কেউ শনাক্ত করতে পারছেন না। এজন্য ঢামেক কর্তৃপক্ষ এবং পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ-সিআইডির ডিএনএ ফরেনসি ল্যাবের কর্মীরা জানিয়েছেন ডিএনএ টেস্ট ছাড়া অনেক মরদেহ শনাক্ত করা সম্ভব হবে না। স্বজনদের অপেক্ষা করতে হবে ডিএনএ টেস্টের জন্য। আর এজন্য শুক্রবার থেকে সন্ধ্যা থেকে ডিএন টেস্টের নমুনা নেওয়া শুরু করেন তারা।

ভাইয়ের মরদেহের খোঁজে তানিয়া

ঢামেকের মর্গের সামনে ভাইয়ের ছবি নিয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছেন তানিয়া আক্তার। তার ছোট ভাই কারখানা কাজ করে পরিবারের জীবিকা নির্বাহে সাহায্য করতেন।

কিছুক্ষণ পর পর তানিয়া আহাজারি করে উঠছেন। কান্না জড়িত কণ্ঠে তানিয়া বলেন, আল্লাগো, আমরা ছোট ভাই! কই গেলি তুই। আমার ভাইকে আনায় দেন।

ছেলের খোঁজে মা

প্রত্যক্ষদর্শীরা বলছেন, বৃহস্পতিবার বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে হাসেম ফুডস লিমিটেডের সাত তলা ভবনের নিচ তলার একটি ফ্লোরে হঠাৎ করে আগুনের সূত্রপাত ঘটে। সময়ের সাথে সাথে আগুনের লেলিহান শিখা বাড়তে থাকে। একপর্যায়ে আগুন পুরো ভবনে ছড়িয়ে পড়ে। কালো ধোঁয়ায় গোটা কারখানাটি অন্ধকার হয়ে যায়। শ্রমিকরা ছোটাছুটি করতে শুরু করেন। কেউ কেউ ভবনের ছাদে অবস্থান নেন। জীবন বাঁচাতে ছাদ থেকেও কেউ কেউ লাফিয়েও পড়েন।

অ্যাম্বুলেন্সে করে ঢামেকে আনা হয় পোড়া দেহগুলো

বোনের খোঁজে ঢামেকে এসেছেন আমেনা বেগম। তিনি বার বার মুর্ছে যাচ্ছেন। ছবি হাতে নিয়ে ছোটাছুটি করে বোনের মরদেহ শনাক্ত করা চেষ্টা করছেন।

ফায়ার সার্ভিসের কর্মকর্তারা জানান, তারা প্রায় ২৪ ঘণ্টার চেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আনার পর ভবনের পঞ্চম ও ষষ্ঠ তলায় মরদেহ আছে কিনা তা দেখছেন। ঘটনা তদন্তে ফায়ার সার্ভিস, জেলা প্রশাসন এবং শ্রম মন্ত্রণালয়ের কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন বিভাগ পৃথক তদন্ত কমিটি গঠন করেছে।

ঢামেকের মর্গে আনা হচ্ছে মরদেহ

এর আগে বৃহস্পতিবার (৮ জুলাই) বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে ওই কারখানা ভবনের নিচতলায় আগুন লাগে। মুহূর্তেই আগুন ভবনের অন্যান্য তলায় ছড়িয়ে পড়ে। কারখানার ভেতরে বিভিন্ন রাসায়নিকসহ দাহ্য পদার্থ মজুদ থাকায় আগুন নিয়ন্ত্রণে হিমশিম খেতে হয়েছে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীদের। রূপগঞ্জের এই ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় এখন পর্যন্ত ৫২ জনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। ইতিমধ্যে ৪৯ জনের মরদেহ ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে।

এদিকে নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসকের পক্ষ থেকে এ ক্ষতিপূরণ দেয়া হবে বলে জানান অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক শামীম বেপারী।

তিনি বলেন, নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে হাশেম ফুড অ্যান্ড বেভারেজ লিমিটেডের কারখানায় ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় নিহতদের পরিবার পাবে ২৫ হাজার টাকা ক্ষতিপূরণ এবং আহতরা পাবে ১০ হাজার টাকা।

এ সম্পর্কিত আরও খবর