খসে পড়ছে ভবনের ছাদ, ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা

, জাতীয়

উপজেলা করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, রূপপুর | 2023-08-24 18:31:02

আগুনের ভয়াবহতা এতটাই ছিল যে, ভবনের নিচতলা থেকে তৃতীয় তলা পর্যন্ত সব পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। চতুর্থ, পঞ্চম ও ষষ্ঠ তলার জায়গায় জায়গায় ভেঙে পড়েছে। আগুনের তাপে ছাদগুলোর আস্তরণ খসে পড়েছে। উপরের তিন ফ্লোরের ছাদ জায়গায় জায়গায় দেবে গেছে।

ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে সেজান জুস কারখানার প্রতিটি ফ্লোরই ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ভবনের চতুর্থ, পঞ্চম ও ষষ্ঠ তলার তিনটি ফ্লোরই এখন ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে। পুরো ভবনটিকে ঝুঁকিপূর্ণ বলে ঘোষণা করেছে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তর। তবে ঝুঁকি নিয়েই ভবনে ডাম্পিংয়ের কাজ করছেন ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা।

ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক (অপারেশন অ্যান্ড মেইনটেনেন্স) দেবাশীষ বর্ধন বলেন, ভবনে দাহ্য পদার্থ বেশি থাকায় পরিপূর্ন আগুন নির্বাপণ করতে ৪৫ ঘণ্টা সময় লেগেছে। ভেতরে কোনো প্রকার ফায়ার সেফটি নেই। পুরো ভবনটি ত্রুটিপূর্ণ থাকায় অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় এত প্রাণহানি ঘটেছে। কারখানাটিতে ফায়ার সেফটি প্ল্যানের কোনো অনুমোদন ছিল না।

আগুনে পুড়ে রূপগঞ্জে সেজান জুস কারখানা

ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা বলছেন, ভবনটি এখন ঝুঁকিপূর্ণ। পঞ্চম ও ষষ্ঠ তলার ছাদ ও ফ্লোর নাজুক অবস্থায় রয়েছে। যেকোনো সময় এই ছাদগুলো ভেঙে পড়তে পারে।

ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (ডিজি) ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. সাজ্জাদ হোসাইন বলেন, ভবনটি বর্তমানে ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে। ভবনে কোনো ধরনের অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা ছিল না। ভবনের পরিধি অনুযায়ী সিঁড়ি রাখা হয়েছে মাত্র দুটি। তাও সরু। ভবনটিতে কোনো বহির্গমণ সিঁড়ি নেই। যে কারণে এত প্রাণহানি ঘটেছে।

শনিবার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত ভবনের পর্যবেক্ষণ করেন ইলেক্ট্রনিক সেফটি অ্যান্ড সিকিউরিটি অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ নামে একটি সংস্থা। তারা ভবনের বিভিন্ন অংশের পর্যবেক্ষণ করেন।

সংস্থাটির ভাইস প্রেসিডেন্ট প্রকৌশলী মোহাম্মদ মনজুর আলম বলেন, এই ভবনের নকশার অনুমোদনের আগেই ভবনটি নির্মাণ করা হয়েছিল। এটি মূলত সেন্ট্রাল স্টোর হিসেবে করা হয়েছিল। ভবনের ফায়ার সেফটির কোনো অনুমোদন নেই। ভেতরে আমরা পরিদর্শন করে কোথাও সামান্য এক্সটিংগুইশারও দেখিনি।

খসে পড়ছে ভবনের ছাদ

অপর দিকে, এ ঘটনায় ৩টি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। এর মধ্যে নারায়ণগঞ্জ অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) শামিম বেপারীকে প্রধান করে ৫ সদস্যর একটি, ঢাকা ফায়ার সার্ভিসের পরিচালক জুলফিকার রহমানকে প্রধান করে ৭সদস্য ও কারখানার পরিদর্শককে প্রধান করে ৩ সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি করা হয়েছে।

অগ্নিকাণ্ডের ঘটনার প্রথম দিনে নারীসহ তিনজনের লাশ উদ্ধার করা হয়। এরপর শুক্রবার বিকেলে ভবনের চারতলা থেকে ৪৯ জনের লাশ উদ্ধার করে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা। এ নিয়ে নিহতের সংখ্যা দাড়ালো ৫২ জনে। উদ্ধার হওয়া লাশ গুলো পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। চেনার কোন উপায় নেই। স্বজনরা চাইলেও লাশ দেখে শনাক্ত করতে পারবেন না। ডিএনএ টেস্ট ছাড়া লাশ শনাক্ত করা সম্ভব হবে না। তবে তিন সপ্তাহ পরে লাশ শনাক্ত হবে জানায় ফরেনসিক ডিপার্টমেন্ট কর্তৃপক্ষ।

