একদিকে কঠোর লকডাউন, অন্যদিকে বন্ধ কর্মস্থল। যে কারণে লকডাউনের সময়ে ঈদ আনন্দ উপভোগ করতে গ্রামের বাড়িতে ঈদ উদযাপন করেন পোশাক কারখানার শ্রমিকরা।
তবে লকডাউন চলাকালে হঠাৎ পোশাক কারখানা খুলে দেয়ার খবরে এবার কর্মস্থলমুখী মানুষের ঢল নেমেছে মানিকগঞ্জের পাটুরিয়া এবং আরিচা ফেরিঘাট এলাকায়।
শনিবার (৩০ জুলাই) সকাল সোয়া ১০টার দিকে পাটুরিয়া ফেরিঘাট এলাকার তিন নম্বর ফেরিঘাট পন্টুনে এমন চিত্র দেখা যায়।
যাত্রীবোঝাই করে পাটুরিয়া ফেরিঘাট এলাকার তিন নম্বর পন্টুনে নোঙর করে বড় ফেরি বীরশ্রেষ্ঠ মতিউর রহমান। ঢাকমুখী যাত্রীর ভিড়ে কানায় কানায় পূর্ণ ছিল পুরো ফেরি।
পদ্মা-যমুনা পারাপারে ভোগান্তি না হলেও ঢাকা-আরিচা মহাসড়কে পড়তে হচ্ছে সীমাহীন ভোগান্তিতে। মহাসড়কে সম্পূর্ণভাবে বন্ধ রয়েছে গণপরিবহন। যে কারণে রিকশা, অটোরিকশা, সিএনজি এবং ট্রাক-পিকআপ এবং প্রাইভেটকারে করে গন্তব্যে ছুটছে এসব কর্মমুখী মানুষ।
বাস চলাচল বন্ধ থাকায় নির্ধারিত ভাড়ার চেয়ে কয়েকগুণ বেশি ভাড়া গুনতে হচ্ছে যাত্রীদের। অতিরিক্ত ভাড়া দিয়ে নিরূপায় হয়ে গন্তব্যে ছুটছে কর্মমুখী মানুষ। ফেরিঘাট এলাকায় নেই আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর তেমন তৎপরতাও। স্বাস্থ্যবিধির কোনো বালাই নেই কর্মমুখী মানুষের মাঝে। গন্তব্যে যাওয়ার লড়াইয়ে ব্যস্ত ফেরিঘাট এলাকায় আগত হাজার হাজার যাত্রী।
ফেরিঘাট এলাকার তিন নম্বর পন্টুনে আলাপ হয় গাজীপুরের একটি পোশাক কারখানার শ্রমিক সাহিদা বেগমের সঙ্গে। তিনি বলেন, সহকর্মীদের কাছ থেকে জানতে পারলাম রোববার থেকে অফিস খোলা। পরে কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলাপ করে এ বিষয়ে নিশ্চিত হয়ে গাজীপুরের উদ্দেশে যাত্রা করেছি। তবে বাস চলাচল বন্ধ থাকায় সীমাহীন ভোগান্তি হচ্ছে।
গাবতলীমুখী যাত্রী আমিন উদ্দিন বলেন, পাটুরিয়া ফেরিঘাট থেকে গাবতলীর ভাড়া ১০০ টাকা। প্রাইভেটকারে সেই ভাড়া নিচ্ছে দেড় হাজার টাকা। চাকরি রক্ষার তাগিদে বাধ্য হয়েই অতিরিক্ত ভাড়া দিয়ে গন্তব্যে যেতে হচ্ছে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
আফরোজা খানম নামের এক পোশাকশ্রমিক বলেন, ৫ তারিখ পর্যন্ত লকডাউন থাকায় গ্রামের বাড়ি ফরিদপুরে ছিলাম। কারখানা খুলে দেয়ায় এখন গাজীপুরের উদ্দেশে রওনা হয়েছি। সড়ক-মহাসড়কে বাস চলাচল বন্ধ থাকায় কখনও রিকশা-ভ্যান, আবার কখনও পায়ে হেঁটে গন্তব্যে যাত্রা বলে মন্তব্য করেন তিনি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক প্রাইভেটকার চালক বলেন, দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ গাড়ির চাকা। পরিবার-পরিজন নিয়ে হতাশা। করোনা সংক্রামণ ঝুঁকি থাকলেও পরিবার-পরিজন নিয়ে বেঁচে থাকার তাগিদে প্রাইভেট কার নিয়ে রাস্তায় নেমেছি।
অতিরিক্ত ভাড়ার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, রাস্তাঘাটে সব কিছু ম্যানেজ করে চলতে হয়। সেখানে খরচ আছে। কাজেই বাধ্য হয়েই বেশি ভাড়া নিতে হচ্ছে।
বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ পরিবহন কর্পোরেশন (বিআেইডব্লিউটিসি) আরিচা ঘাটের ডিজিএম জিল্লুর রহমান বলেন, পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া নৌরুটে ছোট-বড় মিলে আটটি এবং আরিচা-কাজিরহাট নৌরুটে তিনটি ফেরি চলাচল করছে। প্রতিটি ফেরিতে হাজারও যাত্রী পারাপার হচ্ছে।