সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় এখন ধানের গুদাম!

, জাতীয়

কল্লোল রায়, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, কুড়িগ্রাম | 2023-08-30 23:56:47

করোনা মহামারির কারণে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে। এই সুযোগে কুড়িগ্রামের উলিপুর উপজেলার সাতদরগাহ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের কয়েকটি শ্রেণিকক্ষ দখল করে গুদাম হিসেবে ব্যবহার করছেন ধান ব্যবসায়ীরা। এমনকি শ্রেণিকক্ষের ভেতর ধান মাপা বাটখারা বসিয়ে রীতিমতো ব্যবসা প্রতিষ্ঠান খুলে বসেছেন তারা।

বুধবার (৪ আগস্ট) সরেজমিন উপজেলার থেতরাই ইউনিয়নে অবস্থিত সাতদরগাহ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা যায়, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটির তিনটি শ্রেণিকক্ষে শিশুদের বসার বেঞ্চ গুটিয়ে রেখে সেখানে ধান মজুত রাখা হয়েছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, করোনাকালীন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকার সুযোগে বিদ্যালয়টির ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি নজরুল ইসলামের ভাগ্নে কামরুজ্জামান নিজের ব্যবসার ধান সংরক্ষণে শ্রেণিকক্ষ ব্যবহার করছেন।

সাতদরগাহ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শ্রেণিকক্ষ দখল করে রাখা ধান

 

তবে প্রধান শিক্ষক মিজানুর রহমানের দাবি, এসব ব্যাপারে তার কিছু জানা ছিলো না। আজ (৫ আগস্ট) সকালে তিনি বলেন, ‘শারীরিক অসুস্থতার কারণে আমি কিছুদিন বিদ্যালয়ে যেতে পারিনি। এ কারণে ধান সংরক্ষণের বিষয়টি আমার জানা ছিলো না। পরে জানতে পেরে আমি নিজে উপস্থিত থেকে বুধবার রাতেই ধান সরানোর ব্যবস্থা নিয়েছি।’

বিদ্যালয়ের শ্রেণিকক্ষ ধান ব্যবসায়ী ব্যবহার করতে পারেন কিনা, এমন প্রশ্নের জবাবে প্রধান শিক্ষকের উত্তর, ‘আমি জানতে পেরেছি কামরুজ্জানের বাড়ির ধানে পোকার আক্রমণ হওয়ায় তারা সেগুলো শুকানোর জন্য বিদ্যালয় মাঠ ব্যবহার করছিলেন। এর মধ্যে বৃষ্টি শুরু হলে তারা শ্রেণিকক্ষে ধানগুলো রেখেছিলেন।’

তবে প্রধান শিক্ষকের এমন বক্তব্যের সত্যতা মেলেনি। স্থানীয়রা বলছেন, কয়েক সপ্তাহ ধরে বিদ্যালয়ের শ্রেণিকক্ষে ধান মজুদ রেখে তা বিক্রি করে আসছেন ব্যবসায়ী কামরুজ্জামান। এমনকি শ্রেণিকক্ষের ভেতর ধান মাপার পাল্লা স্থাপন করেছেন তিনি।

সাতদরগাহ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শ্রেণিকক্ষ দখল করে রাখা ধান

 

স্থানীয় সংবাদকর্মী সুভাষ চন্দ্র জানান, বুধবার তিনি নিজে বিদ্যালয়ে গিয়ে তিনটি শ্রেণিকক্ষে ধান মজুদ রাখতে দেখেছেন। কক্ষের ভেতর ধান মাপার পাল্লাও দেখেছেন। পরে প্রধান শিক্ষকের সঙ্গে মোবাইল ফোনে কথা হলে সাংবাদিক পরিচয় পেয়ে তিনি দ্রুত ধান সরাতে বলেন ওই ব্যবসায়ীকে।

জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. শহীদুল ইসলামের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘করোনাকালীন বিদ্যালয় বন্ধ থাকলেও সরকারি নির্দেশ অনুযায়ী, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলার জন্য সার্বক্ষণিক প্রস্তুতি রাখতে বলা হয়েছে। এরপরও বিদ্যালয়ের শ্রেণিকক্ষে ধান মজুদ রাখতে দেওয়া প্রধান শিক্ষকের দায়িত্বে অবহেলার শামিল। আমি সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তা (এটিইও) ও প্রধান শিক্ষকের সঙ্গে এখনই কথা বলছি। এ ব্যাপারে জানতে প্রধান শিক্ষককে তলব করা হবে।’

এ সম্পর্কিত আরও খবর