দেশে গত চার মাসে করোনা রোগীদের মধ্যে ডেল্টা ভেরিয়েন্টেই বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন গত এপ্রিল থেকে এ পর্যন্ত যত করোনা রোগীর মৃত্যু হয়েছে তার ৯০ শতাংশেরই বেশি ডেল্টা ভেরিয়েন্টের কারণে। তারা বলছেন, মানুষের মধ্যে অসতর্ক থাকার প্রবণতা বেড়ে যাওয়া, বয়স্ক জনগোষ্ঠীকে টিকার আওতায় আনতে দেরি করা, গ্রামাঞ্চলে পরীক্ষায় অনীহা ও সময়মতো হাসপাতালে না আসায় এসব মৃত্যু দ্রুত বেড়ে যাচ্ছে।
সরকারি হিসাবে গতকাল পর্যন্ত দেশে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু ২০ হাজার ছাড়িয়ে গেছে। এ পর্যন্ত মোট মৃত্যুর মধ্যে প্রথম এক বছরে (চলতি বছরের ১৮ মার্চ পর্যন্ত) মারা গেছে আট হাজার ৬২৪ জন। পরের চার মাস ১০ দিনেই মারা গেছে ১১ হাজার ৩৯২ জন। গতকাল সকাল ৮টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় মারা গেছে ২৩৭ জন। এ সময় নতুন রোগী শনাক্ত হয়েছে রেকর্ড ১৬ হাজার ২৩০ জন।
সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইডিসিআর) প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মুশতাক হোসেন গণমাধ্যমকে বলেছেন, বড় সমস্যাটি হয়েছে দুই ঈদে মানুষের চলাচল ও অসতর্ক থাকার প্রবণতা। বিশেষ করে যারা পজিটিভ হয়ে বাসায় থাকছে তাদের ঠিকমতো মনিটর করা হচ্ছে না। কম উপসর্গধারীরা বাইরে ঘুরে বেড়ায়, যাদের মাধ্যমে সংক্রমণ বিস্তার ঘটছে।
তিনি বলেন, পরীক্ষা না করেও উপসর্গ নিয়ে অনেকেই বাড়িতে থাকছে। জটিল অবস্থায় শেষ সময়ে হাসপাতালে দৌড়ঝাঁপ করছে। এটাও মৃত্যু বেড়ে যাওয়ার অন্যতম কারণ। সরকারের উচিত যত পজিটিভ রোগী হয় প্রত্যেককে মনিটর করা। এর মাধ্যমেই বোঝা যাবে কাকে কখন হাসপাতালে যেতে হবে।
আইইডিসিআরের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. এ এস এম আলমগীর গণমাধ্যমকে বলেছেন, মৃত্যু কমাতে হলে সবার আগে বয়স্ক জনগোষ্ঠীর টিকা নিশ্চিত করতে হবে। যেখানেই বয়স্কদের টিকা আগে নিশ্চিত হয়েছে সেখানেই মৃত্যু কমেছে। এখন দেখা যাচ্ছে, এক পরিবারে একজন আক্রান্ত হলে সবাই আক্রান্ত হচ্ছে। এর কারণ হচ্ছে পারিবারিকভাবে আইসোলেশনের ব্যাপারে মানুষ সতর্ক নয়।
তিনি বলেন, যারাই পজিটিভ হয় সবাইকেই আইসোলেশনের পাশাপাশি চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়া দরকার। এ ছাড়া বয়স্ক ও যাদের আগে থেকে কোনো রকম জটিলতা আছে তাদের পজিটিভ হলেই হাসপাতালে যেতে হবে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, গত এক দিনে দেশে মোট ৫৩ হাজার ৮৭৭টি নমুনা পরীক্ষা হয়েছে। এ পর্যন্ত পরীক্ষা হয়েছে ৭৬ লাখ ১২ হাজার ৫৮৮টি নমুনা। নমুনা পরীক্ষার বিবেচনায় দৈনিক শনাক্তের হার দাঁড়িয়েছে ৩০ দশমিক ১২ শতাংশে, যা আগের দিন ২৮ দশমিক ৪৪ শতাংশ ছিল।
গত এক দিনে শুধু ঢাকা বিভাগেই ৮ হাজার ২৭১ জনের মধ্যে করোনাভাইরাস সংক্রমণ ধরা পড়েছে। যা মোট আক্রান্তের অর্ধেকের বেশি। এরমধ্যে ঢাকা জেলায় শনাক্ত হয়েছে ৬ হাজার ২৬৯ জন। এছাড়া ফরিদপুরে ১৬১ জন, গাজীপুরে ৩০৩ জন, কিশোরগঞ্জে ১২২ জন, মানিকগঞ্জে ১৯২ জন, মুন্সীগঞ্জে ১৩২ জন, নরসিংদীতে ১৮১ জন, নারায়ণগঞ্জে ২০০ জন, রাজবাড়ীতে ১২৪ জন, শরীয়তপুরে ২০২ জন এবং টাঙ্গাইল জেলায় ১৯৫ জনের মধ্যে সংক্রমণ ধরা পড়েছে।