বরিশাল বক্ষব্যাধি হাসপাতাল নিজেই ধুঁকছে

বরিশাল, জাতীয়

সিদ্দিকুর রহমান, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম | 2023-09-01 07:54:51

জরাজীর্ণ পরিবেশ আর জনবল সংকটে প্রায় অচল হয়ে পড়েছে বরিশাল বিভাগের একমাত্র ‘বক্ষব্যাধি’ হাসপাতাল ( টিবি হাসপাতাল)। কর্তৃপক্ষের অযত্ন আর অবহেলায় বর্তমানে  হাসপাতালটিতে  চিকিৎসা সেবা প্রদানের পরিমাণও শূন্যের কোটায়। ফলে প্রতিষ্ঠানটি যেন নিজেই ধুঁকছে কঠিন ব্যাধিতে।

প্রতিনিয়ত স্থানীয় মাদকসেবীদের উৎপাতে অনেকটা ভীতিসন্ত্রস্থ থাকেন এখানকার দায়িত্বরত কর্মচারীরা। সন্ধ্যা হলেই এই হাসপাতালটি ঘিরে মাদকসেবীদের আনাগোনা বৃদ্ধি পায় বলে অভিযোগ করেছেন তারা।

সরেজমিনে দেখা যায়, ষাটের দশকের শুরুতে নগরীর আমানতগঞ্জ এলাকায়  ১১ একর জমির উপর নির্মিত হয় এই বক্ষব্যাধি হাসপাতাল। মাঠ, দীঘি আর গাছপালায় ভরা হাসপাতাল কমপ্লেক্সটি। পাশাপাশি রয়েছে বক্ষব্যাধি ক্লিনিকও।

তবে আউটডোর ক্লিনিকটির অবস্থা কিছুটা ভালো হলেও হাসপাতালটির অবস্থা খুবই নাজুক। দীর্ঘদিন সংস্কার না করার কারণে বর্তমানে হাসপাতালের একতালা ভবনটি স্যাঁতস্যাতে অবস্থায় পড়ে রয়েছে। বৃষ্টির দিনে ছাদ থেকে পানি পড়ে। খসে পড়ছে পলেস্তারা ও চুনকাম।

ভবনটির বাহিরে নিরাপত্তা দেয়ালের অনেকাংশ ভেঙে পড়ে রয়েছে। এছাড়া পর্যাপ্ত পরিচ্ছন্নতাকর্মী না থাকায় প্রায় জায়গায় ময়লার স্তূপ জমেছে। আর আলোক স্বল্পতায় হাসপাতালটির ভেতরে এক প্রকার ভুতুড়ে অবস্থা বিরাজ করছে।

অপরদিকে হাসপাতালটিতে কাগজ-পত্রে ছয় জন মহিলা ও এক জন পুরুষ রোগী ভর্তির তথ্য থাকলেও বাস্তবে এক নারী ও এক পুরুষ রোগীর দেখা মিলেছে। আর বাকি শয্যাগুলো খালি পড়ে আছে। হাসপাতালটির জরাজীর্ণ অবস্থার কারণে এখানে চিকিৎসা নেওয়া থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন রোগীরা।

বর্তমানে ভর্তি রোগী বজলু খন্দকার (৬৫) বার্তা২৪.কমকে জানান, দীর্ঘ ২২ দিন ধরে তিনি এই হাসপাতালে আছেন। বিশাল কক্ষে তিনি একা। টয়লেটের দরজা ভাঙা। ওয়ার্ডে জানালার গ্লাস না থাকায় ভেতরে বাতাস আসছে। এছাড়াও হাসপাতালে ল্যাব না থাকায় বাইরে থেকে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করাতে হচ্ছে।

হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, ২০ শয্যার এই হাসপাতালে ১৬টির মধ্যে ১২টি পদে কাগজে-কলমে লোক থাকলেও বাস্তবে এর চেয়েও কম রয়েছে । সহকারী নার্স পদে তিন জনের স্থলে একজনও নেই, কুকের দুইটি পদের একটি শূন্য। ঝাড়ুদারের দুইটি পদের মধ্যে একজন ডেপুটেশনে সিভিল সার্জন অফিসে আর অন্য জন সদর হাসপাতালে কর্মরত। সব মিলিয়ে অনুমোদিত ১৬টি পদের ৬টিই শূন্য রয়েছে।

অপরদিকে বক্ষব্যাধি ক্লিনিকে ১৭টি পদের বিপরীতে ১১ জন কর্মরত। গুরুত্বপূর্ণ জুনিয়র কনসালট্যান্ট (টিবি অ্যান্ড লেপ্রোসি) ও সহকারী নার্সের দুইটি পদ শূন্য রয়েছে। নার্সবিহীন ক্লিনিকে মাত্র একজন মেডিকেল অফিসার দিয়ে চিকিৎসা সেবা চলছে। আর অ্যাম্বুলেন্স না থাকায় চালকের পদটিও শূন্য।

হাসপাতালের অফিস সহকারী মিসকাত জাহান বার্তা২৪.কমকে জানান, মাদকসেবী-বখাটেদের উৎপাতে নারীদের রাতে হাসপাতাল কম্পাউন্ডে থাকাটাই দায়। এ জন্য কয়েকদিন আগে কাউনিয়া থানায় একটি সাধারন ডায়েরিও করেছেন। উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি জানানো হলেও কার্যকরি পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে না।

বরিশালের সিভিল সার্জন ডা. মনোয়ার হোসেন বার্তা২৪.কমকে বলেন, ‘সীমিত জনবল দিয়েও হাসপাতাল ও ক্লিনিক মিলে ইনডোর ও আউটডোর সেবা চালু রয়েছে। কিন্তু এখানে জুনিয়র কনসালট্যান্ট নেই। ফলে চিকিৎসা সেবা কিছুটা ব্যাহত হচ্ছে। আর পদ না থাকায় গার্ড দেওয়া সম্ভব নয় বলে, রাতে নিজস্ব ব্যবস্থায় হাসপাতাল ও ক্লিনিকে লোক রাখা হয়।’

তিনি আরো বলেন, ‘মাদকেসেবীদের দৌরাত্ব্য রোধে স্থানীয় থানা পুলিশকেও অবহিত করা হয়েছে। তবে হাসপাতাল এলাকাটি ঘনবসতিপূর্ন না হওয়ায় এটা রোধ করা  যাচ্ছেনা।’

এদিকে অবকাঠামো সংস্কারের বিষয়ে সিভিল সার্জন বলেন, ‘হাসপাতালটি সংস্কারের জন্য ইতোমধ্যে স্বাস্থ্য প্রকৌশল বিভাগকে অবহিত করা হয়েছে । চলতি অর্থবছরেই এই হাসপাতালের উন্নয়ন কাজ শুরু করা হবে।’

এ সম্পর্কিত আরও খবর