পরীমণির পাশে তসলিমা নাসরিন!

, জাতীয়

সোহেল মিয়া, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, রাজবাড়ী | 2023-09-01 10:31:15

বাংলা চলচ্চিত্রের অভিনেত্রী পরীমণিকে নিয়ে এখন সরগরম সারাদেশে। বাড়িতে মাদক পাওয়া যাওয়ায় গত বুধবার (০৪ আগস্ট) তাকে গ্রেফতার করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার চারদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন বিজ্ঞ আদালত। পরীমণির জীবনযাত্রা ও স্বভাব-চরিত্র নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে সর্বমহল। এরই মধ্যে গর্জে উঠেছেন নির্বাসিত লেখিকা তসলিমা নাসরিন। পরীমণির পাশে দাঁড়িয়ে তিনি একের পর এক তার পক্ষে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রতিবাদের ঝড় তুলছেন।

পরীমণি গ্রেফতার হওয়ার পর এবার তার গ্রেফতার করা নিয়ে নানা প্রশ্ন তুলেছেন তিনি। এ বিষয়ে তসলিমা নাসরিন তার ব্যক্তিগত ফেসবুক পেইজে বৃহস্পতিবার (৫ আগস্ট) রাতে একটি কড়া স্ট্যাটাস দিয়েছেন। তাতে তিনি বলেছেন- মদ খাওয়া, মদ রাখা, ঘরে মিনিবার থাকা কোনওটিই অপরাধ নয়। বাড়িতে বন্ধু বান্ধব আসা, এক সঙ্গে মদ্যপান করা অপরাধ নয়। বাড়িতে ডিজে পার্টি করা অপরাধ নয়। কারও সাহায্য নিয়ে সিনেমায় নামা অপরাধ নয়। কারো সাহায্যে মডেলিং এ চান্স পাওয়া অপরাধ নয়। পরীমণি নাকি একাধিক বিয়ে করেছে, সেটিও কোনও অপরাধ নয়। কোনও উত্তেজক বড়ি যদি সে নিজে খায় অপরাধ নয়। ন্যাংটো হয়ে ছবি তোলাও অপরাধ নয়। লাইসেন্স রিনিউ-এ দেরি হওয়াও তো অপরাধ নয়।

বার্তা২৪.কমের পাঠকদের জন্য তসলিমা নাসরিনের ফেসবুকে দেওয়া সম্পূর্ণ স্ট্যাটাসটি হুবুহু তুলে ধরা হলো-

র‍্যাবের ব্রিফিং দেখলাম পরীমণিকে নিয়ে। আমি শুধু শুনতে চাইছিলাম কত ভয়ংকর অপরাধ করেছে পরীমণি। অপরাধের মধ্যে যা বলা হয়েছে তা হলো-

১. পিরোজপুর থেকে ঢাকায় এসে স্মৃতিমণি ওরফে পরীমণি সিনেমায় রাতারাতি চান্স পেয়ে গেছে।

২. তার বাড়িতে  বিদেশি মদের বোতল পাওয়া গেছে।

৩. তার বাড়িতে একখানা মিনি বার আছে।

৪ পরীমণি মদ্যপান করে, এখন সে মদে আসক্ত।

৫. নজরুল ইসলাম নামের এক প্রযোজক, যে তাকে সাহায্য করেছিল সিনেমায় নামতে, মাঝে মধ্যে পরীমণির বাড়িতে আসে, মদ্যপান করে।

৬. ডিজে পার্টি হতো পরীমণির বাড়িতে।

৭.  আইস সহ মাদকদ্রব্য পাওয়া গেছে (এগুলোর চেহারা অবশ্য দেখানো হয়নি)।

৮. মদ খাওয়ার বা সংগ্রহ করার লাইসেন্স আছে পরীমণির, তবে তার মেয়াদ পার হয়ে গেছে, এখনও রিনিউ করেনি সে।

তারপর আরো কিছু খবর দেখলাম, পরীমণি পর্নো ছবির সঙ্গে যুক্ত ছিল। না এটিরও প্রমাণ কিছু দেখানো হয়নি।

 

