বিশ্ব সম্প্রদায়ের কাছে জলবায়ু প্রশ্নে সুবিচার চায় বাংলাদেশের তরুণরা

, জাতীয়

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, ঢাকা | 2023-08-28 08:55:32

বিশ্ব সম্প্রদায়ের কাছে সবার জন্য এবং সর্বত্র জলবায়ু প্রশ্নে সুবিচারের আহ্বান জানিয়েছেন বাংলাদেশের একদল তরুণ।

তারা বলছেন, আমরা সহানুভূতি, অনুকম্পা বা অনুদানের বদলে চাই ন্যায্যতা, সুবিচার এবং দায়িত্ববোধ। জলবায়ু কার্যক্রম ত্বরান্বিত করা, অভিযোজন কিংবা সহনশীলতা আমাদের জন্য আপাত: অনেকটা কঠিন হলেও, তা অবশ্যই স্বীকার করতে হবে। বাংলাদেশ তার সক্ষমতার চেয়ে বেশি করার চেষ্টা করছে। কারণ, আমরা বিশ্বাস করি, যে কোন দেশে বা সমাজে জলবায়ু সংকট, সবার অস্তিত্বকে সংকটাপন্ন করে। সবার অগ্রযাত্রা ব্যাহত করবে। জলবায়ুর পরিবর্তন সংক্রান্ত আন্তসরকার কমিটি বা আইপিসিসি'র প্রকাশিত মূল্যায়ন প্রতিবেদনের এক প্রতিক্রিয়ায় তরুণ জলবায়ু যোদ্ধারা এসব কথা বলেছেন।

ইন্টার গভর্নমেন্টাল প্যানেল অন ক্লাইমেট চেঞ্জ (আইপিসিসি) ‘সামারি ফর পলিসিমেকার্স’ শীর্ষক ৪২ পৃষ্ঠার রিপোর্টে সোমবার (৯ আগস্ট) এসব নিরপেক্ষ মূল্যায়ন হাজির করেছে। এতে বলা হয়েছে, মানুষের কর্মকাণ্ডের ফলে জলবায়ুর পরিবর্তন হচ্ছে অপ্রত্যাশিত এবং অপরিবর্তনীয় উপায়ে। শিল্পযুগের আগে পৃথিবী পৃষ্ঠের গড় তাপমাত্রা যা ছিল, আগামী দু'হাজার তিরিশ সালের মধ্যে সেই তাপমাত্রা ১.৫ ডিগ্রি বৃদ্ধি পাবে। এই তাপমাত্রা বৃদ্ধির জন্য এর আগে যতটা সময় লাগবে বলে ধারণা করা হয়েছিল, এখন বলা হচ্ছে তার দশ বছর আগেই সেটা ঘটে যাবে। এর ফলে উপকূলীয় অঞ্চলে ঝুঁকিতে পড়বেন কোটি কোটি মানুষ। ২১০০ সালের মধ্যে ভেসে যাবে উপকূল। জাতিসংঘের এই গবেষণা রিপোর্টকে ল্যান্ডমার্ক বা মাইলফলক হিসেবে আখ্যায়িত করা হচ্ছে।

জলবায়ু আন্দোলন ফ্রাইডেস ফর ফিউচার বাংলাদেশ এবং ইয়ুথনেট ফর ক্লাইমেট জাস্টিস যৌথভাবে একটি খোলা চিঠি প্রকাশ করেছে। ইয়ুথনেটের সমন্বয়ক ও ফ্রাইডেস ফর ফিউচার বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য সোহানুর রহমান বলেন, আইপিসিসির প্রতিবেদন মানবজাতির জন্য এক ধরনের রেড এলার্ট। এই চরম সংকট মোকাবিলায় শিশু ও তরুণদের প্রতিক্রিয়া তুল ধরতেই এই খোলা চিঠি প্রকাশ করা হয়েছে।

প্রকাশিত খোলা চিঠিতে বলা হয়েছে, বিজ্ঞান এখন একেবারে সুস্পষ্ট: আন্তরাষ্ট্রীয় জলবায়ু প্যানেলের (আইপিসিসি) ষষ্ঠ মূল্যায়ন মানবতার অস্তিত্বের কথা বলছে। ইউরোপ থেকে আমেরিকা, এশিয়া থেকে আফ্রিকা সর্বত্র জলবায়ু আরও উত্তপ্ত হয়ে উঠছে। দূষিত ও অ্যাসিডযুক্ত হয়ে উঠছে সাগর ও মহাসাগর। সংকটাবস্থার ইঙ্গিত দিচ্ছে বাস্তুসংস্থান। মানুষের কর্মকাণ্ড দ্রুত প্রকৃতিকে ঠেলে দিচ্ছে খাদের দিকে। তাপপ্রবাহ, ভারী বৃষ্টিপাত, খরা বা সাইক্লোন তীব্রতর হচ্ছে, বাড়ছে প্লবণতা। মৌসুমি আবহাওয়ায় ও ঋতু পরিবর্তনে দেখা যাচ্ছে অনিয়ম, অনিশ্চয়তা। নতুন রোগজীবাণু ও পানি-পতঙ্গবাহিত ব্যাধি কৃষিকাজ থেকে শুরু করে জনস্বাস্থ্যকে হুমকিতে ফেলছে। দৃশ্যমান হচ্ছে অপূরণীয় ক্ষতির আভাস।

