টিকার নিবন্ধন করতে গিয়ে হাবিবুর জানলেন তিনি মৃত!

, জাতীয়

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, যশোর | 2023-09-01 08:45:33

কোভিডের প্রতিষেধক টিকার জন্যে নিবন্ধন করতে গিয়ে মো. হাবিবুর রহমান জানতে পারলেন ১১ বছর আগে তিনি মারা গেছেন। এখন তাকে প্রমাণ করতে হবে তিনি এখনো বেঁচে আছেন। তাকে নির্বাচন কমিশন বরাবর এমনই আবেদন করতে হবে। তবে তার জাতীয় পরিচয়পত্র সংশোধিত হবে।

জানা যায়, শার্শা উপজেলার বাগআঁচড়া গ্রামের মো. হাবিবুর রহমান ২০০৮ সালের ২১ মে তারিখে তার জাতীয় পরিচয়পত্র পান। তার পিতার নাম আলমগীর কবীর এবং মাতার নাম হামিদা খাতুন। তার কাছে থাকা বর্তমানের জাতীয় পরিচয়পত্র অনুযায়ী ১০ জুন ১৯৮১ সালে জন্ম। কার্ড নং-৪১১৯০১৩৬৪৪০০১ এতদিন বিভিন্ন জায়গায় এই জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি কার্ড) দিয়েই প্রয়োজন মেটাতে সক্ষম হয়েছেন।

বর্তমানে করোনার প্রকোপ বৃদ্ধি পাওয়ায় কোভিডের টিকা পাওয়ার জন্য সুরক্ষা অ্যাপের মাধ্যমে অনলাইনে নিবন্ধন করার চেষ্টা করেন। গত তিনদিন ধরে যখনই নিবন্ধন করার চেষ্টা করেন তখনই ব্যর্থ হতে থাকেন। অনলাইনে তার নাম, কার্ড নং, জন্ম তারিখের নির্ধারিত ছক পূরণ করার পরও কোনও তথ্য না আসায় প্রথমে চিন্তা করেন সার্ভার গঠিত সমস্যা। তখন বিভিন্ন সময়ে একাধিকবার চেষ্টা করেও নিবন্ধন সম্পন্ন করতে ব্যর্থ হন। এরপর যশোর শহরে যারা অনলাইনের দোকনের মাধ্যমে কাজ করান সেখানেও কয়েকটি প্রতিষ্ঠানে তার জাতীয় পরিচয়পত্র ব্যবহার করে টিকার জন্যে নিবন্ধনের চেষ্টা করেও সমস্যা ধরতে ব্যর্থ হন।

এক পর্যায়ে তিনি জেলা নির্বাচন অফিসের মাধ্যমে তার এনআইডি কার্ডের সমস্যা জানার চেষ্টা করেন। সেখান থেকে জাতীয় পরিচয়পত্রের সার্ভারের মাধ্যমে জানা যায়, সার্ভারে তাকে ২০০৯ সালে মৃত দেখানো আছে। অর্থাৎ, প্রায় ১২ বছর আগে তিনি মারা গেছেন বলে সার্ভার থেকে তার সমস্ত তথ্য সাধারণভাবে প্রকাশিত হচ্ছে না। এ কারণে টিকা নিবন্ধনের অনলাইন আবেদনের ফরমে কোনো তথ্য প্রদর্শিত হচ্ছে না।

 এ বিষয়ে হাবিবুর রহমান রিপন জানান, তাকে ২০০৮ সালে এই জাতীয় পরিচয়পত্র দেওয়া হয়েছে। তিনি লেখাপড়া শেষ করেছেন। ব্যক্তি উদ্যোগে ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করছেন। তবে তিনি বিস্ময় প্রকাশ করে বলেন, আমি তো এখনো জীবিত রয়েছি, তাহলে কোনো প্রমাণ ছাড়া জাতীয় পরিচয়পত্রের তথ্যে কীভাবে আমি মারা গেলাম ?

জেলা নির্বাচন অফিসের একটি সূত্রের দাবি- ২০০৯ সালে ভোটার হালনাগাদ করার সময় মাঠ পর্যায়ের তথ্য সংগ্রহকারী কর্মী হয়তো ভুল করেছেন। নির্দিষ্ট ফরম পূরণ করার সময় হয়তো ওই কর্মী জীবিত/মৃত এ জাতীয় ঘরে ভুলভাবে পূরণ করেছেন সেটা সার্ভারে সংরক্ষিত হয়েছে। এরপর কোনো কাজে হয়তো এনআইডি কার্ড যাচাইয়ের কাজ পড়েনি। ফলে এতোদিন এই ভুল ধরা পড়েনি।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে জেলা নির্বাচন অফিসার মো. হুমায়ুন কবীর বলেন, কিছু সমস্যা কোথাও কোথাও হতে পারে। এখন ওই ব্যক্তি শার্শা নির্বাচন অফিসে একটি আবেদন করতে পারেন বর্তমান কার্ডের ফটোকপিসহ। একই সাথে সংশ্লিষ্ট ইউনিয়ন চেয়ারম্যানের দেওয়া সনদ জমা দিতে হবে। পরে নির্বাচন অফিস একটি তদন্ত সাপেক্ষে প্রতিবেদন জাতীয় পরিচয়পত্র অধিদপ্তরে জমা দিতে কিছুদিনের মধ্যে ঠিক হয়ে যাবে।

এই ভোগান্তির জন্যে কারা দায়ী, তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া যাবে কি-না এমন প্রশ্নের জবাবে জেলা নির্বাচন অফিসার জানান, ভুলতো মানুষেরই। যদি সেখাবে খুঁজতে চাওয়া হয় তাহলে ২০০৯ সালে সংশ্লিষ্ট স্থানে কে তথ্য সংগ্রহকারী ছিলো, কে সুপারভাইজার ছিলো, তারা কোনো তথ্য জমা দিয়েছে। সেটা কীভাবে লিখিত হয়েছে, বহু কিছু খুঁজতে হবে। তিনি পরামর্শ দেন আপাতত আবেদনপত্র জমা দিক, আশা করি আর সমস্যা হবে না।

এ সম্পর্কিত আরও খবর