৪ হাজার ছাত্রের ভরসা ৪৫ আসনের ছাত্রবাস!

খুলনা, জাতীয়

শরিফুল ইসলাম, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম | 2023-08-30 12:19:01

নড়াইল সরকারি ভিক্টোরিয়া কলেজের চার হাজার ছাত্রের  জন্য বরাদ্দ আছে ৪৫ আসনের একটি জরাজীর্ণ ছাত্রাবাস। কলেজের ভবনসহ অন্যান্য অবকাঠামোর উন্নয়ন হলেও উন্নয়নের ছোঁয়া লাগেনি ছাত্রবাসের কোথাও। সেখানে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে বসবাস করছেন ছাত্ররা।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, মহারাণী ভিক্টোরিয়ার নামে ১৮৮৬ সালে প্রতিষ্ঠিত নড়াইল সরকারি ভিক্টোরিয়া কলেজ দেশের চারটি প্রাচীনতম কলেজের একটি। ১৩২ বছরের পুরাতন কলেজটির নানা সমস্যার মধ্যে বর্তমানে প্রকট আকার ধারন করেছে ছাত্রদের জন্য আবাসন সমস্যা।

প্রায় চার হাজার ছাত্রের জন্য কলেজের রয়েছে ১৫ কক্ষ বিশিষ্ট একটি ছাত্রাবাস। এর মধ্যে একটি বিনোদন আর একটি অফিস কক্ষ হিসেবে ব্যবহৃত হয়। বাকি ১৩টি কক্ষে ৪৫ থেকে ৫০ জন ছাত্র থাকতে পারেন।

অযত্ন আর অবহেলার মধ্যে এখানে ছাত্ররা থাকলেও তা সমাধানে কলেজ প্রশাসনের কোন মাথাব্যাথা নেই। ছাত্রদের নিজ উদ্যোগেই মেসের মতো চলছে একমাত্র ছাত্রাবাসটি। সিটের অভাবে দূর-দূরান্ত থেকে উচ্চ শিক্ষা নিতে আসা শিক্ষার্থীদের কলেজ ক্যাম্পাসের বাইরে থাকতে হয়।

জানা গেছে, ডিগ্রী কলেজ থাকাকালীন ১৯৮৬ সালেও মুসলিম হোস্টেলসহ কয়েকটি ছাত্রাবাস চালু ছিলো। সেই সময়ে নিউ মুসলিম হোস্টেল নামের বর্তমান ছাত্রাবাসটি নির্মিত হয়। ১৯৯৬ সালের পরে মুসলিম হোস্টেলসহ অন্যান্য ছাত্রাবাস বসবাসের অযোগ্য হয়ে গেলেও নতুন কোনো ছাত্রাবাস নির্মিত হয়নি।

১৯৯৭ সালে অনার্স চালু হওয়ার পরে বর্তামানে ১৩টি বিষয়ে অনার্স ও চারটি বিষয়ে মাস্টার্স চালু আছে। কিন্তু ছাত্রাবাসের ব্যবস্থা সেই ১৩২ বছর আগের মতই রয়ে গেছে। ছাত্রাবাসের দেয়ালের রং খসে পড়েছে, পরিচ্ছন্ন কর্মীর অভাবে বাথরুম নোংরা, অপরিষ্কার। সবচেয়ে খারাপ অবস্থা ডাইনিং রুমের। ছোট্ট একটি টিনের চালার কক্ষ, বর্ষায় পানি পড়ে জ্বালানী কাঠ ভিজে গেলে সেদিন আর রান্না হয়না, না খেয়েই কাটাতে হয় শিক্ষার্থীদের।

ছাত্রদের অভিযোগ, নিজের টাকায় আসবাবপত্র কিনে তাদের কোন রকমে এখানে থাকতে হয়। অধিকাংশ ফ্যান ঠিকমতো ঘোরে না, পানির ভালো কোনো ব্যবস্থা নেই। কলেজ প্রশাসনের কোনো ভ্রুক্ষেপই নেই এ অচলাবস্থার প্রতি।

ছাত্রাবাসে থাকা বাংলা শেষ  বর্ষের শিক্ষার্থী তরিকুল ইসলাম বার্তা২৪.কমকে বলেন, ‘কালিয়া থেকে এসে ছাত্রাবাসে থেকে লেখাপড়া করি। ছাত্রবাসে কম খরচে থাকার সুযোগ থাকলেও এখানে থাকার মত কোন পরিবেশ নাই। আর ছাত্রদের আসন সংকট তো আছেই।’

শহরের মহিষখোলা এলাকায় মেসে থাকা শেষ বর্ষের রুবেল মিয়া বার্তা২৪.কমকে বলেন, ‘ছাত্রাবাসে আসন না পওয়ায় বেশি টাকা ব্যয় করে বাইরের মেসে থাকতে হচ্ছে। এ জন্য প্রতিমাসে কমপক্ষে পাঁচ হাজার টাকা বেশি ব্যয় করতে হচ্ছে। এছাড়া নিরাপত্তাহীনতার মধ্যেও থাকতে হয়।’

কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতি মনিরুজ্জামান রোজ ও সাধারণ সম্পাদক রকিবুজ্জামান পলাশ  বার্তা ২৪.কমকে জানান, ছাত্রাবাসের পরিবেশ খুবই খারাপ। এখানে ছাত্রদের থাকার মত কোনো পরিবেশ নেই। ছাত্রাবাস নির্মাণের জন্য দাবি জানালেও কলেজ কর্তৃপক্ষ নীরব ভূমিকা পালন করছে।

ছাত্রাবাসের দায়িত্বপ্রাপ্ত শিক্ষক ড. সায়েম আলী ছাত্রাবাসে থাকার মত অবস্থা নেই জানিয়ে বার্তা২৪.কমকে বলেন, ‘দীর্ঘদিন এ ছাত্রাবাসটি কলেজের নিয়ন্ত্রণে ছিল না, বহিরাগতরাই এখানে থাকত। দায়িত্ব নেওয়ার পর চেষ্টা করছি ছাত্রদের থাকার উপযোগী করার।’

তিনি বলেন, ‘ছাত্রদের আবাসন সমস্যা সমাধানের জন্য নতুন ভবন নির্মাণের জন্য কলেজ কর্তৃপক্ষ আন্তরিকভাবে চেষ্টা চালাচ্ছেন।’

ভিক্টোরিয়া কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর মোঃ রবিউল ইসলাম ছাত্রদের আবাসন সমস্যার কথা স্বীকার করেন। তিনি বার্তা২৪.কমকে বলেন, ‘কিছুদিন হল দায়িত্ব পেয়েছি, নতুন ছাত্রাবাস নির্মাণ করে ছাত্রদের আবাসন সমস্যা সমাধানের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’

এ সম্পর্কিত আরও খবর