সড়ক নিরাপত্তায় নির্দেশনা বাস্তবায়নে অগ্রগতি নেই

ঢাকা, জাতীয়

সা‌ব্বির আহমেদ, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম | 2023-08-28 18:02:54

নিরাপদ সড়কের দাবিতে স্কুল শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের পর ব্যস্ততম বাংলামোটর মোড় থেকে কিছু দূরে বাসস্টপ চিহ্নিত করে সাইনবোর্ড লাগায় পুলিশ। তার পাশেই নির্মাণ করা হয় যাত্রী ছাউনী। কিন্তু একদিনও সেখানে বাস থামতে দেখা যায়নি। এছাড়াও রাজধানীর কুড়িল থেকে মালিবাগ পর্যন্ত প্রগতি স্মরণী সড়কে অনেক জায়গায় বাসস্ট্যান্ড লেখা সাইনবোর্ড কেবল খুঁটিতেই ঝুলছে। সেখানেও একই চিত্র।

মূলত স্কুল শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের পর সড়ক নিরাপত্তায় বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়। কিন্তু সেগুলো বাস্তবায়নে তেমন কোনো অগ্রগতি নেই। যেমন প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে ঢাকা মহানগর পুলিশকে বাসস্টপ চিহ্নিত করে ট্রাফিক ব্যবস্থায় শৃঙ্খলা ফেরানোর নির্দেশনা দেওয়া হয়েছি। পুলিশ প্রথম কিছুদিন ওই নির্দেশনা কঠোরভাবে পালন করেছিল। কিন্তু এখন বাসস্টপে বাস থামাতে পুলিশের পদক্ষেপ দেখা যায় না।

এমন অবস্থার মধ্য দিয়ে আজ (২২ অক্টোবর) দেশে নিরাপদ সড়ক দিবস পালিত হচ্ছে। শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের পর নিরাপদ সড়কের জন্য বিভিন্ন নির্দেশনা দেওয়া হলেও বাস্তবে সড়কের অবস্থা আগের মতোই আছে।

জানা গেছে, গত জুন মাসে দূরপাল্লার রুটে সড়ক দুর্ঘটনা রোধে বাসে দু’জন চালক রাখাসহ প্রধানমন্ত্রী ৬ নির্দেশনা দিয়েছিলেন। কিন্তু সেগুলোর বাস্তবায়ন করা হয়নি।

পরিবহন মালিকদের দাবি, ‘টানা ৫ ঘণ্টার বেশি একজন চালক গাড়ি চালাতে পারবেন না’- এই নির্দেশনা মানতে গেলে সব গাড়িতে দু’জন চালক রাখতে হবে। কারণ দেশে ৫ ঘণ্টার কম কোনো দূরপাল্লার রুট নেই। এক্ষেত্রে ১৫ হাজার দূরপাল্লার গাড়ির বিপরীতে ৩০ হাজার চালক প্রয়োজন। কিন্তু আমাদের আছে মাত্র ৭ হাজার চালক।

এ বিষয়ে বাং‌লা‌দেশ সড়ক প‌রিবহন মা‌লিক স‌মি‌তির মহাস‌চিব ও এনা পরিবহনের মালিক খন্দকার এনা‌য়েত উল্ল্যাহ বার্তা২৪.কম’কে বলেন, ‘দে‌শে মোট বাস-ট্রাক-ট্যাংক-ল‌রি আছে সাড়ে ৩ লাখ। এর মধ্যে শুরু হয়েছে ২ জন চালক রাখার সংকট। কিন্তু অনেকের হেভি লাই‌সেন্সই নেই। তাই দক্ষ ড্রাইভার তৈরিতে বেশ বিপদে আছি। তবে নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় এনা পরিবহনের ৬০০ চালকে আন্তর্জাতিক মানের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে।’

গত সে‌প্টেম্বর মাসে পরিবহন মা‌লিক‌দের এক সভায় খন্দকার এনায়েত উল্ল্যাহ জানিয়েছিলেন, ‘‌প্রয়াত মেয়র আ‌নিসুল হক ও আমি রাজধানীতে ৪ হাজার বাস নামানোর কাজ শুরু করেছিলাম। তিনি মারা যাওয়ায় কাজটি বন্ধ হয়ে যায়। স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের সচিব, অতিরিক্ত সচিবরা বিষয়টি কোনো সভায় তুলতে রাজি ছিলেন না। কিন্তু আবার কাজটি শুরু হয়েছে। আমরা চাই বিষয়টা হোক। মা‌লিকরা এর পক্ষে আছে।’

