চিত্রনায়িকা পরীমনিকাণ্ড ও আলোচিত প্রযোজক নজরুল ইসলাম রাজের ঘটনায় এবার বেরিয়ে আসছে চাঞ্চল্যকর তথ্য। জানা গেছে, রাজের রংমহল কিংবা যৌন বিছানায় সুন্দরী মডেল, এয়ার হোস্টেস ও অভিনেত্রী সরবরাহ করতেন নীলা আক্তার রুমা ওরফে রামিসা নামের এক মডেল। কেননা এই তরুণীর ইচ্ছে ছিল সে নায়িকা হবে। নজরুল রাজ তাকে নায়িকা বানাতে চেয়েছিলেন।
গোয়েন্দা সূত্র জানিয়েছে, প্রযোজক রাজও টোপ দিয়ে উঠতি বয়সি এই তরুণীকে দিয়ে আড়ালে রমরমা যৌন ব্যবসা করতেন। বিনিময়ে অল্প সময়ে তার কোটি কোটি টাকা বনে যায়। ওদিকে, সরল বিশ্বাসে রামিসা নায়িকা হবার স্বপ্নে অপর শুভা, রুবাইয়া, মানসি, পার্শা, মৌরি ও আঁচল, মৃদুলা ও অহনাদের মতো একাধিক নারীদের বিভিন্ন প্রলোভনে আভিজাত ক্লাব ঘুরিয়ে তুলে দিতেন রাজের ‘রাজ মাল্টিমিডিয়া’র অফিসেই। যেখানে র্যাবের অভিযানে মিলে মাদক এবং পর্নোগ্রাফি তৈরির সরঞ্জাম।
এমনকি দেশীয় শোবিজের ডজনখানেক মডেল-অভিনেত্রী এয়ার হোস্টেস এই নিষিদ্ধ ব্যবসার সঙ্গে জড়িত থাকার খবর মিলেছে। এমন দেশি-বিদেশি অর্ধশত মডেল-অভিনেত্রীর নাম এসেছে র্যাবের হাতে। সেই তালিকায় নাম রয়েছে সমালোচিত রামিসা ও চিত্রনায়িকা শিরিন শিলাও। তালিকায় ছয়জন বিমানবালার নাম এসেছে। যাদের মধ্যে নীলিমা, রুবাইয়া, হুমায়রা, নাদিরা উল্লেখযোগ্য।
র্যাব জানায়, পর্নোচক্রে নাম আছে এমন কথিত মডেলদের সবাই র্যাবের নজরদারিতে আছেন। তারা যে কোনো সময় গ্রেপ্তার হতে পারেন। শুধু নায়িকা বা মডেল নন, বেশ কয়েকজন চিত্রনায়কও মাদক এবং অবৈধ পর্নোগ্রাফি ব্যবসার সঙ্গে জড়িত।
সূত্র আরও জানায়, রাজধানীর গুলশান, উত্তরাসহ অভিজাত শ্রেণির একাধিক ক্লাবে নির্দিষ্ট অর্থের বিনিময়ে সদস্য হন এই নীলা আক্তার রুমা ওরফে রামিসা। উদ্দেশ্য হলো একটাই বিত্তশালী ব্যক্তিদের সঙ্গে সখ্যতা গড়ে তোলা। এটা ছিলো রাজের চক্রে রামিসার গোপন মিশন। এক পর্যায়ে তাদের সঙ্গে খুব ভালো সম্পর্ক তৈরি হলে রাজের হাত ঘুরিয়ে এসব মডেল, শিক্ষার্থী, অভিনেত্রীসহ বিভিন্ন নারী সরবরাহ করতেন যৌন বিছানায়।
গোয়েন্দারা জানান, নীলা আক্তার রুমা নিজেও মাদকাসক্ত। সে বর্তমানে সিলেট অঞ্চলে আছেন। ঢাকায় তার বাসা ও সম্ভাব্য ঠিকানায় খোঁজ নেয়ার পর সিলেটে অবস্থানের বিষয়টি জানা যায়। নীলা একজন পেশাদার মডেল এবং সুন্দরী সরবরাহকারী। আলপনা নামের একটি ফ্যাশনবিষয়ক ম্যাগাজিনের মাধ্যমে সে তরুণী সংগ্রহের নতুন ফাঁদ তৈরি করছে বলেও খবর রয়েছে গোয়েন্দাদের কাছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের এক উপ-পুলিশ কমশিনার বলেন, রাজকে আরও কে কে সুন্দরী নারী সরবরাহ করতো এবং তাদের পেছনে আর কে কে আছে সেসব বিষয়ে খতিয়ে দেখা হবে।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে র্যাবের গোয়েন্দা শাখার পরিচালক লে. কর্নেল খায়রুল ইসলাম জানান, পরীমনি ছাড়াও বেশ কয়েকজন মডেল-অভিনেত্রীর বিরুদ্ধে নিষিদ্ধ পর্নোগ্রাফির অভিযোগ পাওয়া গেছে। হয়তো খুব কম সময়ের মধ্যে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হতে পারে।
প্রসঙ্গত, গত বুধবার রাত সাড়ে আটটার দিকে প্রযোজক ও অভিনেতা নজরুল ইসলাম রাজের বাসায় অভিযান শুরু করে র্যাব। পরীমনিকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের ভিত্তিতে পাওয়া তথ্যে র্যাব ওই অভিযানে যায় বলে জানায়।
প্রায় দুই ঘণ্টার অভিযান শেষে তাকে বনানীর বাসা থেকে আটক করে রাত ১০টা ১৫ মিনিটের দিকে নিয়ে যান র্যাব সদস্যরা। রাজের বাসা থেকেও মাদক এবং পর্নোগ্রাফি তৈরির সরঞ্জাম উদ্ধারের কথা জানায় র্যাব।
প্রযোজক নজরুল ইসলাম রাজ ও তার সহযোগী সবুজ মিয়াকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য চার দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। রাজধানীর বনানী থানায় দায়ের করা মাদক মামলায় তাদের এ রিমান্ড মঞ্জুর হয়।