বিধিনিষেধ শিথিলের পর রাজধানী ঢাকা ফিরেছে সেই পুরোনো রূপে। ছুটির দিনে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় ছিল মানুষের ঢল। বিভিন্ন সড়কেও ছিল যানবাহনের ভিড়। শপিং মল, বাজার এমনকি অলিগলিতেও ছিল মানুষ আর মানুষ। বেশির ভাগ জায়গাতেই স্বাস্থ্যবিধি মানছেন না কেউ। পরিস্থিতি এমন যেন দেশে করোনা একেবারেই নেই।
রাজধানীর হাতিরঝিলে শুক্রবার বিকেলের পর থেকে ভিড় বাড়তে থাকে। দীর্ঘদিন পর হাতিরঝিলের খোলা হাওয়ায় এসে যেন আগের জীবনে ফিরে গেছে ঢাকাবাসী। পাশাপাশি বসে, হাঁটতে হাঁটতে কিংবা খাবার খেতে খেতে গল্প করতে দেখা যায় বহু মানুষকে। পিতা-মাতা-সন্তান, বন্ধু-বান্ধব, পরিবার-পরিজন কিংবা সহকর্মীকে সঙ্গে নিয়ে একটু সময় কাটাতে এসেছেন তারা। কারো কারো মুখে মাস্ক থাকলেও বেশির ভাগকেই তা ব্যবহার করতে দেখা যায়নি। সামাজিক দূরত্ব মানতেও দেখা যায়নি তাদের।
শুধু হাতিরঝিল নয়, কুড়িল বিশ্বরোড এলাকা, তিনশো ফুট, মিরপুর কালশি, বাউনিয়া বাঁধ এলাকায় যে যেভাবে পারছেন দল বেঁধে বাইরে বের হয়েছেন। এদিকে রাজধানীর গুলিস্তান, মিরপুর, গাবতলীতে ছিল গণপরিবহনের দীর্ঘ সারি। এগুলোতেও মানা হচ্ছে না স্বাস্থ্যবিধি। এমন পরিস্থিতিতে করোনা সংক্রমণ আরও বাড়ার আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা।
শুক্রবার বিকেলে উত্তর ভাষাণটেকের বাগানবাড়ি এলাকায় দেখা যায়, কাজ না থাকলেও অনেকেই রাস্তায় হাটতে বের হয়েছেন। অনেক তরুণ আড্ডা দিচ্ছেন রাস্তার পাশে। কারো মনে করোনা নিয়ে কোনো ভয় নেই। এছাড়া পথচারীদের মধ্যেও কোনো ধরনের সচেতনতা নেই। দেখে মনে হয়, যেন দেশে করোনা পরিস্থিতি একেবারেই ভালো হয়ে গেছে। আর কোনো শঙ্কা নেই।
বাগানবাড়ি এলাকার বাসিন্দা শোয়েব জানান, মাস্ক পরছেন না অনেকেই। রাস্তার মোড়ে মোড়ে আড্ডা বেড়ে গেছে। বিনা কারণেই অনেকেই বাসা থেকে বের হচ্ছেন।
মাটিকাটা এলাকার ডাব বিক্রেতা আব্দুর রহমান জানান, লকডাইনে তেমন বেচাবিকরি ছিল না। অহন মানুষ বাড়ছে, ফলে বিকরিও ভালো হচ্ছে।
দেশে করোনাভাইরাসে মৃত্যু টানা ১৯ দিন পর ২০০-এর নিচে নেমেছে। একই সঙ্গে কমেছে সংক্রমণের হারও। দৈনিক শনাক্ত রোগীর সংখ্যা ১০ হাজারের নিচে নেমেছে পাঁচ দিন পর। গত এক দিনে দেশে ৮ হাজার ৪৬৫ জনের মধ্যে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ধরা পড়েছে। একই সময়ে করোনায় মারা গেছেন ১৯৭ জন। এর আগে গত ২৪ জুলাই ২০০-এর কম মৃত্যু দেখে বাংলাদেশ, একইদিন ১৯৫ জনের মৃত্যুর তথ্য জানিয়েছিল স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। এরপর টানা ১৯ দিন মৃত্যু ছিল ২০০-এর ওপরে।
দেশে করোনা সংক্রমণ নিম্নমুখী হওয়াকে লকডাউনের সুফল হিসেবে দেখছেন বিশেষজ্ঞরা। তারা বলছেন, লকডাউনে দোকানপাট, অফিস-আদালত, গণপরিবহন, জনসমাবেশ ও বিনোদনকেন্দ্র বন্ধ ছিল। যার ফল এখন আমরা পাচ্ছি। অর্থনীতির চাকা সচল রাখতে ও জীবন-জীবিকার সমন্বয়ের জন্য লকডাউন শিথিল করা হয়েছে। তবে ব্যাপকভিত্তিক টিকাদান ও সবাই মাস্ক পরাসহ স্বাস্থ্যবিধি মেনে চললে সংক্রমণ আর বাড়বে না।
করোনা মোকাবিলায় গঠিত জাতীয় টেকনিক্যাল পরামর্শক কমিটির প্রধান অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ সহিদুল্লাহ বলেছেন, নিজের নিরাপত্তা নিজের কাছে। সবার স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে, মাস্ক পরা নিশ্চিত করতে হবে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ব্যক্তিগত চিকিত্সক অধ্যাপক ডা. এ বি এম আবদুল্লাহ বলেছেন, লকডাউনের কারণে দোকানপাট, অফিস-আদালত বন্ধ ছিল। জনসমাবেশ ছিল না। যার কারণে ভালো ফল পাওয়া গেছে। সামনে সবার স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে, মাস্ক পরতেই হবে। তাহলে জীবনও বাঁচবে, জীবিকাও বাঁচবে।
এদিকে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঊর্ধ্বগতির মধ্যেই বিধিনিষেধ তুলে নেওয়ার সিদ্ধান্তে উদ্বেগ জানিয়েছে কোভিড-১৯ সংক্রান্ত জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটি। শুক্রবার রাতে কমিটির সভাপতি অধ্যাপক মোহাম্মদ সহিদুল্লা স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এই তথ্য জানানো হয়।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, করোনাভাইরাসের ঊর্ধ্বমুখী সংক্রমণ রোধে সরকারি নির্দেশনায় গত ২৩ জুলাই থেকে ১০ আগস্টের বিধিনিষেধ কঠোরভাবে পালিত না হলেও জনসমাবেশ হওয়ার মতো বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ স্থান বন্ধ থাকায় সংক্রমণ হার কমার ক্ষেত্রে উন্নতি হয়। তবে সংক্রমণ এবং মৃত্যুর হার কোনোটিই স্বস্তিদায়ক অবস্থায় আসেনি। বিধিনিষেধ শিথিলতার ক্ষেত্রে সরকার কিছুটা তাড়াহুড়ো করছে। এর ফলে সংক্রমণ আবার বৃদ্ধি পাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে, তাতে অর্থনীতি আরও বেশি হুমকির মুখে পড়বে। বিধিনিষেধ আরও ১-২ সপ্তাহ চলমান রাখতে পারলে এর পুরোপুরি সুফল পাওয়া যেত।