মদ খাওয়া, মদ রাখা, ঘরে মিনিবার থাকা কোনওটিই অপরাধ নয়। বাড়িতে বন্ধু বান্ধব আসা, এক সঙ্গে মদ্যপান করা অপরাধ নয়। বাড়িতে ডিজে পার্টি করা অপরাধ নয়। কারও সাহায্য নিয়ে সিনেমায় নামা অপরাধ নয়। কারো সাহায্যে মডেলিং এ চান্স পাওয়া অপরাধ নয়। পরীমণি নাকি একাধিক বিয়ে করেছে, সেটিও কোনও অপরাধ নয়। কোনও উত্তেজক বড়ি যদি সে নিজে খায় অপরাধ নয়। ন্যাংটো হয়ে ছবি তোলাও অপরাধ নয়। লাইসেন্স রিনিউ-এ দেরি হওয়াও তো  অপরাধ নয়।

অপরাধ তবে কোথায়? যে অপরাধের জন্য দামি গ্লেনফিডিশ হুইস্কিগুলো বাজেয়াপ্ত করা হলো, মেয়েটাকে গ্রেফতার করা হলো, রিমাণ্ডে নেওয়া হলো!

যে কটা মদ ভর্তি বোতল দেখা গেল পরীমণির বাড়িতে, মদের লাইসেন্সধারী লোকের বেসমেন্টের সেলারে এর চেয়ে অনেক বেশি থাকে। একটা দুটো পার্টিতেই সব সাবাড় হয়ে যায়। পরীমণি আবার মদ শেষ হয়ে গেলে খালি বোতল জমিয়ে রাখে। বোতলগুলো দেখতে ভালো বলেই হয়তো। কী জানি, এও আবার অপরাধের তালিকার মধ্যে পড়ে কিনা।

সত্যিকার অপরাধ খুঁজছি। কাউকে কি জোর করে মাদক গিলিয়েছে, মদ গিলিয়েছে, কারও সঙ্গে প্রতারণা করেছে মেয়েটি? ধাপ্পা দিয়ে ব্যাংকের হাজার কোটি টাকা পকেটে ভরেছে? কাউকে  খুন করেছে?  অনেকে বলছিল খুব গরিব ঘর থেকে উঠে এসে ধনী হয়েছে পরীমণি। গরিব থেকে ধনী হওয়া পুরুষগুলোকে মানুষ সাধারণত খুব প্রশংসা করে, কিন্তু মেয়ে যদি গরিব থেকে ধনী হয়, তাহলেই চোখ কপালে ওঠে মানুষের। কী করে হলো, নিশ্চয়ই শুয়েছে। যদি শুয়েই থাকে, তাহলে কি জোর করে কারো ইচ্ছের বিরুদ্ধে শুয়েছে? ধর্ষণ করেছে কাউকে? পুরুষেরা যেমন দিন রাত ধর্ষণ করে মেয়েদের, সেরকম কোনও ধর্ষণ?

অপরাধ খুঁজছি।

নাকি মেয়ে হওয়াটাই সবচেয়ে বড় অপরাধ?

নির্বাসিত তসলিমা নাসরিন একজন নারীবাদী। তিনি পুরুষবিদ্বেষও বটে। পরীমণিকে কেন্দ্র করে তিনি একের পর এক স্ট্যাটাস দিয়ে যাচ্ছেন সামাজিক মাধ্যমে। অপর আরেকটি স্ট্যাটাসে তিনি লিখেছেন- (হুবুহু তুলে ধরা হলো)

বাংলাদেশের সুশীল সমাজ প্রায়ই এক একটি মেয়ের বিরুদ্ধে উন্মাদ হয়ে ওঠে। মেয়েগুলো সাধারণত ধনী এবং দুর্নীতিবাজ ব্যবসায়ীদের শিকার। চতুর ব্যবসায়ীরা এই মেয়েদের ব্যবহার করে তাদের অবৈধ ব্যবসার কাজে, এই মেয়েদের হোটেলের বারে গিয়ে মদ খেতে শেখায়, ক্লাবে গিয়ে নাচতে শেখায়। এই মেয়েদের তারা তাদের হাতের পুতুল বানায়। এদের এক্সপ্লয়েট করাটা তাদের জন্য সহজ।

কারণ মেয়েগুলো নিতান্তই নিরীহ। হয়তো গরিব পরিবারের মেয়ে, শিক্ষাগত যোগ্যতা খুব একটা নেই, হয়তো হন্যে হয়ে চাকরি খুঁজছে, ডিভোর্সি, পায়ের তলায় মাটি চাইছে। শিকারী পুরুষগুলোর পাতা ফাঁদে পড়ে যায় এরা, অথবা পড়তে এদের বাধ্য করা হয়।

সুশীল সমাজ ধনী পুরুষদের বড় সমীহ করে চলে। বদনাম করার জন্য বেছে নেয় ওই নিরীহ মেয়েদের।

এ সম্পর্কিত আরও খবর