রাঙামাটিতে ১১কেভি লাইনে জ্বলসে গেল শ্রমিক

, জাতীয়

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, রাঙামাটি | 2023-08-31 12:16:32

নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে বিদ্যুতায়নের কাজ করতে গিয়ে রাঙামাটির বেতবুনিয়াস্থ হেডম্যানপাড়া এলাকায় এক বিদ্যুৎ শ্রমিক ১১ হাজার কেভি বিদ্যুতের তারে জড়িয়ে জ্বলসে গেছে। আহত শ্রমিক ফরহাদ বর্তমানে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে চিকিৎসাধীন আছেন। তার বাড়ি চট্টগ্রামের হাতিয়ায় বলে জানাগেছে।

বৃহস্পতিবার (১৫ জুলাই) দুপুরে এই দুর্ঘটনা ঘটে। জানা যায়, “তিনটি পার্বত্য জেলায় বিদ্যুৎ বিতরণ ব্যবস্থার উন্নয়ন প্রকল্প” নামক এই বিদ্যুতায়ন প্রকল্পের সংশ্লিষ্ট ইঞ্জিনিয়ার ও ঠিকাদারের গাফিলতিতে এই  দুর্ঘটনা ঘটেছে।

ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান সুরুজ এন্ড সন্স'র স্বত্বাধিকারী মহিউদ্দিন দুর্ঘটনার পর জানিয়েছেন, কাউখালীর আবাসিক প্রকৌশলীর কাছ থেকে সময় চেয়ে লাইন শাটডাউন করেই তার শ্রমিকরা কাজ করছিলো। কিন্তু ১৫ থেকে ২০ মিনিট পরেই লাইনটি চালু করে দেয়ায় এই দুর্ঘটনা হয়। এক প্রশ্নের জবাবে ঠিকাদার স্বীকার করেন, উক্ত কাজের সময় সেখানে তিনটি পার্বত্য জেলায় বিদ্যুৎ বিতরণ ব্যবস্থার উন্নয়ন প্রকল্পের কোনো প্রতিনিধি প্রকৌশলী উপস্থিত ছিলেন না।

বিষয়টি একেবারেই জানানো হয়নি বলে অভিযোগ করেন উক্ত এলাকার দায়িত্বে থাকা কাউখালীর আবাসিক প্রকৌশলী মো.লাহুরি খান। তিনি অভিযোগ করেন, সম্পূর্ণ অনৈতিক সুবিধা নিয়েই বিশেষ কারো ফায়দা হাসিলের লক্ষ্যে ঠিকাদার মহিউদ্দিন নিজেই পরীক্ষা-নিরীক্ষা ছাড়াই আমাদের পুরাতন ১১ হাজার কেভির লাইন থেকে নতুন লাইনে সংযোগ তার লাগানোর চেষ্টা করেছেন। যার ফলে সাথে সাথেই সংশ্লিষ্ট শ্রমিক ফরহাদ বিদ্যুতায়িত হয়ে জ্বলসে যায়। নিশ্চিত মৃত্যু হতে পারে এটি জেনেও এই ধরনের একটি দুর্ঘটনা ঘটানোয় সম্পূর্ণ দ্বায় উক্ত ঠিকাদারই বহন করবে। আর বিষয়টি লিখিতভাবে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছেন বলেও প্রতিবেদককে জানিয়েছেন তিনি।

এদিকে, “তিনটি পার্বত্য জেলায় বিদ্যুৎ বিতরণ ব্যবস্থার উন্নয়ন প্রকল্পের প্রজেক্ট ডিরেক্টর উজ্জল বড়ুয়ার সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, একটি দুর্ঘটনার কথা আমি শুনেছি। বিষয়টি নিয়ে সংশ্লিষ্ট নির্বাহী প্রকৌশলী সাইফুল ইসলামের সাথে যোগাযোগ করুন এমন মন্তব্য করেই সংযোগটি বিচ্ছিন্ন করে দেন।

পরবর্তীতে বিষয়টি নিয়ে জানতে চাইলে প্রকৌশলী সাইফুল ইসলাম প্রতিবেদককে বলেন, দুর্ঘটনায় একজন শ্রমিক আহত হয়েছে তবে সে আমাদের বিদ্যুৎ বিভাগের লোক নয়। আহত শ্রমিক ঠিকাদারের লোক। সেখানে প্রকল্পের কোনো উপ-সহকারী প্রকৌশলী উপস্থিত ছিলোনা কেন? এমন প্রশ্নের জবাবে প্রকৌশলী সাইফুল ইসলাম জানান, আমাদের একজন মাত্র লোক রয়েছে, আর সাইট চলছে ১৫টি তাহলে সে একা এতগুলো কাজের সাইডে কিভাবে তদারকি করবে?

“তিনটি পার্বত্য জেলায় বিদ্যুৎ বিতরণ ব্যবস্থার উন্নয়ন প্রকল্প” প্রকল্পের নামে ঠিকাদার ও ইঞ্জিনিয়ারের যোগসাজসে ইচ্ছামাফিক কাজ করে প্রকল্পের টাকা হরিলুটের এই মিশন সম্পর্কে খোঁজখবর নিতে গিয়ে জানা যায়, অবিশ্বাস্য সব দুর্নীতির আধ্যপ্রান্ত। মূলত, ইঞ্জিনিয়ার আর ঠিকাদারের যোগসাজসে কাজ করতে গিয়েই সারাদেশের চলমান নিয়মনীতিকে তোয়াক্কা না করেই নিরীহ শ্রমিকদের বলিদানের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে বলেও অভিযোগ তুলেছেন স্থানীয়রা।

জানা যায়, বর্তমানে তিনটি পার্বত্য জেলাকে বিদ্যুতের আওতায় আনতে গ্রহণ করা হয়েছে ৫৬৫ কোটি ৬৭ লাখ ৭০ হাজার টাকার এই প্রকল্পটি বর্তমানে বাস্তবায়নাধীন। এই প্রকল্পের অধীনে মোট ১৬টি উপকেন্দ্রের মধ্যে ১২টি ৩৩/১১কেভি (রুরাল টাইপ) টি উপকেন্দ্র নতুন নির্মাণ এবং ৪টি ৩৩/১১ কেভি (রেগুলার টাইপ) উপকেন্দ্রের আপগ্রেডেশনের কাজ অন্তর্ভুক্ত রয়েছে বলে জানা যায়।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, ‘তিনটি পার্বত্য জেলায় বিদ্যুৎ বিতরণ ব্যবস্থার উন্নয়ন প্রকল্প’ শীর্ষক প্রকল্পটির কাজ শুরু হয়েছে গত ২০১৭ সালের প্রথম দিকে। তিন বছর মেয়াদে নেয়া প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিলো ২০২০ সালের জানুয়ারিতে। এরই মধ্যে প্রায় চার বছর পার হতে চললেও প্রকল্পের অগ্রগতি কম বলে জানা যায়।

এ সম্পর্কিত আরও খবর