কিছু সম্পদশালী মানুষ ও সমাজের নির্লিপ্ততা ও উদাসীনতায় দায়ী করে চিঠিতে উল্লেখ করা হয়, কোটি কোটি মানুষের জীবন ও জীবিকা এখন নিশ্চিতপক্ষে সংকটাপন্ন। তারা ভুগছে বিনা দোষে, নিঃশব্দে। কোথাও কোথাও অভিযোজন করার সীমাও অতিক্রম করছে সহনশীলতা। অন্য দেশগুলো কার্বন নিঃসরণ করছে, আর আমরা জীবন দিয়ে এর মূল্য পরিশোধ করছি। দীর্ঘদিন ধরে মানুষের ক্রমবর্ধমান জলবায়ু অনিরাপত্তার বিষয়ে গুরুত্ব দেওয়ার জন্য বাংলাদেশ তাই বিশ্ব গণমাধ্যম এবং বিশ্ব সমাজ-কে তাগিদ দিচ্ছে। সর্বোপরি, বাংলাদেশের মতো বিপদাপন্ন দেশগুলো অস্তিত্বগত হুমকির মুখোমুখি, নীরবেই: আমাদের উপকূল, দ্বীপ, চর, নদী-তীরবর্তী অঞ্চল, জলাভূমিতে মানুষের জীবন-জীবিকা ক্রমান্বয়ে ঝুঁকিপূর্ণ; মাটি ও পানিতে লবণাক্ততা এখন সহনীয় মাত্রার অনেক বাইরে।

এসব সবাই এখন জানি। বিশ্ব সমাজও অবগত। তবুও, আমাদের সবার যা’ করার কথা, তা’ হচ্ছে খুবই স্বল্প আকারে। বা এগুচ্ছে, খুব ধীর গতিতে।

পৃথিবীর প্রকৃতির পরিচর্যা এবং জলবায়ু পরিবর্তন ঠেকানো আমাদের সবার সমন্বিত দায়িত্ব উল্লেখ করে বলা হয়, সম্পদ, সক্ষমতার দিক থেকে যেসব দেশ ও সমাজ সমৃদ্ধশালী, বাংলাদেশের মতো দেশে জলবায়ু পরিবর্তনগত পরিস্থিতি উপেক্ষা করে কারো ভবিষ্যৎ নিশ্চিত হবে না।

বিশ্বের সব রাজনীতিক এবং গণমাধ্যমের দৃষ্টি এখন বিশ্ব জলবায়ু সম্মেলন (কপ ২৬)-এ ধাবিত। এই সম্মেলনকে সামনে রেখে তরুণরা বিশ্ব সম্প্রদায়কে ৫ দফা দাবি তুলে ধরে।

এগুলোর মধ্যে রয়েছে: ফসলের মাঠ থেকে কলকারখানা সর্বত্র কৃষক, শ্রমিক, মৎস্যজীবীদের দুর্দশার কথাগুলো মন দিয়ে শুনুন। সবচেয়ে বিদাপন্ন আমাদের শিশু, নারী ও কিশোরীদের কথাও শুনুন। তাদের দুর্দশা, দুর্ভোগ উপলব্ধি করুন। কার্যকরী উদ্যোগ নিন, এখনই! অন্য আহ্বানের মধ্যে রয়েছে, যে বিলাসবহুল জীবনযাত্রা -অভ্যাস- জীবনধারা-অগ্রাধিকার-ভোগ-পছন্দগুলো প্রকৃতি এবং জলবায়ুকে বিপর্যস্ত, ক্ষতি, দূষিত ও ধ্বংস করে, তা’ পুনর্বিবেচনা বা বর্জন করুন; সব দেশে শিল্পকারখানা ও উদ্যোক্তারা সর্বত্র দায়িত্বশীল, সংবেদনশীল এবং প্রাণ-প্রকৃতির প্রতি যত্নশীল হতে বলুন। আর্থিক মুনাফা অবশ্যই সবার সমৃদ্ধি নিশ্চিত করেই হওয়া প্রয়োজন। সর্বত্র উদ্ভিদ এবং জীববৈচিত্র্যের সর্বোত্তম ব্যবহার করার পাশাপাশি প্রাণ-প্রকৃতিকে অপার ধন হিসেবে সংরক্ষণ করেই টেকসই সমৃদ্ধি অর্জন করুন। দেশের মানুষের প্রয়োজন জীবনরক্ষাকারী প্রযুক্তি-জ্ঞান। সব ধরনের প্রযুক্তি, জ্ঞান, উদ্ভাবন প্রয়োগ ও বিকাশ নিশ্চিত করে আমাদের প্রকৃতি ও জলবায়ু সুরক্ষিত করতেও আহ্বান জানানো হয় চিঠিতে।

এ সম্পর্কিত আরও খবর