গণসংগীত শিল্পী ফকির আলমগীরের মৃত্যুতে শোক

, জাতীয়

ডেস্ক রিপোর্ট, বার্তা২৪.কম, ঢাকা | 2023-08-30 03:25:24

কিংবদন্তি গণসংগীত শিল্পী, বীর মুক্তিযোদ্ধা ফকির আলমগীরের মৃত্যুতে গভীর শোক ও দু:খ প্রকাশ করেছে বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষ ও সংগঠন। শনিবার (২৪ জুলাই) সকালে গণমাধ্যমে পাঠানো শোক বার্তায় তারা মরহুমের রুহের মাগফেরাত কামনা ও শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি সমবেদনা জ্ঞাপন করে।

বাংলাদেশ ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি-বাংলাদেশ ন্যাপ চেয়ারম্যান জেবেল রহমান গানি ও মহাসচিব এম. গোলাম মোস্তফা ভুঁইয়া এক শোক বার্তায় জানান, গণমানুষের শিল্পী ফকির আলমগীর বেঁচে থাকবেন গণমানুষের হৃদয়ে শ্রদ্ধার আসন পেতে।

ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ঢাদসিক) মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস এক শোক বার্তায় জানান, ‘বাংলাদেশের ঐতিহাসিক সব আন্দোলনে ফকির আলমগীর তার গানের মাধ্যমে দেশের মানুষকে উজ্জীবিত করেছেন। তিনি ৬৯ এর গণঅভ্যুথানে, ১৯৭১ এর মহান মুক্তিযুদ্ধে স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের একজন শব্দ সৈনিক হিসেবে এবং স্বাধীনতাত্তোর বাংলাদেশে ৯০ এর সামরিক শাসন বিরোধী গণআন্দোলনে তার গান দিয়ে সামিল হয়েছিলেন। তার এই অবদান প্রজন্ম থেকে প্রজন্মান্তরে গভীর শ্রদ্ধায় চির স্মরণীয় হয়ে থাকবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘ফকির আলমগীর দেশজ ও পাশ্চাত্য সঙ্গীতের মেলবন্ধন ঘটিয়ে বাংলা গানে নতুন মাত্রা সংযোজন করেন। তার গান বঞ্চিত, শোষিত ও নিপীড়িত জনগোষ্ঠীকে যেমন মুক্তির আস্বাদনে অনুপ্রেরণা যুগিয়েছে তেমনি তার কণ্ঠে বাঙলা ও বাঙালির নিত্যকার হাসি-কান্না, হর্ষ-বিষাদ ও রাগ-অনুরাগের প্রাণবন্ত প্রকাশ পেয়েছে। তার সৃষ্টিশীল সব গানের মাঝে এবং এদেশে গণসঙ্গীতের বিকাশ ও উন্নয়নের ধারাবাহিকতায় তিনি আমাদের মাঝে চির অম্লান হয়ে থাকবেন।’

স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম এক শোক বার্তায় বলেন, মরহুমের বিদেহী আত্মার মাগফেরাত কামনা করেন এবং তার শোকসন্তপ্ত পরিবারের সদস‍্যদের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান।  

মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম এমপি এক শোক বার্তায় বলেন, ‘ফকির আলমগীর ছিলেন এদেশের কিংবদন্তীতুল্য গণসঙ্গীত শিল্পী। বাংলাদেশের সকল ঐতিহাসিক আন্দোলনে তিনি তার গান দিয়ে মানুষকে উজ্জীবিত করার চেষ্টা করেছেন। ১৯৬৯ সালের গণঅভ্যুত্থান ও ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধে গণসঙ্গীত পরিবেশনের মাধ্যমে তিনি অনবদ্য ভূমিকা রেখেছিলেন। তিনি এদেশের মানুষের হৃদয়ে দীর্ঘকাল বেঁচে থাকবেন।’

