প্রতিবছরের ন্যায় এবারও ঘনিয়ে এসেছে ঈদুল আজহার (কোরবানি ঈদ) সময়। এই ঈদকে সামনে রেখেই সারা বছর ব্যাপী খামারিরা আলাদা যত্ন নিয়ে গরু মোটাতাজা করে, আর দিন গোনে কোরবানির ঈদের জন্য। বছর ধরে গরু লালন পালন করার পর এই ঈদে ক্রেতার কাছে বিক্রি করে দুই পয়সা লাভের আসায়।
কিন্তু সময়ের পরিক্রমায় খামারিদের কপালে নেমে এসেছে দুশ্চিন্তার ভাঁজ। পুরো পৃথিবীসহ দেশে মহামারি করোনাভাইরাস প্রতিনিয়ত বৃদ্ধি পাওয়ায় সংক্রমণ রোধে সরকার দিয়েছে কঠোর লকডাউন। যার ফলে অনেক দিন ধরেই বসছে না গরুর হাট। তাই সরকার ডিজিটাল হাটের ব্যবস্থা করেছে কিন্তু বেশিরভাগ খামারি'ই বোঝেনা অনলাইনে গরু বিক্রির পন্থা। এই জন্য দেশের প্রায় সব খামার মালিকরা দুশ্চিন্তায় আছেন।
বুধবার (১৪ জুলাই) রাজধানী ঢাকা এবং ঢাকার বাইরে বেশ কয়েকটি গরু মোটাতাজাকরণ খামারিদের সাথে কথা হলে তারা এমনটি জানিয়েছেন।
রাজধানীর যাত্রাবাড়ীর খামার মালিক মহসিন আলম বলেন, আমরা খুব চিন্তায় আছি। আর মাত্র ৫-৬ দিন সময় আছে ঈদের। খামারে আমার গরু আছে ২২টি। তবে এখনও একটি গরুও বিক্রি করতে পারিনি, জানিনা কপালে কি আছে।
তিনি আরও বলেন, বিগত ঈদ গুলোতে ঈদের এক মাস আগে থেকেই গরু বিক্রি শুরু করতাম। আর এই ঈদের সময় আছে মাত্র ৫-৬ দিন। এবার আমার গরু বিক্রি করতেই হবে, দাম কম হোক বা বেশি।
অনলাইনে বিক্রি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আসলে গরু বিক্রি করার জন্য অনলাইন না। আমাদের মতো খামারি কয়জন অনলাইন বোঝে? শতকরা ২ থেকে ৪ জন। কোনো খামারি সরাসরি অনলাইন থেকে বিক্রি করতে পারে না। গত ঈদে এই করোনা ভাইরাসের সময় একটি পার্টি আমার কাছ থেকে কম দামে গরু কিনে তারা অনলাইনে নাকি অনেক দামে বিক্রি করেছে। আমরা তো বুঝি না কিভাবে অনলাইনে বিক্রি করতে হয়।
রাজধানীর বাইরে বগুড়া এবং সিরাজগঞ্জের কয়েকটি খামার মালিকের সাথে কথা হলে তারা বলেন, আমাদের বছর ধরে দেখা স্বপ্ন এবার ধূলিসাৎ হওয়ার সম্ভাবনা। সময় তো আর নাই, ঈদ চলে এসেছে, সব হাট বন্ধ, এখনো গরু বিক্রি করতে পারিনি। এবার ঈদের এই পাঁচ দিন সময়ের মধ্যে ক্রেতারা যে দাম বলবে সেই দামেই বিক্রি করতে হবে। বাজার যাচাই করারও কোন সুযোগ বা সময় নাই। এবার অনেক টাকা লস হওয়ার সম্ভাবনা আছে। কি হবে কিছু বলতে পারছিনা।
অনলাইনে বিক্রি সম্পর্কে তারা বলেন, আমরা নিজে কখনো অনলাইনে বিক্রি করিনি, কিভাবে বিক্রি করতে হয় সেটাই বুঝিনা।
তারা আরও বলেন, গত বছর কোরবানির ঈদের সময় ঢাকা থেকে কিছু ছাত্র এসেছিলো আমাদের কাছ থেকে গরু কিনতে। তারা নাকি অনলাইনে বিক্রি করবে কিন্তু তারা অনেক কম দাম বলে। লাখ টাকার গরুর দাম বলে ৮০-৮৫ হাজার টাকা। এই দামে বিক্রি করা সম্ভব না। আমরা হাটে তুলেই গরু বিক্রি করব, অনলাইন হাট আমরা বুঝি না।
উল্লেখ্য, করোনা সংক্রমণ রেধে অনলাইনের মাধ্যমে হাটে না গিয়ে ঘরে বসেই যাতে গরু কেনা যায় তাই সরকার ডিজিটাল কোরবানির পশুর হাট এর ব্যবস্থা করেছে।