করোনাভাইরাসের সংক্রমণরোধে দেশব্যাপী চলছে কঠোর লকডাউন। সড়ক-মহাসড়কে বন্ধ রয়েছে গণপরিবহন। এরই মধ্যে পোশাক কারখানা খোলার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। ১ আগস্ট থেকে পোশাক কারখানা খোলার খবরে কর্মমুখী মানুষের চলাফেরা বেড়েছে পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া এবং আরিচা-কাজিরহাট নৌরুটে।
পর্যাপ্ত ফেরি সচল থাকায় যাত্রী পারাপারে কোনো ভোগান্তি নেই মানিকগঞ্জের শিবালয় উপজেলার দুটি নৌরুটে। তবে গণপরিবহন বন্ধ থাকায় কর্মমুখী মানুষদের বিপাকে পড়তে হয়েছে সড়ক-মহাসড়ক এলাকায়।
ইঞ্জিনচালিত রিকশা, ভ্যান, সিএনজি, পিকআপ, ট্রাক, প্রাইভেট কার এবং মোটরসাইকেল করে গন্তব্যে ছুটছে এসব কর্মমুখী মানুষেরা। গন্তব্যে পৌঁছাতে গুনতে হচ্ছে নির্ধারিত ভাড়ার চেয়ে অতিরিক্ত কয়েকগুন অর্থ। মধ্যবিত্ত শ্রেণির মানুষেরা প্রাইভেটকার এবং মোটরসাইকেল করে গন্তব্যে গেলেও নিন্মবিত্তের জন্য একমাত্র মাধ্যম হয়ে দাঁড়িয়েছে ট্রাক এবং মালবাহী পিকআপ।
শনিবার (৩১ জুলাই) সকাল থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত পাটুরিয়া ফেরিঘাট এবং ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক ঘুরে এমন চিত্র দেখা যায়। করোনা সংক্রমণ থেকে রেহাই পেতে কোনো সামাজিক দূরত্ব বা স্বাস্থ্যবিধি উপেক্ষা করে ফেরি এবং ট্রাকে গাদাগাদি করে গন্তব্যে ছুটছে এসব কর্মমুখী মানুষেরা।
পাটুরিয়া ফেরিঘাট এলাকায় আলাপ হলে সাভারমুখী যাত্রী জেসমিন সুলতানা বলেন, সাভারের একটি পোশাক কারখানায় তিন বছর ধরে চাকুরি করেন তিনি। দুই কন্যা সন্তান রেখে স্বামী বিয়ে করেছে অন্যত্র। সংসারে বাবাও নেই। মা এবং মেয়েদের নিয়ে ঈদের ছুটিতে গ্রামের বাড়ি ছিলেন তারা। কারখানা খোলার সংবাদ পেয়ে সাভারের ভাড়া বাসার উদ্দেশ্যে রওয়ানা হয়েছেন তিনি।
গণপরিবহন বন্ধ থাকায় মাগুরা থেকে পাটুরিয়া ফেরিঘাট পর্যন্ত আসতে গুনতে হয়েছে হাজার টাকা। এবার ট্রাকে করে সাভার যাওয়া ছাড়া কোনো বিকল্প নেই। তবে ট্রাকে উঠতেও বেশ ধাক্কাধাক্কি। প্রস্তুতি নেওয়ার আগেই যাত্রীতে ভরপুর হয়ে যায় পুরো ট্রাক। তাই একটু বেশি ভাড়া দিয়ে পিকআপে করে গন্তব্যে রওয়ানা হয়েছেন তিনি।
গাজীপুরের একটি পোশাক কারখানা শ্রমিক আমজাদ আলী বলেন, গরিবের কোনো শান্তি নেই। অবস্থা অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে হয়। ট্রাকে করে গন্তব্যে যাওয়ার সুযোগ পাওয়াটাও ভাগ্য বলে মন্তব্য করেন তিনি।
সাথী আক্তার নামে নারায়ণগঞ্জমুখী এক যাত্রী বলেন, পাটুরিয়া থেকে গাবতলী পর্যন্ত বাস ভাড়া ১০০ টাকা। প্রাইভেটকার চালকরা সেখানে দেড় হাজার টাকা ভাড়া নিচ্ছে। কাজেই ট্রাকে করে গাবতলী যাওয়া ছাড়া বিকল্প কোন উপায় নেই। তাই নিরুপায় হয়ে ট্রাকে করে যাত্রা করেছেন বলে মন্তব্য করেন তিনি।
যাত্রীদের ভাড়ার বিষয়ে জানতে চাইলে মানিক মিয়া নামে এক পিকআপ চালক বলেন, পাটুরিয়া থেকে গাবতলী পর্যন্ত ট্রাকে ৪০০ এবং পিকআপে ৫০০ টাকা নেওয়া হচ্ছে। যাত্রীর চাপ থাকায় ইনকাম ভালো বলে জানান তিনি।
এসব পরিস্থিতি সম্পর্কে জানতে চাইলে মানিকগঞ্জ জেলা ট্রাফিক পুলিশের ইন্সপেক্টর জাসেল হোসেন বলেন, ঢাকামুখী মানুষের জনস্রোত রয়েছে মহাসড়ক এলাকায়। যে যেভাবে পারছে গন্তব্যে ছুটছে। মানবিক কারণে ট্রাকে যাত্রী নেওয়ার পরও কোন মামলা দেওয়া হচ্ছে না বলে জানান তিনি।
বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ পরিবহন কর্পোরেশন (বিআইডব্লিউটিসি) আরিচা ঘাটেরডিজিএম জিল্লুর রহমান বলেন, পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া নৌরুটে ১২টি এবং আরিচা-কাজিরহাট নৌরুটে তিনটি ফেরি চলাচল করছে। প্রতিটি ফেরিতেই প্রচুর পরিমানে ঢাকামুখী যাত্রী রয়েছে। ভোর থেকে এই চাপ শুরু হয়েছে। তবে নৌরুটে পর্যাপ্ত ফেরি থাকায় যাত্রী পারাপারে কোন ভোগান্তি নেই বলে মন্তব্য করেন তিনি।