স্বামী হত্যার বিচার চান সপ্তমি

, জাতীয়

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, চাঁপাইনবাবগঞ্জ | 2023-08-30 12:12:56

ছোট দুই শিশু সন্তান, মা বাসনা ও স্ত্রী সপ্তমি নিয়ে ছোট একটি সংসার ছিল চাঁপাইনবাবগঞ্জের শ্রী অতুল হালদারের। তিনি জেলার গোমস্তাপুর উপজেলার চৌডালা ইউনিয়নের নতুন পাড়া গ্রামের মৃত নিমাই হালদারের ছেলে। অতুল নাচোল উপজেলার মুন্টু জুয়েলার্সে কারিগরের কাজ করতেন। সব মিলিয়ে সুখেই কাটছিল তাঁর সংসার। কিন্তু হঠাৎ গত ১৫ জুলাই খবর আসে অতুল অসুস্থ। তাৎক্ষণিক স্বজনরা ছুটে গিয়ে দেখেন মাটিতে পড়ে আছেন তিনি নেই শুধু প্রাণটাই। তখন তার শরীরে ছিল বেশ কিছু আঘাতের চিহ্ন। তবে পুলিশ বলছে অতুলের শরীরে কোন আঘাতের চিহ্ন ছিল না।

অতুলের চাচা দিলিপ হালদার জানান, অতুল ৫-৬ মাস থেকে নাচোলের মুন্টু জুয়েলার্সে কাজ করত। সেই সুবাদে ওখানেই থাকতে হত তাকে। সব মিলিয়ে ভালোই চলছিল। কিন্তু হঠাৎ গত ১৫ জুলাই রাত ১১টায় বাড়িতে ফোন করে মুন্টু জুয়েলার্সের মালিক মুন্টু জানান, অতুল হার্ট অ্যাটাক করেছে খুব অসুস্থ। খবর পেয়ে আমিসহ স্বজনরা তাৎক্ষণিক ছুটে যায় তাঁর কাছে। আমাদেরকে জুয়েলার্স মালিক মুন্টু, আপেল, সুবাসসহ ৬-৭ জন নিয়ে যায় যে বাড়িতে অতুল থাকত সেখানে, গিয়ে দেখি অতুল মৃত অবস্থায় পড়ে আছে টিউবওয়েলের পাশে। সারা শরীর ভিজা, মাথা, পিঠ এবং কপালের বিভিন্ন অংশে রয়েছে আঘাতের চিহ্ন। দেখে আমি অবাক হয়ে বলি আমার ভাতিজাকে তো খুন করা হয়েছে। আপনারা কেন বলছেন হার্ট অ্যাটাক করছে। আর সঙ্গে সঙ্গে কল করি ৯৯৯ এ। আমি ৯৯৯-এ কল করেছি এমন কথা শুনে পালিয়ে যায় দোকানের মালিক মুন্টুসহ তার সহযোগীরা শুধু আমদের সঙ্গে থাকে আপেল। পরে পুলিশ এসে লাশ উদ্ধার করে থানায় নিয়ে যায়। আমার ভাতিজাকে হত্যা করা হয়েছে। এই হত্যাকণ্ডের আমরা বিচার চাই।

মৃত অতুলের মা শ্রী বাসনা জানান, বাড়িতে আয়-রোজগার করার কেউ নেই। আমার স্বামী অনেক আগেই মারা গেছে। আয় করার একমাত্র ছিল আমার ছেলে অতুল হালদার সেও নেই। আমরা এক মাস থেকে প্রায় না খেয়ে থাকছি। কি এমন শত্রুতা ছিল আমার অতুলের সঙ্গে যে এভাবে মারা হলো তাকে। এখন দুইটা ছোট বাচ্চা বউ নিয়ে আমি কোথাই যাব। পুলিশের কছে গিয়ে বিচার পাচ্ছিনা। কত আর মানুষের দ্বারে দ্বারে ঘুরবো। আমার ছেলের হত্যাকারীদের সুষ্ঠু তদন্ত করে বিচার করা হোক এই দাবি আমার।

অতুলের স্ত্রী সপ্তমি জানান, ছোট বেলায় মাকে হারিয়েছি। পরে বাবা আবারও বিয়ে করে সংসার করে। সৎ মায়ের সংসারে অভাব অনটনের মধ্যে অনেক কষ্ট করতে হয়েছে আমাকে। আবার অল্প বয়সে স্বামী হারা হলাম। এখন দুই শিশু সন্তান নিয়ে একেবারেই অন্ধকার দেখছি। এখন আমি আমার স্বামী হত্যার বিচার চাই সবার কাছে। আমার স্বামীর কোন অসুখ ছিলনা। তার পরেও সে যদি অসুস্থ হয়ে মারা যাবে তবে, তার শরীরের বিভিন্ন স্থানে কেন আঘাতের চিহ্ন?

এ বিষয়ে অভিযুক্ত মুন্টু জুয়েলার্সের মালিকের সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি ফোনে মন্তব্য করতে রাজি হননি। তবে তিনি নাচোল থানার ওসির সঙ্গে কথা বলতে বলেন।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে নাচোল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সেলিম রেজা জানান, এ ঘটনায় থানায় একটি অপমৃত্যু'র মামলা দায়ের করা হয়েছে ময়নাতদন্তের রিপোর্ট পেলে মৃত্যুর সঠিক কারণ জানা যাবে। তবে মৃতের শরীরে কোন আঘাতের চিহ্ন ছিলনা বলেও জানান তিনি।

এ সম্পর্কিত আরও খবর