ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী জনাব মোস্তাফা জব্বার বলেছেন, “ফাইভ-জি সংযোগ হচ্ছে চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের ডিজিটাল মহাসড়ক। ফাইভ-জি-এর উপর নির্ভর করেই চতুর্থ শিল্প বিপ্লব গড়ে উঠবে। আমরা প্রযুক্তির এই ডিজিটাল মহাসড়ক তৈরির প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছি। ২০২১ সালের মধ্যেই ফাইভ-জি প্রযুক্তির যাত্রা শুরু হবে বলে আশা করছি। দেশের অর্থনৈতিক অঞ্চলসমূহে বিদেশি বিনোয়োগের অপরিহার্য চাহিদার কথা বিবেচনা করে ইতিমধ্যে প্রাথমিকভাবে ৫টি অর্থনৈতিক অঞ্চলে ফাইভ-জি সংযোগ প্রদানের কাজ শুরু হয়েছে।”
শুক্রবার (৩০ জুলাই) সন্ধ্যায় ওয়ার্ল্ড ইউনিভার্সিটি আয়োজিত চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের জন্য বাংলাদেশকে প্রস্তুত করা: উদ্ভাবন ও গবেষণায় ডিজিটাল রূপান্তর শীর্ষক ওয়েবিনারে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় এসব তথ্য জানান মন্ত্রী।
ওয়ার্ল্ড ইউনিভার্সিটির ভাইস চ্যান্সেলর প্রফেসর ড. আবদুল মান্নান চৌধুরীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এই ওয়েবিনারে বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগের আইন বিষয়ক সম্পাদক ব্যারিস্টার সৈয়দ সায়েদুল হক সুমন বক্তৃতা দেন।
ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী টেকসই উন্নয়ন নিশ্চিত করতে উদ্ভাবনের প্রয়োজনীয়তার ওপর গুরুত্বারোপ করে বলেন, উদ্ভাবনের মাধ্যমে চীন বিশ্বে বড় অর্থনৈতিক শক্তি হিসেবে আবির্ভূত হচ্ছে। আমাদেরকেও আগামী দিনের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় উদ্ভাবনের ওপর বিশেষ গুরুত্ব দেওয়ার বিকল্প নেই।
কম্পিউটারে বাংলা ভাষার উদ্ভাবক জনাব মোস্তাফা জব্বার বলেন, শিক্ষার ডিজিটাল রূপান্তরের মাধ্যমে দেশের শতকরা ৬৫ ভাগ তরুণ জনগোষ্ঠীকে মানব সম্পদ হিসেবে গড়ে তুলতে হবে। এই লক্ষ্যে প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে মানব সম্পদ তৈরির কাজটি শুরু করতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডিজিটাল শিক্ষা শুরু করলে আগামীর দক্ষ মানব সম্পদ তৈরি করা কঠিন কাজ বলে তিনি উল্লেখ করেন। প্রাথমিক ও মাধ্যমিকের ডিজিটাল রূপান্তরের ধারবাহিকতায় উচ্চশিক্ষা স্তরকেও উদ্ভাবন ও গবেষণায় অনেক মনযোগী হতে হবে।
কম্পিউটার প্রযুক্তি বিকাশের অগ্রদূত জনাব মোস্তাফা জব্বার বলেন, চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের ফলে ড্রাইভারহীন গাড়ি কিংবা কর্মীবিহীন কারখানা উন্নত বিশ্বের জন্য আশির্বাদ কারণ তাদের জনসংখ্যার প্রায় ৭০ ভাগ প্রবীণ। চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের প্রযুক্তি তাদের মানব সম্পদের ঘাটতি পূরণ করবে। কাজেই এটি তাদের জন্য আনন্দের, কিন্তু আমাদের জন্য তা মোটেও সুখবর হতে পারে না। আমরা তাদের পথে চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের অংশীদার হতে পারি না। আমাদের পথ তাদের চাইতে আলাদা।
দেশের শতকরা ৬৫ ভাগ তরুণ জনগোষ্ঠীকে দক্ষ মানব সম্পদ হিসেবে তৈরি করে তাদেরকে চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের শক্তি হিসেবে কাজে লাগাতে হবে বলে মন্ত্রী উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, অতীতে তিনটি শিল্প বিপ্লবে বাংলাদেশ শরীক হতে পারেনি। ৭২ সালেও আমাদের শতকরা ৯৮ ভাগ জিডিপি ছিলো কৃষি নির্ভর। জাতির পিতা যুদ্ধের ধ্বংসস্তুপের ওপর দাঁড়িয়েও মাত্র সাড়ে তিন বছরে দেশকে এগিয়ে নিতে যুগান্তকারী বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করেন। তিনি পাকিস্তানীদের ফেলে যাওয়া শিল্প প্রতিষ্ঠানসমূহকে সেক্টর করপোরেশনের মাধ্যমে চালু করে দেশিয় শিল্প প্রতিষ্ঠানের পথচলার সূচনা করেন। টিএন্ডটি বোর্ড প্রতিষ্ঠা, উপগ্রহ ভূ-কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা, আইটিও ও ইউপিইউ এর সদস্যপদ অর্জনের মাধ্যমে ডিজিটাল যোগাযোগ প্রযুক্তির বীজ বপন করেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার গতিশীল ও দূরদৃষ্টি সম্পন্ন প্রজ্ঞাবান নেতৃত্বে ও তার উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়ের পরামর্শে বাংলাদেশ আজ চতুর্থ শিল্প বিপ্লবে নেতৃত্বদানকারি দেশের যোগ্যতা অর্জন করেছে বলে মন্ত্রী উল্লেখ করেন।
অনুষ্ঠানে বক্তারা চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় উদ্ভাবন ক্ষেত্রে অধিক বিনিয়োগের প্রয়োজনীয়তার ওপর গুরুত্বারোপ করেন।