জানা গেছে, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনার মধ্যে অন্যতম ছিল গাড়ি চলন্ত অবস্থায় সিটবেল্ট বাঁধা। কিন্তু সেটা এখন শুধু কাগজে কলমেই থেকে গেছে। গ্রিণলাইন পরিবহন কোম্পানি দেশে স্ক্যানিয়া, ভলভো ও ম্যান ব্রান্ডের বাস চালায়। তাদের কোনো বাসে সিটবেল্ট নেই। সম্প্রতি যুক্ত হওয়া ডাবলডেকারেও সিটবেল্ট নাই। এছাড়া সোহাগ, লন্ডন এক্সপ্রেস, হানিফ, শ্যামলি ও এনা পরিবহনসহ বিলাসবহুল কোনো বাসে সিটবেল্ট সুবিধা পাওয়া যায়নি।

এ নিয়ে সংশ্লিষ্ট পরিবহন মালিকরা জানিয়েছেন, দেশে কোনো সিট‌বে‌ল্টযুক্ত বাস আসে না। তারা শিল্প মন্ত্রণালয়‌কে সিটবেল্টযুক্ত বাস আমাদানির কথা জানিয়েছেন। তবে বর্তমানে দেশে সিটবেল্ট ছাড়া যেসব বাস আছে এগুলো নিয়ে আলোচনা করা যেতে পারে বলে জানিয়েছেন খন্দকার এনায়েত উল্ল্যাহ।

তিনি জানান, ইতোমধ্যে ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতি সিটি করপোরেশনের কাছে কাউন্টার সা‌র্ভি‌স চালুর লি‌খিত আবেদন করেছে। ওই আবেদনে, কাউন্টারের জায়গা বা কাউন্টার বা‌নি‌য়ে দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। বাস মালিকরা কাউন্টার কিনবেন। কিন্তু তারপরও সিটি করপোরেশন কোনো উদ্যোগ গ্রহণ করেনি।

সরেজমিনে দেখা গেছে, নিরাপদ সড়ক দিবস উপলক্ষ্যে রাজধানীর বিমানবন্দর সড়কে অর্ধশতাধিক ব্যানার-ফেস্টুন টানানো হয়েছে। প্রায় সবগুলো ফুটওভারব্রিজের দু’পাশে সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের লাগানো বিশাল ব্যানারে নিরপদ সড়ক দিবসের নানা স্লোগান শোভা পাচ্ছে। কিন্তু খিঁলক্ষেত ফুটওভারব্রিজ থেকে নামতে গিয়ে বাঁধার সম্মুখীন হচ্ছে পথচারীরা। কারণ সেখানে যত্রতত্র পসরা সাজিয়ে বসেছেন দোকানিরা।

খাঁপাড়ার বাসিন্দা ইউসুফ জামান জানান, ফুটওভারব্রিজের সিড়িগুলো ভেঙ্গে ভেঙ্গে পড়ছে। কিন্তু সেগুলো মেরামত করা হয়না। আর ফুটপাতে তো হাঁটার জায়গা নেই।

জানা গেছে, রাজধানীতে মোট ৭২টি ফুট ওভারব্রিজ আছে। যার বেশির ভাগই ব্যবহৃত হয় না বা দখল হয়ে গেছে। তবে আগস্ট ও সেপ্টেম্বর মাসে ট্রাফিক সপ্তাহ ও ট্রাফিক সচেতনতা মাসে ফুটওভারব্রিজ ব্যবহার বেড়েছিল।

এদিকে, লে মেরিডিয়ানের সামনে রাস্তার মাঝের আইল্যান্ড টপকে রাস্তা পার হতে দেখা গেছে। পথচারীদের কথা চিন্তা করে সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর সেখানে একটি ‍ফুটওভারব্রিজ নির্মাণ করছিল। কিন্তু হোটেলের সৌন্দর্যহানির অভিযোগে কাজ বন্ধ করে দিয়েছে পুলিশ।

রাজধানীতে ৬ কোম্পানির অধীনে বাস পরিচালনা প্রকল্পের সাবেক কনসালট্যান্ট প্রকৌশলী ড. সালেহ উদ্দিন আহমেদ বার্তা২৪.কম’কে বলেন, ‘২৫টি বৈঠক করেও নতুন বাস নামানো সম্ভব হয়নি। মন্ত্রণালয়ে ও সিটি করপোরেশনে গিয়েও খালি হাতে ফিরতে হয়েছে।’

এ সম্পর্কিত আরও খবর