জেলা পুলিশ সুপার (এসপি) জায়েদুল আলম বলেন, ভবনটি ক্রুটিপূর্ণ ছিল। এ ঘটনা পুলিশ বাদী রূপগঞ্জ থানায় ৮ জনকে আসামি করে হত্যা মামলা দায়ের করা হয়েছে। এ ঘটনায় চেয়ারম্যান আবুল হাসেমসহ ৮ জনকেই গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না।

থামেনি স্বজনের কান্না

থামেনি স্বজনের কান্না

এদিকে, এখন পর্যন্ত ৫৪ জনের কোন খোঁজ মিলেনি। নিহতের স্বজনরা দিকবিদিক হয়ে কারখানা ও বিভিন্ন হাসপাতালে খোঁজাখুঁজি করছেন। নিখোঁজরা হলেন, মহিউদ্দিন পিতা- গোলাম সাং ভোলা চরফ্যাশন, শামীম পিতা- ফকরুল সাং- ভোলা চরফ্যাশন, হাফেজা পিতা- ইসমাইল সাং- ভোলা, ফিরোজা বেগম পিতা -হাকিম আলী সাং- নারায়ণগঞ্জ, নাইম পিতা-তাহের উদ্দিন সাং করিমগঞ্জ সদর, কিশোরগঞ্জ, শাহিদা পিতা- স্বপন সাং- কিশোরগঞ্জ, কম্পা বর্মণ পিতা- পর্বা বর্মণ সাং মৌলভী বাজার সিলেট, রাকিব পিতা তাইজ উদ্দিন, খাদিজা পিতা কাইয়ুম, কিশোরগঞ্জ গ্রাম শেওরা, শান্তামনি পিতা জাকির হোসেন সাং নেত্রকোনা, অমৃতা বেগম পিতা স্বামী সেলিম, নবীগঞ্জ. আকিমা পিতা কাইয়ুম সাং কিশোরগঞ্জ, হিমা পিতা কবির হোসেন সাং খালিয়াঝুড়ি নেত্রকোনা, স্বপন পিতা মনকার রংপুর, শাহানা পিতা স্বামী মাহাতাব উদ্দিন, সাং কিশোরগঞ্জ জালিয়াপাড়া, আমেনা স্বামী রাজীব সাং গোলাকান্দাইল খালপাড়া, রূপগঞ্জ, মিনা খাতুন পিতা আব্দুর রশিদ, কিশোরগঞ্জ, ফাতেমা আক্তার, পিতা সূজন সাং কিশোরগঞ্জ, পারভেজ পিতা আহসান উল্লাহ মিজী, সাং হাইমচর চাঁদপুর, মাহবুব সেকশন ম্যানেজার পিতা গকুল সাং তেতুলিয়া বাঘা রাজশাহী, রিপন মিয়া- পিতা সেলিম মিয়া সাং গাজীপুর, নোমান মিয়া পিতা মান্নান মিয়া, সাং ভোলা চরফ্যাশন, নাজমা বেগম স্বামী আফজাল স্বামী আফজাল হোসেন সাং রূপগঞ্জ, মোহাম্মদ আলী পিতা শাহাদাত খান সাং হাটখালী, হুসাইন পিতা ফজলু সাং চরফ্যাশন ভোলা, জিহাদ মোঃ শওকত সাং জামালপুর, সেলিনা মো সেলিম সাং মিঠামইন কিশোরগঞ্জ, ফিরোজা মেয়ে সুমাইয়া সাং ভুলতা, রিমা স্বামী জসিম উদ্দিন সাং রূপগঞ্জ রাকিব পিতা কবির সাং চরফ্যাশন, ভোলা, ফারজানা পিতা : সুরুজ আলী, নাজমুল, পিতা চাঁনমিয়া সাং কিশোরগঞ্জ, তাছলিমা পিতা বাচ্চু মিয়া সাং কিশোরগঞ্জ, রাকিব সাং চরফ্যাশন ভোলা, আকাশ পিতা বাহার সাং নোয়াখালি, রাশেদ পিতা আবুল কাশেম সাং নোয়াখালি, বাদশা পিতা এনায়েত সাং ফরিদপুর, ইউসূফ, সাকিল, জাহানারা, রাহিমা, নূসরাত জাহান টুকটুকি, রাবেয়া, মাহমুদা, তাকিয়া আক্তার, ইসরাত জাহান, শাহানা, সাজ্জাদ হোসেন সজীব, লাবন্য আক্তার, করিমা, সুপান, আসিফ। সকলেই উপজেলার গোলাকান্দাইল এলাকা ও নতুন বাজার এলাকায় বিভিন্ন বাড়িতে ভাড়া থেকে ওই কারখানায় কাজ করতো।

এ সম্পর্কিত আরও খবর