সম্মিলিত সামাজিক আন্দোলনের সাধারণ সম্পাদক সালেহ আহমেদ এক শোক বার্তায় বলেন, ফকির আলমগীর ষাটের দশক থেকে গণসংগীতের সঙ্গে যুক্ত। ১৯৬৯-এর গণ-অভ্যুত্থানের বিপ্লবী শিল্পী ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে তিনি স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রেযোগ দেন। বাংলাদেশের সব ঐতিহাসিক আন্দোলনে তিনি তার গান দিয়ে মানুষকে উজ্জীবিত করেছেন।

উল্লেখ্য, গণসংগীত শিল্পী  ফকির আলমগীর ১৯৫০ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি ফরিদপুরের ভাঙ্গা থানার কালামৃধা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা মো. হাচেন উদ্দিন ফকির, মা বেগম হাবিবুন্নেছা। ফকির আলমগীর কালামৃধা গোবিন্দ হাই স্কুল থেকে ১৯৬৬ মাধ্যমিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে জগন্নাথ কলেজে ভর্তি হন।

 

জগন্নাথ কলেজ থেকে স্নাতক ডিগ্রী নিয়ে পরবর্তী পর্যায়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সাংবাদিকতায় এমএ পাস করেন। ১৯৬৬ সালে ছাত্র ইউনিয়ন মেনন গ্রুপের সদস্য হিসেবে ছাত্র রাজনীতিতে প্রবেশ করেন। রাজপথে বিভিন্ন আন্দোলনে তাকে বহুবার দেখা গেছে। মজলুম জননেতা মওলানা ভাসানীর একজন আদর্শিক অনুরাগী ছিলেন তিনি। এরই ধারাবাহিকতায় ক্রান্তি শিল্পী গোষ্ঠী ও গণশিল্পী গোষ্ঠীর সদস্য হিসেবে ষাটের দশকে বিভিন্ন আন্দোলন সংগ্রামের মধ্য দিয়ে সঙ্গীত বলয়ে প্রবেশ করেন। ’৬৯-এর গণঅভ্যুত্থানে এক বিশেষ ভূমিকা পালন করেন। ১৯৭১-এর মুক্তিযুদ্ধে শিল্পী একজন শব্দ সৈনিক হিসেবে স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রে যোগ দেন।

স্বাধীনতার পর পাশ্চাত্য সংগীতের সঙ্গে দেশজ সুরের মেলবন্ধন ঘটিয়ে বাংলা পপ গানের বিকাশে ভূমিকা রাখেন ৭১ বছর বয়সী এ শিল্পী। সংগীতে গুরুত্বপূর্ণ অবদানের জন্য সরকার ১৯৯৯ সালে ফকির আলমগীরকে একুশে পদক দেয়।

দীর্ঘ ক্যারিয়ারে তার কণ্ঠের বেশ কয়েকটি গান দারুণ জনপ্রিয়তা পায়। এর মধ্যে ‘ও সখিনা’ গানটি এখনো মানুষের মুখে মুখে ফেরে। ১৯৮২ সালের বিটিভির আনন্দমেলা অনুষ্ঠানে গানটি প্রচারের পর দর্শকদের মাঝে সাড়া ফেলে। গানটি লিখেছেন আলতাফ আলী হাসু। কণ্ঠ দেওয়ার পাশাপাশি গানটির সুরও করেছেন ফকির আলমগীর।

ফকির আলমগীর সাংস্কৃতিক সংগঠন ঋষিজ শিল্পীগোষ্ঠীর প্রতিষ্ঠাতা, গণসংগীত চর্চার আরেক সংগঠন গণসংগীতশিল্পী পরিষদের সাবেক সভাপতি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ থেকে স্নাতকোত্তর করা ফকির আলমগীর গানের পাশাপাশি নিয়মিত লেখালেখিও করেন। ‘মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি ও বিজয়ের গান’, ‘গণসংগীতের অতীত ও বর্তমান’, ‘আমার কথা’, ‘যারা আছেন হৃদয় পটে’সহ বেশ কয়েকটি বই প্রকাশ হয়েছে তার।

এ সম্পর্কিত আরও খবর